রবিবার ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি প্রতীকী

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ। স্থানীয়ভাবে যে দেশগুলিতে এই রোগ ছড়িয়েছিল তার বাইরেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিজ এজেন্সি। এই তালিকায় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইটালি, ফ্রান্স-সহ মোট ২১৯টি দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আশঙ্কা করছে, ভবিষ্যতে মাঙ্কিপক্স আরও ছড়িয়ে পড়বে। চিন্তা বাড়াচ্ছে সংক্রমণের হারও। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণ সবথেকে বেশি ছড়াচ্ছে সমকামী পুরুষদের মধ্যেই। পর্তুগাল সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, সে দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ৭৪ জনই পুরুষ। এদিকে, ইংল্যান্ড ও স্পেনে যথাক্রমে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ জন এবং ৯৮ জন মানুষের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। তবে সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিলে বসন্তের টিকা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। আগাম সতর্কতার জন্য জার্মানিও ৪০ হাজার বাভারিয়ান নর্ডিক ভ্যাকসিন মজুত রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে।
 

মাঙ্কিপক্স কীভাবে এল?

মাঙ্কিপক্স রোগটা আসলে নতুন নয়৷ ১৯৫৮ সালে গবেষণার জন্য কিছু বাঁদর পোষা হয়েছিল। প্রথম সেই বাঁদরদের মধ্যেই মাঙ্কিপক্স উপসর্গ দেখা যায়। আর ১৯৭০ সালে এই সংক্রমণ ছড়ায় মানুষদের মধ্যে। মূলত বাঁদর বা অন্যান্য জন্তু-জানোয়ার থেকেই এই রোগ মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়৷ আমাদের দেশে আগে কখনও মাঙ্কিপক্স হয়নি৷ তবে ভারত মাঙ্কিপক্সের ‘এনডেমিক জোন’ না হলেও আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে৷ আবার অযথা আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই৷ কেননা মাঙ্কিপক্স রোগটা আমাদের দেশে অনেকটা জলবসন্ত বা স্মল পক্সের মতো৷ যেটা ইতিমধ্যে শুধু আমাদের দেশ কেন, পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গিয়েছে৷ এখন আর হয় না৷
 

এর উপসর্গ কী?

অনেকটা জলবসন্ত বা স্মল পক্সের মতোই উপসর্গ৷ প্রথমদিকে খুব জ্বর হয়, গা-হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা করে, কিছুটা আবার ডেঙ্গির মতো৷ ঘাড়ের গ্ল্যান্ডগুলো ফুলে যায়৷ ফুলতে পারে শরীরের অন্যান্য গ্ল্যান্ডও। জলবসন্তের মতো শরীরে পদ্মপাতায় জলের বিন্দুর মতো র‍্যাশ বেরোয়৷ এইগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে অন্য কারও সংক্রমিত হতে পারে৷ কারও কারও আবার কাঁপুনি আসতে পারে। অনেকে খুব ক্লান্তিও অনুভব করতে পারেন।
 

কীভাবে সংক্রমিত হতে পারে?

সাধারণত আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে৷ আমরা যদি কোনও রোগীর ঘরে শোওয়াবসা করি বা একই বিছানা, বালিশ, চাদর ব্যবহার করি, তার থেকেও সংক্রমিত হতে পারে৷ হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারে৷ অতএব আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে৷ রোগীর থেকে যতটা দূরে থাকা সম্ভব থাকতে হবে৷ ড্রপলেট-এর পাশাপাশি ক্ষতস্থান, শ্বাসনালি, নাক, চোখ কিংবা মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বাড়িতে পোষ্য থাকলে সতর্ক হতে হবে। বাড়তি সতর্কতার জন্য অন্য কোনও প্রাণির সংস্পর্শেও না আসা ভালো।

বয়স্ক ও শিশুদের সাবধানে রাখতে হবে

আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো, এই রোগ কিন্তু মারণরোগ নয়৷ শতকরা তিন থেকে চারজনের ক্ষেত্রে এই রোগ খারাপ পর্যায়ে পৌঁছয়৷ সেখান থেকে মৃত্যুও হতে পারে৷ তবে ছোট ও বয়স্কদের এবং যাঁরা ডায়াবেটিস, কিডনি বা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন বা ক্যানসারের জন্য কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, স্টেরয়েড খাচ্ছেন তাঁদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে৷ যেমন করানোর সময় যেভাবে আমরা সাবধানে থেকেছি, সেভাবেই থাকতে হবে৷ সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, মাস্ক পরা৷ দূরত্ব বিধি মেনে চলা ইত্যাদি৷

সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, যেহেতু অন্য প্রাণীদের মধ্যেও এই রোগের উপসর্গ দেখা যায়, তাই এই বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন৷
বাড়িতে কারও যদি জ্বর বা তার সঙ্গে সর্দিকাশি হয় তার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকাই ভালো৷ বাড়ির অন্য সদস্যের অবশ্যই মাস্ক পরে থাকতে হবে৷ যদি আপনারা এই নিয়মগুলো মেনে চলেন তাহলে মাঙ্কিপক্স অবশ্যই এড়ানো সম্ভব। মনে রাখবেন, এই রোগের এখনও পর্যন্ত কোনও ভ্যাকসিন বা ওষুধ বাজারে বের হয়নি৷ যদিও আমেরিকা ও ইউরোপে এই রোগের ভ্যাকসিন বা দু-একটা ওষুধ বেরিয়েছে এবং ট্রায়ালের পর্যায়ে আছে৷

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫


Skip to content