শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

গত দুবছর ধরে গোটা বিশ্ব এক ভয়ানক অসুখে আক্রান্ত, যার প্রভাবে এক বিভীষিকাময় মারণ শিবিরে পরিণত হয়েছে পৃথিবী । বলাই বাহুল্য এই বিভীষিকার নাম করোনা ভাইরাস। ২০২০ সালে যার প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বজুড়ে এবং এর প্রভাব থেকে মুক্তি পায়নি ভারত এবং পশ্চিমবাংলাও। অতঃপর ২০২১ সালে এই ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ পার করে ২০২২-এর প্রথমেই মানুষকে মুখোমুখি হতে হয়েছে করোনা ভাইরাস এর তৃতীয় ঢেউয়ের, বৈজ্ঞানিকেরা যার নামকরণ করেছেন ওমিক্রন। আজ আমি মূলত আপনাদের সঙ্গে এই বহুল আলোচিত ও চর্চিত ওমিক্রনের আকার, প্রকার এবং বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব বলে উদ্যোগী হয়েছি, পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে সুস্থভাবে লড়াই করার কিছু পন্থা সম্পর্কেও আপনাদের অবগত করা আমার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।

ওমিক্রন আসলে ঠিক কী?
ওমিক্রন হল মূলত করোনা ভাইরাসের একটি নব্যতর শাখা যেটি করোনা ভাইরাস এরই কিছু গঠনগত পরিবর্তন ও রূপান্তরের ফলে আরও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ও উপসর্গসহ দেখা দিয়েছে। এই ভাইরাসের মূল সমস্যা যেটি সেটা হল এই ভাইরাসটি করোনা ভাইরাস-এর আগের দুটি শাখার থেকে অনেক বেশি দ্রুত এবং অধিকসংখ্যক মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। অর্থাৎ আগে যদি একজন মানুষের থেকে দুজনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকত তাহলে ওমিক্রনের ক্ষেত্রে একজন মানুষের থেকে সংক্রমিত হতে পারে প্রায় চার থেকে পাঁচজন মানুষের মধ্যে এবং এটি সংক্রমিত হচ্ছেও অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে। পাশাপাশি আরেকটি ভালো দিক হল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়িতে রেখেই ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা খুব সফলভাবে করা সম্ভবপর হচ্ছে, অর্থাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আগের দুটি ঢেউয়ে যতটা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছিল এক্ষেত্রে কিন্তু ততটা নেই একেবারেই।

উপসর্গ
এর প্রাথমিক উপসর্গগুলি অনেকাংশেই ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো, যেমন জ্বর , মাথাব্যথা বা গোটা শরীরে ব্যথা, সর্দি-কাশি এবং এর নতুন উপসর্গটি হল ডায়রিয়া। অনেক মানুষই ডায়রিয়া হওয়ার ফলে দোকান থেকে ডায়রিয়ার ওষুধ কিনে খাচ্ছেন কিন্তু বলাই বাহুল্য যে এতে লাভ কিছু হচ্ছে না। পাশাপাশি ওমিক্রনের ফলে গায়ে হাত পায়ে বা মাথাব্যথার যে তীব্রতা দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে ডেঙ্গুর উপসর্গগত যন্ত্রণারও প্রচুর মিল রয়েছে। তবে সবথেকে আশার বিষয় যেটি সেটি হল এই ভাইরাসটি কিন্তু করোনার আগের দুটি শাখার মতো ফুসফুসকে আক্রমণ করছে না। খুব বড়জোর শ্বাসনালির ওপর দিকে এবং গলার কিছু অংশ এবং তার সঙ্গে মুখের সাইনাস বহুল এলাকাগুলিতে ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে। ফুসফুস আক্রান্ত না হওয়ার ফলে রক্ত অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার যে সমস্যাটি আগেরবার তীব্র আকার ধারণ করেছিল এবার কিন্তু সেই সমস্যা প্রায় নেই বললেই চলে। আগের দুবারই আমরা রোগীদের সবসময় বলতাম নিজের কাছে পালস অক্সিমিটার রাখার এবং অক্সিমিটারে যদি রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ শতকরা ৯৪ শতাংশের নীচে দেখায় তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রায় নেই বলেলেই চলে, আর যদিও বা থেকে থাকে তাহলে তা খুব বেশি হলে শতকরা এক কি দুই শতাংশ মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
পরীক্ষার পদ্ধতি
উপরোক্ত উপসর্গগুলি দেখা গেলে আপনি দুরকমভাবে কোভিড টেস্ট করাতে পারেন যথা- রপিড টেস্ট এবং আর্টিফিশিয়াল টেস্ট। র্যা পিড
টেস্ট (Rapid  test ) আপনি আপনার নিকটবর্তী যেকোনও পুরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে টেস্ট করাতে পারেন অথবা অনেক হাসপাতালের এমিরজেন্সিতেও কিন্তু র্যা পিড টেস্ট (Rapid  test ) হচ্ছে , চাইলে সেখান থেকেও আপনি টেস্ট করাতে পারেন এবং এই টেস্টের রিপোর্ট আপনি পাবেন তৎক্ষণাৎ। আর আর্টিফিশিয়াল টেস্টও এই মুহূর্তে সমস্ত হাসপাতাল এবং ল্যাবরেটরিতে করা হচ্ছে, আর্টিফিশিয়াল টেস্টের রিপোর্ট কিন্তু হাতে পেতে আপনার দু থেকে চারদিন সময় লাগবে। টেস্টের ক্ষেত্রে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখা জরুরি, সেটি হল র্যা পিড টেস্টে (Rapid  test ) যদি আপনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাহলে আপনি অবশ্যই কোভিড পজিটিভ, কিন্তু এই টেস্টে যদি আপনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে এবং আপনি উপসর্গমুক্ত না হন তাহলে কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই আরেকবার আর্টিফিশিয়াল টেস্টের মাধ্যমে সন্দেহমুক্ত হওয়া উচিত।

চিকিৎসা এবং পথ্য
প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়া দরকার এবং সর্দি থাকলে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ট্যাবলেট খেতে হবে, ন্যাজাল স্প্রে ব্যবহার করতে হবে পাশাপাশি অবশ্যই ভিটামিন ট্যাবলেট খেতে হবে। ওমিক্রনের নতুন একটি ওষুধ সম্প্রতি বাজারে এসেছে তবে সেটি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই খাওয়া উচিত। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে আপনাকে হোম আইসোলেশানে থাকতে হবে সাতদিন এবং আইসোলেশনে থাকাকালীন অবশ্যই মাস্ক পরে থাকতে হবে যাতে অন্য কারওর মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে না পারে, কারণ মনে রাখা প্রয়োজন যে এই ভাইরাসটির সংক্রামক ক্ষমতা কিন্তু প্রবল। পাশাপাশি চার ঘণ্টা অন্তর পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে।

খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এবং ছানাজাতীয় খাবার এই রোগের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যদি কারও ডায়রিয়া হয়ে থাকে তবে প্রাথমিকভাবে দুধ এবং ছানা খাওয়াটাও বন্ধ রাখতে হবে। আপনার নিজস্ব সচেতনতা ও সতর্কতাই কিন্তু একমাত্র আপনাকে এবং আপনার চারপাশের মানুষজনকে পুনরায় কোভিডমুক্ত এক সুস্থ পৃথিবীর বাসিন্দা করে তুলতে পারে। তাই সচেতন হোন, চিকিৎসকের পরামর্শে চলুন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

 


Skip to content