রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আমাদের শরীরে শ্বাসকষ্ট দুই ভাবে হয়। এক, আমরা যখন দৌড়াই, অনেকটা পথ হাঁটাহাঁটি করি বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে হয় তখন আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। দুই, আমরা যখন শারীরিক বল প্রয়োগ করছি না, শুয়ে বা বসে আছি তখনও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এই দুটিই আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। তবে শেষের শ্বাসকষ্টটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করার প্রয়োজন আছে।

শ্বাসকষ্টের সম্ভাব্য কারণ

ফুসফুসের সমস্যায় শ্বাসকষ্ট
ফুসফুসের সমস্যা থেকে হাঁপানি হয়। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় অ্যাজমা বলা হয়। ফুসফুসের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে শ্বাসনালিগুলি আছে সেগুলি ক্রমশ সরু হয়ে যায়। এই সরু হয়ে যাবার ফলে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অনেকের ক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এগুলি হল অ্যাজমার লক্ষণ।
এই অ্যাজমা আবার কতকগুলি জিনিস থেকে মারাত্মক জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। যেমন—ঠান্ডা লাগলে হাঁপানি বা অ্যাজমা বেড়ে যায়। ধুলোবালি থেকেও আপনার হাঁপানি বাড়তে পারে।

করণীয় কী
ঠান্ডা না লাগানো। পাশাপাশি যখন আপনি আপনার ঘরের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে ঘর পরিষ্কার করছেন তখন ঘরের চারিদিকে যে ধুলো ওড়ে সেই ধুলোগুলি আপনার শ্বাসনালিতে জমাট বাঁধা। তখন আপনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাই যখন এ ধরনের কাজ করছেন তখন অবশ্যই মাস্ক পরুন। অন্যান্য সময়ে যখন আপনি ঘর থেকে বাইরে যাচ্ছেন তখনও মাস্ক ব্যাবহার করুন। কারণ বাইরের ধুলো, ধোয়া, বাতাসের ক্ষতিকর গ্যাস যেমন—কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড প্রভৃতি থেকেও অ্যাজমার বাড়াবাড়ি হতে পারে।

ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস
ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের উপসর্গ অনেকটা হাঁপানি বা অ্যাজমার মতো। এটি আমাদের দেশে সাধারণত ধূমপান করার ফলে হয়। দীর্ঘদিন ধূমপান করার ফলে নিকোটিন শ্বাসনালিতে জমে যায়। ফলে শ্বাসনালি সরু হয়ে যায়। অ্যাজমা ও ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের পার্থক্যই হল অ্যাজমা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস সাধারণত ঠিক হয় না। ওষুধের সাহায্যে শুধু নিয়ন্ত্রণ করা যায় মাত্র।
ওষুধ বলতে কতকগুলি ইনহেলার আছে যেগুলি পাম্পের মতো টানতে হয়। এখন হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের জন্য ট্যাবলেট দেওয়া হয় না। কারণ তাতে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই এখন দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের ইনহেলার। কারণ ইনহেলার আপনি যখন টানছেন তখন সেটি ফুসফুসে যাচ্ছে এবং কিছুটা সেখানে থেকে যাচ্ছে। বাকিটা শ্বাস ছাড়ার সময় তা বেরিয়ে যাচ্ছে। শতকরা ৫-১০ ভাগ ওষুধ আপনার ফুসফুসে যাচ্ছে সেখানেই সে তার কার্যকারিতা দেখাবে। ফলে এতে সেরকম কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। শুধু মাথায় রাখবেন ইনহেলার আপনি যখনই নেবেন তখন মুখ ভালো করে ধোবেন, গার্গল করবেন।

ফুসফুসে সংক্রমণ
ফুসফুসের সংক্রমণ থেকেও হতে পারে শ্বাসকষ্ট। এর ফলে সাধারণত জ্বর, কাশি হয়। কফ উঠবে হলুদ রঙের। বুকে ব্যথাও হতে পারে। এই জীবাণু সংক্রমণটিকে বলা হয় নিউমোনিয়া। ফুসফুসের বাইরের আবরণে অনেক সময় জল জমে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।

হার্টের সমস্যায় শ্বাসকষ্ট
হার্ট আমাদের সমগ্র শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। কিন্তু হার্ট যদি ঠিকমতো পাম্প না করে তাহলে ফুসফুসে রক্ত পৌঁছাবে না। ফল স্বরূপ শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। হার্টের রোগীদের শ্বাসকষ্ট প্রথমদিকে ততটা বোঝা যায় না। হাঁটা চলা বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার সময় যদি অল্পতেই হাঁপিয়ে পড়েন তাহলে বুঝতে হবে এটি হার্টের সমস্যা থেকে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। বসে থেকে বা শুয়ে থেকে যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তি স্টেজ ফোর-এ আছেন। এই ফোর স্টেজে যাওয়ার আগেই আমাদের কর্তব্য হল, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করা। প্রথমে ইসিজি করে দেখতে হবে।ইসিজি হল হার্টের রোগের প্রারম্ভিক চিকিৎসা। তারপর ইকো কার্ডিওগ্রাফি বা স্ক্যান করে দেখতে হবে যে হার্টের পাম্পিং ঠিকমতো হচ্ছে কি না। সেই অবস্থায় ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।

রক্তাল্পতা থেকেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে
যদি শরীরে রক্ত কমে যায় বা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সাধারণত রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০-১২ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ১২-১৪-র নীচে নেমে গেলে হাঁটা-চলা করার সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত কাশি, জ্বর, বুকে ব্যথা বা কফ ওঠার উপসর্গ দেখা যায় না। তবে হিমোগ্লোবিন ৬-এর নীচে চলে গেলে শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বুকে ব্যথাও হতে পারে। সঙ্গে পা দুটি ফুলে গিয়ে শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

হাইপোথাইরয়েড
হাইপোথাইরয়েড থেকেও অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হয়। এই সমস্যা হলে হার্টের বাইরের আবরণে জল জমতে শুরু করে। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। মাংসপেশি শিথিল হয়ে যাওয়ার ফলেও হতে পারে শ্বাসকষ্ট।

তাই শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে শীঘ্রই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন৷

Skip to content