বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

আজকে আলোচনা করব, অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয় কখন? এখন যে জ্বর হচ্ছে সেটা কিন্তু ভাইরাল ফিভার অর্থাৎ ভাইরাস ঘটিত জ্বর। এমনকি করোনার কারণে যে জ্বর হয় সেটিও ভাইরাস ঘটিত জ্বর। এই ধরনের জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই। যদি একান্ত কিছু খেতে হয় তাহলে সেটা হল অ্যান্টি-ভাইরাল। যেহেতু অধিকাংশ ভাইরাস ঘটিত রোগ যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনকি করোনা বা হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-ই, হাম —এই ধরণের ভাইরাস ঘটিত রোগ যেহেতু নিজে থেকে সেরে যায় সেহেতু অ্যান্টিভাইরাস দেওয়া হয় না। আর অ্যান্টিবায়োটিকের তো কোনও প্রশ্নই নেই। কিছু কিছু ভাইরাস ঘটিত রোগে অ্যান্টিভাইরাল দেওয়া হয় যেমন চিকেন পক্স। যেসব ভাইরাস ক্রোনিক রোগের উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইচআইভি — এই সব ধরনের রোগে অ্যান্টি-ভাইরাল দেওয়া হয়। আর অধিকাংশ ভাইরাস ঘটিত জ্বরে অ্যান্টি-ভাইরাল দেওয়া হয় না। আর অ্যান্টিবায়োটিক তো একদম নয়ই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভাইরাস ঘটিত জ্বর হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে এজিথ্রাল, অগমেনটিন, ক্লাভাম জাতীয় ওষুধ কিনে খান।
মনে রাখতে হবে, ভাইরাস জ্বর সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই কমে যায়। এক্ষেত্রে শুধু জ্বরের ওষুধ প্যারাসিটামল খেতে হবে। একই সঙ্গে মাথা ধুয়ে দিতে পারেন, গা স্পঞ্জ করে দিতে পারেন। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু ওষুধ খেতে হবে যেমন ভিটামিন, কাশি হলে কাশির সিরাপ, নাক দিয়ে জল পড়লে বা খুব হাঁচি হলে বা সর্দি হলে প্রথম দু’ একদিন অ্যালার্জির ওষুধ অর্থাৎ অ্যান্টিহিস্টামিনিক দেওয়া হয়। কিন্তু কখনওই অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
এখন প্রশ্ন হতে পারে তাহলে জ্বর হলে কখন অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার? এ বিষয়ে বলে রাখি অ্যান্টি-বায়োটিক খেতে হলে সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খেতে হবে।
 

ভাইরাস ঘটিত জ্বর কীভাবে বুঝবেন?

যখন দেখবেন আপনার আশেপাশে প্রতিবেশীদের মধ্যে, সহকর্মীদের মধ্যে অর্থাৎ একটা সিজনে অনেকের জ্বর হচ্ছে তখন বুঝতে হবে সেটা ভাইরাস ঘটিত জ্বর। এক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ দিন অপেক্ষা করে ডাক্তার দেখিয়ে যদি তিনি বলেন যে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত কারণে জ্বর হচ্ছে সেক্ষেত্রে একমাত্র অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন।

 

কোন কোন ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয়?

বুকে সর্দি বসলে অর্থাৎ নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, যেমন জ্বর, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হলুদ- কালো কফ বার হচ্ছে বা ইউরিনে জ্বালাভাব, ইউরিন করতে গেলে ব্যথা অনুভব, শরীরের কোথাও ফোঁড়া বা অন্যকারণে পুঁজ জমেছে বা কোনও জীবাণু সংক্রমণ হয়েছে ইত্যাদি কারণে জ্বর আসছে — এইসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার পড়ে। আমরা যদি নিজেদের ইচ্ছা মতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে শুরু করি তাহলে যখন সত্যি কারের অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়বে তখন আর তা কাজ করবে না। মাথায় রাখতে হবে আমাদের হাতে খুব বেশি অ্যান্টি-বায়োটিক নেই। এখন কিন্তু এই সমস্যাটাই হচ্ছে। একটা কথা জেনে রাখা জরুরি, জ্বর হলেই আমরা যে অগমেনটিন, ক্লাভাম বা অন্যান্য অ্যান্টি-বায়োটিক খাই, এটা কিন্তু নিউমোনিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক। ফলে আমরা যদি এখন থেকে ওই এগুলো খেতে আরম্ভ করি তাহলে যখন নিউমোনিয়া হবে তখন কিন্তু আর এই অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ করবে না। তখন আরও কড়া অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে এবং তাতেও হয়তো কাজ না হতে পারে।
 

কীভাবে বুঝবেন কোন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন?

চিকিৎসা পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘এভিডেন্স বেস্ট মেডিসিন’ অর্থাৎ প্রমাণ সাপেক্ষে ওষুধ দেওয়া। কীভাবে প্রমাণ করবো? ধরুন কোনও রোগীকে দেখে মনে হচ্ছে নিউমোনিয়া হয়েছে। তাহলে প্রথমেই আমাদের কাজ হবে রোগীর কফ কালচার করতে দেওয়া। সেই কালচার রিপোর্টের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা বুঝতে পারি যে কোন ধরনের জীবাণু আছে। কোন অ্যান্টি-বায়োটিকে কাজ করবে।

 

তাহলে কি ৭২ ঘণ্টা চিকিৎসা না করেই বসে থাকবো?

না আমাদের মোটামুটি একটা ধারণা আছে যে নিউমোনিয়ায় কী কী ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। সেই মতো অ্যান্টিবায়োটিক দেবো এবং যখন কালচার রিপোর্ট আসবে, সেই অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, আমরা প্রথমে কড়া অ্যান্টি-বায়োটিক দিয়ে থাকি। যদি দেখা যায় কালচারে রিপোর্টে নিউমোনিয়া পাওয়া গিয়েছে আর তা খুব জোরাল নয়, তাহলে ঠিক যেরকম শক্তির অ্যান্টিবায়োটিকেই এই জীবাণু নাশ হবে ঠিক তেমনই অ্যান্টি-বায়োটিক দিতে হবে, এটাই নিয়ম। একই ভাবে আমাদের যদি মনে হয়, মূত্রনালী সংক্রমণ হচ্ছে অর্থাৎ ইউরিনের জ্বালা করছে বা ব্যথা করছে তাহলে প্রথমে ইউরিন কালচার করতে পাঠিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করতে হবে। আবার শরীরের কোথাও ফোঁড়া বা অন্য কারণে পুঁজ হলে সেটাকে কালচার করতে পাঠিয়ে দেখা হয় কী ধরনের জীবাণু আছে।
সুতরাং এই অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণ করা একটু কঠিন ব্যাপার। এটা জীবনদায়ীও বটে। মনে রাখবেন, যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার কিন্তু ভবিষ্যতে বড় সর্বনাশ ডেকে আনবেন। তাই অ্যান্টি-বায়োটিক খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবেন। কারণ, ডাক্তারবাবু প্রমাণ সাপেক্ষে অ্যান্টিবায়োটিক দেবেন। এই নিয়ম মানলে আপনি ও আপনার পরিবারও ভালো থাকবে।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫


Skip to content