আপনার মাড়ি থেকে কী রক্তক্ষরণ হচ্ছে? ব্রাশ করার সময় বা কোনও কিছু খেতে গেলে রক্ত বের হচ্ছে? অথবা কোনও আঘাত ছাড়াও মাঝে মধ্যেই রক্ত পড়ে? এ সব কিছুই আসলে মাড়ি বা জিঞ্জিভা দুর্বল হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত। মাড়ি দুর্বল হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ সংক্রমণ। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় আমরা জিনজিভাইটিস বলি। চিকিৎসা না করলে তা বেড়ে যায় এবং ক্রমশ মাড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে। সঙ্গে দাঁতও নড়তে শুরু করে (পেরিওডন্টাইটিস)।
মূলত দাঁত ও মাড়ির যত্ন না নেওয়া, ভালো করে মুখ না ধোয়া, অপুষ্টিকর ও অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া, পান, গুটখা খাওয়ার মতো বদভ্যাস থেকে মাড়ি দুর্বল হতে শুরু করে। এছাড়াও শরীরে বিভিন্ন প্রয়জনীয় খনিজ এবং ভিটামিন-সি এর অভাবেও মাড়ির সংক্রমণ বা প্রদাহ হয়। অনেক ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ও মাড়িতে সংক্রমণ দেখা যায় (প্রেগন্যান্সি জিনজিভাইটিস)।
এর থেকে বাঁচার উপায় কী?
● নিয়মিত দু’বেলা টুথব্রাশ ও টুথপেষ্ট দিয়ে ব্রাশ করতে হবে।
● দাঁত ফ্লস করতে হবে। মাড়ির মাঝে খাবার জমে থাকতে থাকতে মাড়ি দুর্বল হয়ে পেরিওডন্টাল পকেট তৈরি করে। পরে সেখানে সংক্রমণ হয়ে মাড়ির হাড় পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
● ঈষদুষ্ণ গরম জলে গার্গল বা কুলকুচি করার অভ্যেস দাঁত, মাড়ি এবং গলার জন্য ভালো। নুনের বদলে এক ছিপি ২ শতাংশ বিটাডাইনও ব্যবহার করতে পারে।
● ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার যেমন লেবু, কমলা, টম্যাটো, সবুজ শাকসব্জি এ সব খেতে হবে। অপুষ্টিকর এবং দাঁতে আটকে যেতে পারে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন।
মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে কী করবেন?
● অবশ্যই একজন দন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। মাড়িতে পাথর বা ক্যালকুলাস জমলে স্কেলিং করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একমাত্র দন্ত বিশেষজ্ঞের এটা করতে পারেন। তবে বিশেষ করে মাড়ির রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হলেন পেরিওডনটিস্ট (Periodontist)।
স্কেলিংয়ের আগে কী কী মাথায় রাখবেন?
● স্কেলিং করলে আপনার দাঁত সাদা হয় না। স্কেলিং শুধু আপনার মাড়ির মধ্যে জমে থাকা পাথর সরায়। দাঁত সাদা করতে গেলে পলিশিং এবং টুথ হোইটেনিং করতে হয়।
● অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে ক্যালকুলাস জমতে জমতে মাড়ির হাড় ক্ষয় হয়ে যায়। তখন দাঁতগুলো তখন ওই পাথরের সাহায্যে বসে থাকে। ফলে ক্যালকুলাস সরিয়ে দেওয়ার পরে সাময়িকভাবে দাঁতগুলো নড়তে থাকে। এক্ষেত্রে স্কেলিংয়ের পরে দাঁতগুলো বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছে এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই।
● যদি আপনি রক্ত পাতলা করার কোনও ওষুধ খান (যেমন এসপিরিন), আপনার যদি রক্তের কোনও সমস্যা থাকে বা কেটে গেলে সহজে রক্ত সহজে বন্ধ হয় না—সেক্ষেত্রে আপনি স্কেলিংয়ের আগেই ডাক্তারবাবুকে জানাবেন।
মেনে চললে ভালো
● সবশেষে বলি, প্রতি ৬-৮ মাস অন্তর একবার ডাক্তারবাবুর কাছে দেখান। মুখের সামগ্রিক সুস্থ রাখার জন্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি ছয় মাস অন্তর একবার দাঁত ও মাড়ি দেখিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। একটা গাড়ি কিনলে তার যেমন নিয়মিত সার্ভিসিংয়ের প্রয়োজন, তেমনি আমাদের মুখ এবং বাকি শরীরেরও নিয়মিত সার্ভিসিংয়ের দরকার হয়।