বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

ওষুধ না খেয়ে একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমানো সম্ভব, তা নিয়েই আজ আলোচনা করব। আগের পর্বগুলোতে আলোচনা করেছি, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলেই যে তার চিকিৎসা করতেই হবে তার কোনও মানে নেই। অর্থাৎ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে তাঁর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। ওষুধ দরকার পড়ে একমাত্র যদি ইউরিক অ্যাসিড জনিত কারণে আপনার গাঁটে ব্যথা হয় বা কিডনি বা মূত্রনালিতে পাথর বা স্টোন হলে।

অন্যান্য ক্ষেত্রে কিন্তু সাধারণত ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না। অর্থাৎ শুধু কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেই আমরা ইউরিক অ্যাসিড কমানোর চেষ্টা করি। একমাত্র কোনও রোগীর যদি কিডনি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকে, তাহলেই ইউরিক অ্যাসিডের ওষুধ দেওয়া হয়।
 

কী কী খাওয়া যাবে না

আগের পর্বগুলিতে আলোচনা করেছি, ইউরিক অ্যাসিডের জন্য আমরা কী কী খাবার এড়িয়ে চলব। বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল, রড মিট, মেটে, চিংড়ি, কাঁকড়া, সামুদ্রিক মাছ, ফুলকপি, মাশরুম ইত্যাদি। ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এই সব খাবার এড়াতেই হবে।

আপনারা হয়তো জানেন, ইউরিক অ্যাসিড যদি কারও শরীরে বেশি মাত্রায় থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে তাঁর ডায়াবেটিস হলেও হতে পারে। সে কারণে আগাম সতর্ক থাকতে এবং ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে রড মিট, মেটে, চিংড়ি, কাঁকড়া, সামুদ্রিক মাছ, ফুলকপি, মাশরুম ইত্যাদি খাবার না খাওয়াই বুদ্ধমানের কথা।

 

ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে পাতে রাখুন এই সব খাবার

কিছু কিছু খাবার আছে, যেগুলো ইউরিক অ্যাসিডকে ভেঙে দিতে পারে। সেই সঙ্গে ইউরিক অ্যাসিডকে মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্যও করে। কারও শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে অবশ্যই অন্তত তিন লিটার জল খেতে হবে। পাশাপাশি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। রোজ যেকোনও ধরনের লেবু (পাতিলেবু, কমলালেবু ও মুসাম্বি) এবং আমলকী খাওয়া যেতে পারে।

আবার এমন কিছু কিছু খাবারও আছে যেগুলি রক্তে ইউরিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করতে খুব সাহায্য করে। যেমন শসা। ইউরিক অ্যাসিডকে বাগে আনতে শসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এর দামও খুব বেশি নয়। সহজলভ্য, সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই রোজ আপনার পাতে থাকুক শসা।

আরও পড়ুন:

ডায়াবিটিস বাসা বেঁধেছে শরীরে? কী কী লক্ষণ দেখলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে? জেনে নিন খুঁটিনাটি

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৯: মিশ্র মাছ চাষের অভিনবত্ব

আবার শসার সঙ্গে টকদই মিশিয়য়ও (রায়তা নামেও পরিচিত) খেতে পারেন। এতে শুধু ইউরিক অ্যাসিড কমবে না, শহরের ফ্যাটও কিছুটা কমবে। এছাড়াও আমরা রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ৬ থেকে ৭টা আমন্ড ভিজিয়ে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে আমন্ড ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। তবে আমন্ড অবশ্যই খোসা সমেত খেতে হবে। এতেও রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩: টক খেওনা ধরবে গলা

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২১: কে তুমি নিলে আমার চিরসবুজের ‘অগ্নিপরীক্ষা’

লেবু ও আমলকী ছাড়াও কিছু কিছু মরসুমি ফল রয়েছে, যেমন চেরি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ক্র্যানবেরি খুবই উপকারী। আপনাদের মনে হতে পারে এই সব ফল তো বেশ দামি। এ বিষয়ে আমি আপনাদের সঙ্গে একমত। কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডের জন্য যদি আপনাকে ওষুধ খেতে হয়, তার দাম কিন্তু এর থেকে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, ইউরিক অ্যাসিড জনিত কারণে যদি আপনার কিডনির সমস্যা বা কিডনিতে স্টোন হয়, তাহলে তার চিকিৎসা কিন্তু খরচ সাপেক্ষ। সেই তুলনায় কিন্তু এই সব ফল খাওয়া ভালো। আরেকটি বিষয়টি হল, আপনাকে রোজই যে এই সব খেতে হবে, তা কিন্তু নয়। বরং অল্প অল্প করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খান। কোনও দিন হয়তো চেরি খেলেন, অন্যদিন হয়তো ব্লুবেরি খেলেন—এ ভাবেও খেতে পারেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৯: গুরুদেবের দেওয়া গুরুদায়িত্ব

জেনে নাও Unseen Comprehension এ কীভাবে পাবে ফুল মার্কস এবং পড়বে কোন Phrasal Verbগুলো

 

চেরি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ক্রেনবেরি খাওয়া সম্ভব না হলে

একান্তই যদি চেরি, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ক্র্যানবেরি ফল না খাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে নিয়মিত পাতিলেবু, মুসাম্বি, কমলালেবু, আমলকী, শসা এগুলি খেতে হবে। সঙ্গে তিন লিটার জলপান করতে হবে। তাহলেই কিন্তু আমাদের শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাকে সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। সব থেকে বড় ব্যাপার হল, আমরা প্রাকৃতিক উপায়ে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে পারব। এড়াতে পারব কিডনি স্টোন না হওয়া বা ইউরিক অ্যাসিড জনিত কারণে আমাদের গেঁটে বাতের মতো সমস্যাকে।

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫

* সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন (health-checkup – Health Tips) : ডাঃ আশিস মিত্র (Dr. Ashis Mitra), বিশিষ্ট মেডিসিন ও ডায়াবিটিস বিশেষজ্ঞ।

Skip to content