রবিবার ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি প্রতীকী

ডেঙ্গিতে প্লেটলেটকাউন্ট কমে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা সাধারণত আতঙ্কিত হয়ে পড়ি এই ভেবে যে, হয়তো রোগীকে প্লেটলেট দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা ঠিক এরকম নয়। তাই এতটা আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই।
 

ডেঙ্গি ঠিক কী?

আসলে ডেঙ্গি হল একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। আমাদের শরীরের যে অস্থিমজ্জা আছে যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলি বোনম্যারো বলে তার কর্মক্ষমতা একটু কমে যায়। তবে এটি স্থায়ী নয় সমস্যা নয়, সাময়িক। এতে কারও কারও রক্তের প্লেটলেট কমে যায়।

 

প্লেটলেট শরীরে কী কাজ করে?

শরীরের কোনও জায়গায় কেটে গেলে যে রক্ত জমাট বেঁধে যায় সেই কাজটা করে প্রথমে যে করে তা হল প্লেটলেট। তাই প্লেটলেট যদি ঠিক না থাকে তবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না। আমাদের শরীরে সাধারণত প্রতি সিসি-তে দেড় লক্ষ থেকে চার লক্ষ পর্যন্ত প্লেটলেট থাকে। ডেঙ্গিতে জ্বর পাঁচ থেকে সাতদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তার সঙ্গে প্রচণ্ড গা-হাত-পা ব্যথা হতে পারে। এমনকি গাঁটে গাঁটেও ব্যথা হয়ে থাকে। জেনে রাখা ভালো জ্বর যখন ধীরে ধীরে কমতে থাকে তখনই প্লেটলেট কমতে শুরু করে। সাধারণত জ্বর শুরু হওয়ার চার দিনের মাথায় প্লেটলেট কমতে থাকে। সাধারণত ১০ থেকে ১১ দিন পর্যন্ত এর মাত্রা কমতে পারে। তাই ডেঙ্গি হলে প্রতিদিন একবার করে প্লেটলেট কাউন্ট করতেই হবে।

 

প্লেটলেট কাউন্ট কোন পদ্ধতিতে?

এখানে একটা কথা আপনাদের বলে রাখি, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম প্রভৃতি পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে প্লেটলেট কাউন্ট টেস্ট সাধারণত মেশিনে হয়। এইসব এলাকার মানুষের প্লেটলেট আকারে বড়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ম্যাক্রোপ্লেটলেট বলা হয়। ম্যাক্রোপ্লেটলেট মেশিনে কাউন্ট করলে আসবে না। এর জন্য ম্যানুয়াল কাউন্ট করতে হয়। তাই যাঁর ডেঙ্গি হয়েছে তাঁর যদি প্লেটলেট কাউন্ট দেখতে হয় তাহলে ম্যানুয়াল প্লেটলেট কাউন্ট করতে হবে। জ্বর আসার চারদিনের মাথা থেকে প্লেটলেট কাউন্ট শুরু করা উচিত। প্রতিদিনই একবার করে দেখতে হবে। ডেঙ্গুতে কারও কারও হঠাৎ করে প্লেটলেট কমে যায়, আবার কারও আস্তে আস্তে কমে। যাঁদের হঠাৎ করে প্লেটলেট কমে তাঁদের রক্তপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আরও পড়ুন:

ডায়াবেটিস থাকবে দূরে, জেনে নিন কোন ফল কতটা পরিমাণে খাবেন, আর কোনটা খেতে হবে সাবধানে, দেখুন ভিডিয়ো

হেলদি ডায়েট: বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ! রোগ প্রতিরোধে কেমন হবে ডায়েট? খাদ্যতালিকায় কী রাখলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৪: আশা-নিরাশা ও ভরসার সে এক অন্য ‘মনের ময়ূর’

ষাট পেরিয়ে: অ্যালঝাইমার্সের যত্ন বেশ চ্যালেঞ্জের, সঠিক পরিচর্যায় ধৈর্যশীল, সহনশীল, সংবেদনশীল এবং কৌশলী হতে হবে

 

ওষুধ খাওয়া নিয়ে সতর্কতা প্রয়োজন

ডেঙ্গিতে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামলই খেতে হবে। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ব্যথার ওষুধ খেলে রক্তপাত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই ডেঙ্গি হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ব্যথার ওষুধ খাবেন না। অনেকের গা-হাত-পা ব্যথা, গাঁটে ব্যথা হলেও ভুলেও প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ খাওয়া যাবে না। যাঁরা আগে থেকেই হার্টের সমস্যার জন্য অ্যাসপিরিন বা রক্ত তরল করার জন্য ওষুধ খান তাঁদের এই সময় সেই সব ওষুধ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।

আরও পড়ুন:

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-২: ঠিক করলাম উত্তরে ডোর কাউন্টি, মধ্যে মিলওয়াকি, দক্ষিণে গ্রান্ট কাউন্টি—সবই দেখব

দশভুজা: দু’শো বছর আগে হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের বদলে সতী হতেন

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪২: নিজেকে যিনি আড়ালে রেখেছিলেন

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-১৯: অনুপ্রেরণার আর এক নাম কই মাছ

 

কখন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে?

আমরা সাধারণত বলে থাকি—
রোগীর প্রস্রাবে যদি রক্ত দেখা যায়।
কালো পায়খানা হলে।
বমির সঙ্গে রক্তপাত এলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা করতে হবে। এছাড়া কারও প্লেটলেট যদি ৫০,০০০ নিচে নেমে যায় তাহলে রোগীকে পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে রাখতে পারলে ভালো। তবে তাঁকে প্লেটলেট দেওয়ার দরকার নেই। সাধারণত কারও প্লেটলেট ১০ হাজার বা তাঁর নীচে নামলে বা রক্তক্ষরণ হলে তবেই একমাত্র প্লেটলেট দেওয়া হয়। এটাও মনে রাখা দরকার খুব কম সংখ্যক রোগীকে প্লেটলেট দিতে হয়। তাই প্লেটলেট কমে যাচ্ছে বলে অযথা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন না। প্রতিদিন ম্যানুয়ালি প্লেটলেট কাউন্ট করুন। রক্তক্ষরণ বা ৫০,০০০-এর নীচে প্লেটলেট নামলে তবেই রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫


Skip to content