সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

মাইগ্রেন একটি পরিচিত শব্দ। অনেকেই এই সমস্যায় খুব ভোগেন। কারও কারও মাসের তিন-চার দিন তো বাঁধা ধরা। কখনও কখনও এমন যন্ত্রণাও হয় যে, নিত্যদিনের কাজ করাও দুষ্কর হয়ে ওঠে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে— অনেক সময় কোন মাথাব্যথা মাইগ্রেনের আর কোনটা নয়, তা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায়। তবে চিকিৎসকেরা এই রোগের উপসর্গ পরিষ্কার ভাবে নির্ধারণ করেছেন। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই সমস্যায় কিছু অভ্যেস বদলে ওষুধ ছাড়াও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় মাইগ্রেনের ব্যথাকে। তাই আজকের আলোচনার বিষয় হল ‘মাইগ্রেন’।
 

মাইগ্রেন ঠিক কী?

এটি এক ধরনের স্নায়ু সংক্রান্ত রোগ। আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে যে ধমনীগুলো থাকে তা যখন স্বাভাবিকভাবে সংকোচন ও প্রসারণ হতে পারে না বা বাধাপ্রাপ্ত হয় তখনই এই ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘মাইগ্রেন’ বলা হয়।
 

এর উপসর্গ কী কী

মাইগ্রেনের প্রধান উপসর্গ হল মাথাব্যথা। সাধারণত মাথার একদিকেই বেশি ব্যথা করে। তারপর তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে ।
মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে আলোর দিকে তাকাতে অসহ্য মনে হবে।
চারপাশের যে কোনও আওয়াজ বিরক্তিকর মনে হবে।
অনেক সময় দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়।
এসময় কোনও কিছুকে দেখলে হিজিবিজি মনে হতে পারে।
কারও কারও বমি ভাব, গা গোলাতে পারে।
মাথাব্যথা চার থেকে ৭২ ঘণ্টা অবধি থাকতে পারে।
মাইগ্রেনের প্রভাবে অনেক সময় মাথা দপদপ করতে পারে।
অতিরিক্ত মাথা যন্ত্রণার জন্য কারও কারও ঘুম ভেঙে যায়।
এছাড়াও পেটে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
 

কোন কোন খাবার এড়াতে হবে

এমন খাবার খাওয়া যাবে না, যেগুলি মাইগ্রেনের যন্ত্রণাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন—
মাত্রাতিরিক্ত কফি খাওয়া যাবে না।
চিজ, চকোলেট, পেস্ট্রি এগুলি না খাবার চেষ্টা করুন।
আজিনা মটর যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
অবশ্যই অ্যালকোহল বা মদ্যপান বর্জন করুন।

অবশ্যই গুরুত্ব দিন

ঘুম না হলে মাইগ্রেনের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম চাই।
হঠাৎ খুব রোদ থেকে ঠান্ডা জায়গায় আবার খুব ঠান্ডা থেকে গরমে যাওয়া চলবে না। এ ক্ষেত্রে পরিবেশের সঙ্গে কিছুটা খাপ খাইয়ে তবেই বেরোন।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে টিভি, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট প্রভৃতির উজ্জ্বল আলো থেকে নিজেকে দূরে থাকতে হবে।
কাজের ফাঁকে চোখকে বিশ্রাম দিন।
সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করতে হবে।
মানসিক চাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন।
ডাটয়েটে রাখুন পুষ্টিকর খাবার ও ফল।
 

মাইগ্রেনের আধুনিক চিকিৎসা

‘ট্রিপটান’ (Triptan), জলমিট্রিপটান (Zolmitriptan)-সহ একাধিক ওষুধ আছে, যেগুলি মাইগ্রেনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে এই ধরনের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ব্যবহার করা উচিত।
যাঁদের মাসে তিন বারের বেশি মাথা যন্ত্রণা হয়, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাইগ্রেনের ওষুধ খেতে হবে। সেই সঙ্গে যাঁরা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাঁদের সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেতে হবে।
ঋতুস্রাবের সময় কারও কারও মাইগ্রেনের মাথা যন্ত্রণা করে, সেক্ষেত্রে ‘ট্রিপটান’ (Triptan), জলমিট্রিপটান (Zolmitriptan ) ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ কোনও সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

প্যারাসিটামল খেয়েও মাথা ব্যথা কমছে না।
৫৫ বছর বয়েসের পর যদি হঠাৎ কারও তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয় যা আগে কখনও হয়নি সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাথাব্যথার কারণে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাচ্ছে।
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাথায় স্ক্যান করাতে যাবেন না। কারণ মাথায় স্ক্যান করার ফলে শরীরে রেডিয়েশনের প্রভাব পড়ে।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫


Skip to content