গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অমরেন্দ্রনাথ দত্ত।
অমরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাড়া নেওয়া ‘ক্লাসিক থিয়েটারে’ ‘দেলদার’ অভিনীত হওয়ার পর অমরেন্দ্রনাথ তাঁর ‘শ্রীকৃষ্ণ’ গীতিনাট্য এবং ‘মজা’ নামে একটি প্রহসন বেশ কয়েক দিনের জন্য অভিনয় করালেন। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণকান্তের উইলের’ নাট্যরূপ দিলেন গিরিশচন্দ্র ‘ভ্রমর’ নাম দিয়ে। সেই নাটক ক্লাসিক থিয়েটারে জমিয়ে অভিনীত হয়েছিল। এই নাটকের মধ্যেই বারুণী পুকুর ও পোস্ট অফিসের দুটি দৃশ্য লিখেও দিয়েছিলেন গিরিশচন্দ্র।
গিরিশ চন্দ্রের ‘পাণ্ডব গৌরব’ নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় এই ক্লাসিক থিয়েটারে ১৯০০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথম রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন হরি ভূষণ ভট্টাচার্য (দণ্ডী), গিরিশচন্দ্র ঘোষ (কঞ্চুকী), মহেন্দ্রলাল বসু (ভীষ্ম), অমরেন্দ্রনাথ দত্ত (ভীম), প্রমদা সুন্দরী (শ্রীকৃষ্ণ), হরিমতি (কুন্তি), ভূষণ কুমারী (রুক্মিণী), তিনকড়ি দাসী (সুভদ্রা), গোলাপ সুন্দরী (দ্রৌপদী), কুসুমকুমারী (উর্বশী), টুকুমণি (উত্তরা)।
আরও পড়ুন:
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৪৫: অবশেষে গিরিশচন্দ্র যোগ দিলেন নাট্য অভিনেতা অমরেন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত ক্লাসিক থিয়েটারে
রিভিউ: মহাকাশ বিদ্ধ করা রকেটের মতোই শক্তিশালী মাধবনের ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি এফেক্ট’
এই নাটকের সংগীত শিক্ষক ছিলেন জানকীনাথ বসু। নৃত্য শিক্ষক ছিলেন নৃপেন্দ্রচন্দ্র বসু আর মেকআপের দায়িত্বে ছিলেন আশুতোষ পালিত। ‘পাণ্ডব গৌরব’ গিরিশচন্দ্রের সুবিখ্যাত পৌরাণিক নাটক। এই নাটকের অভিনয় ক্লাসিক থিয়েটার দেশব্যাপী গৌরব লাভ করেছিল। নাটকের চতুর্থ অঙ্কে গিরিশচন্দ্র ভীষ্মের মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন ‘মায়ার সংসারে ধর্মমাত্র ধ্রুবতারা’। সেই ধর্মের আবার সার ধর্ম ‘আশ্রিত রক্ষণ’। এটাই হচ্ছে নাটকের ভিত্তি।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৭: অ্যাঁ, বলো কী নন্দলাল…!
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১০: পর্ব-১০: কী উপহার সাজিয়ে দিলে…
ব্যাসদেবের মহাভারতে অবশ্য দণ্ডীর উপাখ্যান নেই। ‘দণ্ডী পর্ব’ বলে একটি পৃথক গ্রন্থ আছে। সেখান থেকে গিরিশচন্দ্র ঘোষ তাঁর নাটকের উপাদান গ্রহণ করেছিলেন। গিরিশচন্দ্র কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বে নাটকীয় ঘটনার কাল নির্দেশ করেছেন। এই কাল নির্দেশ তাঁর নাটকত্ব জ্ঞানের বিশেষ পরিচয়ক। দু’ চারজন ছাড়া ভারতের সকল বিশিষ্ট রাজাই কৌরব পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন। পাণ্ডপক্ষে দু’ চারজন সহায়। আর ভরসা হল ধর্মবল এবং শ্রীকৃষ্ণ।
আরও পড়ুন:
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১৩: সাগর দীঘির ধারে হিরণ্যগর্ভ শিবমন্দির ও মধুপুর ধাম
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৮: পার্ক, ইট, এঞ্জয়
এই সংকট সময়ে ঘটনাচক্রে শ্রীকৃষ্ণকেও শত্রু হয়ে উঠতে হল। যিনি এই বৈরিতার মূলে তিনি আবার শ্রীকৃষ্ণের ভগ্নি সুভদ্রা। কিন্তু পান্ডবদের বল ধর্ম আর ভরসা যে শ্রীকৃষ্ণ তিনিই আবার শত্রু হয়ে উঠলেন। এরই সঙ্গে সাংঘাতিক যুদ্ধে পান্ডবগনের প্রাণান্তিক পণ। ঘটনার সংঘর্ষে, ঘাত প্রতিঘাতে, হৃদয় দ্বন্দ্বে এবং চরিত্র সৃষ্টিতে গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘পাণ্ডব গৌরব’ এক অপূর্ব সৃষ্টি তা নিঃসন্দেহে বলা চলে।—চলবে।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।