শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

আমাদের মুখের ভিতরের অংশ যাকে আমরা ওরাল ক্যাভিটি বলে থাকি, তা আপনার বাকি শরীরের অন্যান্য অংশের থেকে কিছুটা আলাদা। মুখকে আমরা যতটা পরিষ্কার ভাবি, বাস্তবে কিন্তু তা নয়। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, একজন ব্যক্তির মুখ ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি সমন্বিত ৭০০টিরও বেশি প্রজাতি দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু বেশ কিছু এমন প্রজাতিও আছে, যা খুবই ক্ষতিকারক।
আপনার মুখ আপনার পরিপাক এবং শ্বাসতন্ত্রের প্রবেশদ্বার। এই প্রজাতিগুলির মধ্যে কিছু এমন কিছু কিছু ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস থাকে যা আপনার বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। মুখের স্বাস্থ্য বিভিন্ন রোগ এবং অবস্থার জন্য অবদান রাখতে পারে, এমন কিছু কিছু রোগ যা সাধারণত আমরা কল্পপনাও করতে পারি না।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের মুখের স্বাস্থ্য খারাপ (যেমন, মাড়ির রোগ বা দাঁতের ক্ষতি) তাঁদের হৃদরোগ বা স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাগুলি ভালো মুখের স্বাস্থ্যের লোকদের তুলনায় অনেক বেশি। পাশাপাশি, দাঁত ভালো না থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হয় না। ‘জার্নাল অফ অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকলজি ইন্ডিয়া’র করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দাঁতের সমস্যা রয়েছে এমন অন্তঃসত্ত্বাদের প্রসব সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগার আশঙ্কাও বেশি। তাই এই সময়ে বেশি করে দাঁতের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৬: গলা সাধলেই লতাকণ্ঠী?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭২: রবীন্দ্রনাথ প্রয়োজনে কঠোর হতেও পারতেন

পশ্চিমের দেশগুলোতে মুখের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও এর বিপরীতে আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা খুবই কম। তাই এখানে আজ আলোচনা করে নেব বেশ কিছু খুবই সাধারণ উপায়, যার সাহায্যে আমরা আমাদের দাঁত, মাড়ি ও মুখের যত্ন নিতে পারি।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৩: সুন্দরবনের গ্রামরক্ষক দেবতা আটেশ্বর

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৪: হাজরা মোড়ে নাম না জানা কচুরিখানা

 

দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কী কী নিয়ম মানতেই হবে?

 

দিনে দু’ বার ব্রাশ অবশ্যই

ব্রাশ আড়াআড়ি না ঘষে, ওপর নিচে করে করুন।
 

সঠিক ব্রাশ কিনুন

শক্ত ব্রাশ মানে ভালো পরিষ্কার হবে এমনটা নয়। নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন। প্রতি তিন মাসে ব্রাশ বদলান।
 

ফ্লস ব্যবহার করুন

ফ্লস করুন। ফ্লস আসলে এক ধরণের সুতোর মতো একটি জিনিস, যা সমস্ত ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। এটি ব্যবহার করুন দাঁতের ফাঁকের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য, যা সাধারণ ব্রাশ দিয়ে যতই চেষ্টা করুন সম্পূর্ণ ভাবে হওয়ার নয়। এ ছাড়া অনেক ধরণের ইন্টারডেন্টাল ব্রাশও পাওয়া যায়, যেগুলো দিয়ে সহজেই দুটো দাঁতের মাঝখানটা আপনি পরিষ্কার করতে পারেন।

আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৫: একটাই ডেনজার জুজু যদি ধরে

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৬: তোমার গানের এই ময়ুরমহলে

 

ভালো করে মুখ ধুতে হবে

যে কোনও খাবার খাবার পরই সঠিকভাবে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
 

চিনিযুক্ত ও আঠালো খাবার

চিনিযুক্ত এবং আঠালো খাবার এড়িয়ে চলুন। এমন খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন, যা আপনার দাঁতে অনেকক্ষণ আটকে থাকে।
 

ঠান্ডা পানীয় নৈব নৈব চ

দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্বনেটেড জাতীয় পানীয়ও এড়িয়ে চলুন।
 

ফলের রস খেলে

যদি আপনি দিনে অনেক ফলের রস খান তাহলে জল মিশিয়ে সেটা পাতলা করে খান । রসে থাকা অ্যাসিডিক উপাদানও আমাদের দাঁতের ক্ষতি করে।
 

নিয়মিত দাঁতের চেকআপ

শরীরের বাকি অংশের মতোই মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যান। যেকোনো সমস্যা আপনার ডেন্টিস্ট আপনার জন্য বিপদজনক হওয়ার আগে শনাক্ত করতে ও প্রতিরোধ করতে পারবেন।

ওপরের উপায়গুলো অধিকাংশই আমাদের সবার হয়তো জানা কিন্তু তাও আলসেমি করে আমরা এগুলো মেনে চলিনা আর নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি অজান্তে করে বসি। মনে রাখবেন একটা গোটা দিনে আমাদের কাছে ১৪৪০ মিনিট থাকে , মুখের যত্ন রাখার জন্য এর মধ্যে ৪-৫ মিনিটই যথেষ্ট।

যোগাযোগ: ৯৪৭৭৩২০১৭২

* ডাঃ সুপ্রতিম মণ্ডল, ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জেন।

Skip to content