![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/12/Girish-Chandra-Ghosh.jpg)
গিরিশচন্দ্র ও বঙ্কিমচন্দ্র।
প্রখ্যাত নট অমরেন্দ্রনাথ দত্তের উৎসাহে ও অনুরোধে গিরিশচন্দ্র ঘোষ আবার ‘মৃণালিনী’ নাটকের অভিনয় করবার জন্য তৈরি হলেন। গিরিশচন্দ্র কর্তৃক নাট্যকারে পরিবর্তিত বঙ্কিমচন্দ্রের ‘মৃণালিনী’ এর আগেই গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে অভিনীত হয়েছিল ১৮৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ার। সেখানে গিরিশচন্দ্র ঘোষ ছিলেন পশুপতির চরিত্রে আর ঋষিকেশের ভূমিকায় ছিলেন অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। গ্রেট ন্যাশনাল থেকে পান্ডুলিপি পেয়ে বেঙ্গল থিয়েটারেও উচ্চ প্রশংসার সঙ্গে বহু রজনী মৃণালিনী অভিনীত হয়েছিল।
এ বার অমরেন্দ্রনাথ দত্তের বেঙ্গল থিয়েটার থেকে মৃণালিনীর খাতা আনিয়ে নিয়েছিলেন। গিরিশচন্দ্রকে এবার বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি। তথাপি একটা নতুনত্বের জন্য লক্ষণ সেনের রাজসভা, মুসলমানের ভয়ে লক্ষণ সেনের গুপ্তদ্বার দিয়ে পলায়ন, গিরিজা ও দ্বিগবিজয়ের প্রেমালাপ প্রভৃতি কয়েকটি দৃশ্য এবং কয়েকটি নতুন গান সংযোজিত করেছিলেন গিরিশচন্দ্র।
১৯০১ সালের ২৬ জুলাই ক্লাসিক থিয়েটারে মৃণালিনী প্রথম অভিনীত হয়। প্রথম দিনের রাত্রিতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ (পশুপতি), অঘোরনাথ পাঠক (ঋষিকেশ), অমরেন্দ্রনাথ দত্ত (হেমচন্দ্র), নিপেন্দ্র চন্দ্র বসু (দ্বিগবিজয়), নটবর চৌধুরী (লক্ষণ সেন), কিরণমালা (মৃণালিনী), কুসুমকুমারী( গিরি জয়া) প্রমোদা সুন্দরী (মনোরমা) প্রমুখ।
১৯০১ সালের ২৬ জুলাই ক্লাসিক থিয়েটারে মৃণালিনী প্রথম অভিনীত হয়। প্রথম দিনের রাত্রিতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ (পশুপতি), অঘোরনাথ পাঠক (ঋষিকেশ), অমরেন্দ্রনাথ দত্ত (হেমচন্দ্র), নিপেন্দ্র চন্দ্র বসু (দ্বিগবিজয়), নটবর চৌধুরী (লক্ষণ সেন), কিরণমালা (মৃণালিনী), কুসুমকুমারী( গিরি জয়া) প্রমোদা সুন্দরী (মনোরমা) প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Ramakrishna.jpg)
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৪৮: রামকৃষ্ণ এগোলেন দক্ষিণ দিকের রাস্তায়, এদিকে গিরিশচন্দ্রের মনে তীব্র হয়ে উঠল এক প্রবল আকর্ষণ
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/12/jayrambati-Jagadhatri-pujo-3.jpg)
পরিযায়ী মন, পর্ব-১৭: জয়রামবাটির জগদ্ধাত্রীপুজো
মহাসমারহে মৃণালিনীর সর্বাঙ্গ সুন্দর অভিনয় হয়েছিল। তিনটি বড় ঘোড়ায় চেপে মুসলমানদের রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করতে হতো। সেটা দেখবার মতো ছিল। প্রথম দুই রাত্রি অভিনয় করে কোন বিশেষ কারণে গিরিশচন্দ্র পশুপতির ভূমিকা পরিত্যাগ করেন। তাঁর সুযোগ্য ছেলে সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ (দানি বাবু যাঁর নাম) তৃতীয় অভিনয়ের রজনী থেকে পশুপতির ভূমিকায় রঙ্গমঞ্চ অবতীর্ণ হন।
যে বিশেষ কারণে গিরিশ চন্দ্র পশুপতির ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়ালেন সেটা হল, এইরকম চতুর্থ অংকের শেষ দৃশ্যে মুসলমানদের দ্বারা পশুপতি গৃহে আগুন লাগানো দৃশ্য ছিল। পশুপতি অষ্টভুজা মূর্তি বিসর্জন করবার জন্য দেবী মন্দিরে এসেছেন। মনোরমা ভস্মিভূত।
যে বিশেষ কারণে গিরিশ চন্দ্র পশুপতির ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়ালেন সেটা হল, এইরকম চতুর্থ অংকের শেষ দৃশ্যে মুসলমানদের দ্বারা পশুপতি গৃহে আগুন লাগানো দৃশ্য ছিল। পশুপতি অষ্টভুজা মূর্তি বিসর্জন করবার জন্য দেবী মন্দিরে এসেছেন। মনোরমা ভস্মিভূত।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Sundarban.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৪: সুন্দরবনের রাজমাতা দেবী নারায়ণী
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/samay-Updates_Health.jpg)
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?
