গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি।
মিনার্ভা থিয়েটার যখন সবে তৈরি হয়েছে তখন নাট্যশালার নাম হিসেবে তিনটি নাম প্রস্তাবিত হয়েছিল। ক্লাসিক, মিনার্ভা ও আনন্দময়ী থিয়েটার। পরে অবশ্য সর্বসম্মতিক্রমে মিনার্ভা নামটি গৃহীত হয়। ইতিমধ্যে এমারেল্ড থিয়েটার থেকে পন্ডিত হরিভূষণ ভট্টাচার্য এবং সিটি থিয়েটার থেকে শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (রানুবাবু) এসে গিরিশচন্দ্রের সঙ্গে যোগদান করেন। খুব ধুমধাম সহকারে মিনার্ভা থিয়েটারের দ্বার উদঘাটিত হল। দিনটি ছিল ১৮৯৩ সালের ২৮ জানুয়ারি। শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন গিরিশচন্দ্র। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার যে, এই ম্যাকবেথ কিন্তু দর্শকরা একেবারেই গ্রহণ করতে পারলেন না।
গিরিশচন্দ্রকে অন্য কথা ভাবতেই হল। তখন তিনি ঠিক করলেন যে, তিনি দর্শক টানবার জন্য পঞ্চরং-এর নাটক লিখবেন। তেমনই এক নাটক হল, ‘সপ্তমীতে বিসর্জন’। মিনার্ভা থিয়েটার এই নাটক প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল ১৮৯৩ সালের ৭ অক্টোবর। প্রথম দিনের অভিনয় রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা হলেন মামার চরিত্রে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি, গোসাইয়ের চরিত্রে হরিভূষণ ভট্টাচার্য, বলরামের চরিত্রে দেবকান্ত বাগচী, বিরাজের চরিত্রে তিনকড়িদাসী।
আরও পড়ুন:
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩৭: মিনার্ভাতে প্রথম কৌতুকপূর্ণ গীতিনাট্য অভিনীত হল গিরিশচন্দ্র রচিত নির্দেশিত ‘আবু হোসেন’ নাটক
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩: গায়ে আমার পুলক লাগে
পুজোর বাজারে কাপ্তেন বাবুদের অবস্থা বর্ণনা করে এই সামাজিক শ্লেষাত্মক পঞ্চরং খানি গিরিশচন্দ্র লিখেছিলেন। ইংরেজিতে যাকে এক্সট্রাভেগাঞ্জা বলে, পঞ্চরং হল সেই প্রকৃতির। বাস্তব সংসারের ঘটনা ও চরিত্র নিয়ে এগুলি রচিত হয়। এমন বিদ্রুপাত্মক প্রহসনের গল্প ও চরিত্র সম্ভব রাজ্যের প্রান্ত সীমা থেকেই আহরণ করা হয়ে থাকে। দর্শকের এমন পঞ্চরং অত্যন্ত উপভোগ করতেন। তাই ‘সপ্তমীতে বিসর্জন’ এক সময় সাড়া ফেলে দিয়েছিল। প্রধান শিল্পীদের অভিনয় ছিল জমজমাট। এর সাফল্য দেখে গিরিশচন্দ্র মিনার্ভার জন্য একাধিক পঞ্চরং লিখেছিলেন।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৮: চলতে চলতে ‘সাহেব বিবি ও গোলাম’
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৫: গায়ের জামা হাওয়ায় উড়বে বলে দেহের সঙ্গে ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখতেন
মিনার্ভা থিয়েটারে গিরিশচন্দ্রের ‘বড়দিনের বকশিস’ পঞ্চরং খানি প্রথম অভিনীত হয়েছিল ১৮৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর। প্রথম অভিনয় রজনীতে অভিনয় করেছিলেন; মন্ত্রীর চরিত্রে হরিভূষণ ভট্টাচার্য। গয়ারামের চরিত্রে অঘোরনাথ পাঠক, মিস্টার ডস-এর চরিত্রে সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ (গিরিশ পুত্র দানীবাবু), নজরের চরিত্রে শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, থিয়েটার ম্যানেজারের চরিত্রের অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি, গুলজারের চরিত্রে তিনকড়ি দাসী, ফুলওয়ালি চরিত্রে ভূষণ কুমারী, লেবুওয়ালির চরিত্রে শরৎকুমারী, মিশিবাবার চরিত্রে হিঙ্গনবালা।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৪: মাথায় চোট মানেই কি ইন্টারনাল হেমারেজ?
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-২: আইজেনস্টাইন, যুদ্ধজাহাজ ও মন্তাজ
বড়দিন উপলক্ষে ‘বেকুবের একজাই’ (প্যারাডাইস অফ ফুলস) নাম দিয়ে প্রথমে গিরিশি পঞ্চরংটি লিখেছিলেন। কিন্তু কোন বিশেষ কারণে পুলিশের তরফ থেকে অভিনয়ের জন্য ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। বড়দিনের তখন ৫-৬ দিন বাকি, গিরিশচন্দ্র তাড়াতাড়ি করে কতটা কেটে ছেঁটে, কিছুটা বাড়িয়ে ‘বড়দিনের বখশিস’ নাম দিয়ে পঞ্চরংখানি দাঁড় করালেন। পুলিশের ছাড়পত্র মিলল। তখন সগৌরবে মিনার্ভা থিয়েটারে অভিনীত হল ‘বড়দিনের বখশিস’।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।