বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

চা নিজে ভেষজ হলেও আয়ুর্বেদে চায়ের বর্ণনা অপেক্ষা বিভিন্ন ভেষজের সংমিশ্রণে তৈরি চা-কেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

চায়ের রাসায়নিক উপাদান
চায়ে মূলত পলিফেনল, ক্যাফিন, আমাইনো আসিড, কার্বোহাইড্রেড ইত্যাদি বর্তমান।

চায়ের উপকারিতা
অত্যধিক পরিশ্রমের পর চা পান করলে বেশ একটু স্ফূর্তি, স্বচ্ছন্দতা বোধ হয়। স্নায়বিক অবসাদ কাটাতে চা পানে স্বল্পকালীন উত্তেজনা শরীরকে প্রফুল্লিত করে।
মূত্রকারক, শ্রম নাশ, শারীরিক অবসাদের বিনাশকারক।

চা পানের অপকারিতা
অতিরিক্ত মাত্রায় ঘনঘন চা পান অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
ঋতু বিশেষে পরিমিতভাবে চা পান যেমন উপকারী ঠিক সেভাবেই অতিরিক্ত চা পানের ফলে অগ্নিমান্দ্য, অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, অনিদ্রা ও বিভিন্ন জীবনশৈলীগত রোগ দেখা যায়।

রোগীদের চা
রোগীদের ক্ষেত্রে চা নির্বাচন এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে যে রোগের নিদান অর্থাৎ কারণের সঙ্গে সেবনীয় পানীয় যাতে সেই রোগের পক্ষে অনুকূল না হয়ে পড়ে।
যেমন: অনেকেরই দুধ চা খেলে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে তাঁদের লেবু চা খাওয়াই উচিত, আবার অনিদ্রা রোগীদের চা পানের পরিবর্তে তুলসী, ব্রাহ্মী যোগ করে সেবন যথেষ্ট উপকারী।

প্রমেহ (সুগার) রোগীর চা
এক্ষেত্রে চিনি ছাড়া চা যেমন সেবনীয় পাশাপাশি ত্রিফলা ও ত্রিকটু সমপরিমাণ মিশিয়ে একসঙ্গে রেখে দিন।
চা তৈরির সময় অল্প পরিমাণে মিশিয়ে সেবন করলে যথেষ্ট উপকার হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আয়ুশ ক্বাথ
করোনা আবহে দেশ জুড়ে অনাক্রমতা অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে আয়ুশ ক্বাথ এক অন্য মাত্রায় পরিচিতি পেয়েছে, পাশাপাশি অনেকেই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে চায়ের পরিবর্তে আয়ুশ ক্বাথকেই অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। এই আয়ুশ ক্বাথ হল আয়ুর্বেদের চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজের মিশ্রণ, যা ভারত সরকারের আয়ুশ মন্ত্রালয়ের বিশেষ গবেষণালব্ধ তথ্যাদির উপর ভিত্তি করে নির্বাচিত হয়েছে। আয়ুশ ক্বাথে তুলসী ৪ ভাগ, দারুচিনি ২ ভাগ, আদা শুট ২ ভাগ ও গোলমরিচ ১ ভাগ বর্তমান।

সর্দি-কাশি ও স্বরভঙ্গে আদা তুলসী চা
তুলসী চায়ের গুণাগুণ সম্বন্ধে প্রায় অধিকাংশ মানুষই অবগত৷ তবু বলে রাখি তুলসী ও আদার চা বিশেষ করে সর্দি-কাশি ও স্বরভঙ্গে এক অত্যন্ত কার্যকর। যা স্বরযন্ত্রের পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বজায় রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
খিটখিটে মেজাজ, অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন বা দুশ্চিন্তা করতে করতে মনোবল ভেঙে পড়ছে এই সকল সমস্যার ভুক্তভোগীরা চা-এ রাখুন তুলসীপাতা, যষ্টিমধু, ব্রাহ্মী।
ফল পাবেন হাতেনাতে। কারণ আয়ুর্বেদ মতে উক্ত ভেষজ সমূহ মধ্যে রসায়নের অন্তর্ভুক্ত যা মানসিক স্থিরতা বৃদ্ধিতে কার্যকর। তবে নিয়মিত এটি সেবন করতে হবে, কয়েকদিন খেয়েই হাল ছেড়ে দিলে চলবে না কিন্তু।

আরোগ্য চা
সদ্য রোগমুক্তি হয়েছে কিন্তু দেহে বল এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই বা মুখে অরুচি ইত্যাদি উপসর্গের ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে গিলোয় (গুড়ুচী, গুলঞ্চ) চা এক অব্যর্থ পানীয়।
১ চামচ পরিমাণমতো গুলঞ্চ চূর্ণ জলে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন।
পরিমাণমতো গুড় মিশিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় পনেরো দিন খান।

অম্বল ও অজীর্ণ রোগীদের চা
যাঁরা হামেশায় অম্বল ও অজীর্ণ সমস্যায় ভুগছেন আবার চা পানের নেশাও রয়েছে তাঁরা মৌরি, জোয়ান, তেজপাতা মিশিয়ে মশলা মতো করে কাচের পাত্রে রেখে দিন।
চায়ের সঙ্গে পরিমাণমতো মিশিয়ে সেবন করুন।

কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ত্রিফলার চা
একদিকে যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা বা চা পান ছাড়া যাঁদের প্রকৃতির বেগ আসতে বিলম্ব হয় তাঁরা ত্রিফলা চা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
এটি একদিকে যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অন্যদিকে শরীরের পক্ষে যথেষ্ট উপকারী।

লেখক: আয়ুর্বেদ মেডিকেল অফিসার (উত্তর চণ্ডীপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মানিকচক, মালদা)

Skip to content