একদিকে পশুপতির অন্তরে যেমন অগ্নি জ্বলছে অন্যদিকে বাইরেও চারিদিকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছুটছিল। স্টেজ ম্যানেজার উপর থেকে তুবড়ি নিম্ন মুখ করে সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের খেলা দেখাচ্ছিলেন। পশুপতির ভূমিকায় গিরিশচন্দ্র পাগড়ি পড়তেন। মাথা গরম হওয়ার আশঙ্কায় তার ভিতরের চাঁদি খুব পাতলা কাপড়ে প্রস্তুত করা হতো।
দ্বিতীয় রজনীতে তুবড়ির আগুন সেই চাঁদির উপর পড়ায় মস্তকের চামড়ার স্থানে স্থানে দগ্ধ হয়ে ফোসকা পড়ে যায়। গিরিশচন্দ্র কাতর হয়ে স্টেজ ম্যানেজারকে নিবৃত্ত হতে বললেন। কিন্তু দর্শকদের আনন্দ কোলাহল এবং করতালি ধ্বনিতে তাঁর কাতরোক্তি স্টেজ ম্যানেজারের কানে গিয়ে পৌঁছয় না। সমানভাবে তুবড়ির খেলা চলতেই থাকে। অসীম ধৈর্যে গিরিশচন্দ্র তা সহ্য করে অভিনয় সমাপ্ত করলেন।
দ্বিতীয় রজনীতে তুবড়ির আগুন সেই চাঁদির উপর পড়ায় মস্তকের চামড়ার স্থানে স্থানে দগ্ধ হয়ে ফোসকা পড়ে যায়। গিরিশচন্দ্র কাতর হয়ে স্টেজ ম্যানেজারকে নিবৃত্ত হতে বললেন। কিন্তু দর্শকদের আনন্দ কোলাহল এবং করতালি ধ্বনিতে তাঁর কাতরোক্তি স্টেজ ম্যানেজারের কানে গিয়ে পৌঁছয় না। সমানভাবে তুবড়ির খেলা চলতেই থাকে। অসীম ধৈর্যে গিরিশচন্দ্র তা সহ্য করে অভিনয় সমাপ্ত করলেন।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Samay-Updates_Cartoon-1.jpg)
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৫: মন বলে আমি মনের কথা জানি না!
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/07/sarada-maa.jpg)
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২২: ঠাকুর ও মা সারদার সংসার
অভিনয় শেষে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাঁর দগ্ধ পোশাক ও মাথার কেশে বহু ফোস্কা দেখে যেমন ব্যথিত হলেন তেমনি বিষ্ময়ের সঙ্গে তাঁরা গিরিশচন্দ্রের অটল ধৈর্যের পুনঃ পুনঃ প্রশংসা করতে লাগলেন। তৃতীয় রজনীতে গিরিশচন্দ্র কিন্তু আর এই অগ্নিপরীক্ষায় অগ্রসর হতে সম্মত হলেন না।
মৃণালিনীর জন্য গিরিশচন্দ্র বেশ কয়েকটি নতুন গান বেঁধে দিয়েছিলেন। যার মধ্যে একটি গান হল “মন বায়ু পরাজিত তব গমনে /কার অন্বেষণে মন রত ভ্রমণে”। আরেকটি গান “তুই তুই যা সরে / তোরে মালা দিচ্ছি রাগ করে/ তুই মার ধরে, কে সরে প্রাণ ধরে।” এখানে একটি কথা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য যে, গিরিশচন্দ্র কিন্তু যখন গ্রেট ন্যাশনাল এর জন্য” মৃণালিনী” নাটক আকারে পরিবর্তিত করেন, তখন পর্যন্ত তিনি কিন্তু নিজে কোন নাটক রচনা করেননি।—চলবে।
মৃণালিনীর জন্য গিরিশচন্দ্র বেশ কয়েকটি নতুন গান বেঁধে দিয়েছিলেন। যার মধ্যে একটি গান হল “মন বায়ু পরাজিত তব গমনে /কার অন্বেষণে মন রত ভ্রমণে”। আরেকটি গান “তুই তুই যা সরে / তোরে মালা দিচ্ছি রাগ করে/ তুই মার ধরে, কে সরে প্রাণ ধরে।” এখানে একটি কথা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য যে, গিরিশচন্দ্র কিন্তু যখন গ্রেট ন্যাশনাল এর জন্য” মৃণালিনী” নাটক আকারে পরিবর্তিত করেন, তখন পর্যন্ত তিনি কিন্তু নিজে কোন নাটক রচনা করেননি।—চলবে।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।