গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি।
নবনির্মিত মিনার্ভার থিয়েটারে গিরিশচন্দ্র ঘোষ শুরু করেছিলেন ম্যাকবেথ নাটকটি। সেটি ১৮৯৩ সালের ২৮ জানুয়ারি, এ তথ্য পূর্বেই আমি দিয়েছি। কিন্তু এ নাটক তেমন করে জমাতে পারেননি গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তখন তিনি একটি হাসির মনোরঞ্জনমূলক নাটক তৈরি করলেন মিনার্ভা থিয়েটারের জন্য। কৌতুকপূর্ণ গীতিনাট্য হিসেবে মিনার্ভা থিয়েটারে ১৮৯৩ সালের ২৫ মার্চ প্রথম অভিনীত হল গিরিশচন্দ্র ঘোষ রচিত নির্দেশিত ‘আবু হোসেন’ নাটকটি।
প্রথম অভিনয় রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবু হোসেনের চরিত্রে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। হারুন আল রশিদের ভূমিকায় দাশু বাবু। উজিরের ভূমিকায় পদবাবু। মশুরের ভূমিকায় রানুবাবু। প্রথম বৈতালিক অঘোরনাথ পাঠক। রোশেনার চরিত্রে হরি সুন্দরী। বেগমের চরিত্রে বসন্তকুমারী। আবু হোসেনের মায়ের ভূমিকায় গুলফাম হরি। দাইয়ের চরিত্রে তিনকড়ি দাসী। প্রথম সখী কুসুমকুমারী।
আরও পড়ুন:
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩৬: গিরিশচন্দ্রের ‘বিষাদ’ নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় এমারেল্ড থিয়েটারে
বাড়িতেই ৭ ধাপে তৈরি করে ফেলুন অ্যালো ভেরা পাতার নির্যাস থেকে জেল
আরব্য উপন্যাসের একটি গল্প অবলম্বনে গিরিশচন্দ্র সম্পূর্ণ নতুন ভঙ্গিতে এই কৌতুক পূর্ণ গীতিনাট্যখানি রচনা করেছিলেন। গিরিশচন্দ্রের এই অপূর্ব রচনার চাতুর্যের উপর সঙ্গীতাচার্য শ্রীযুক্ত দেবকণ্ঠ বাগচি এবং সুপ্রসিদ্ধ নৃত্য শিক্ষক শরৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষভাবে নতুনত্ব প্রকাশ করেছিলেন। আবু হোসেন নতুন ধরণের নাটক হয়ে নাট্যমোদীদের আনন্দ প্রদান করেছে। দাই ও মসুরের দ্বৈত সংগীত ও নৃত্যের মৌলিকতায় এবং চমৎকারিত্বের তিনকড়ি দাসী ও রানু বাবু রঙ্গমঞ্চে এক অপূর্ব রসের বন্যা ছুটিয়ে দিয়েছিলেন। আবু হোসেনের অনুকরণে এ পর্যন্ত রঙ্গালয়ে বেশ কিছু গীতিনাট্যের সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু আবু হোসেনের ধারে কাছে কেউ যেতে পারেনি ।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১: আমি ‘কেবলই’ স্বপন…
স্বাদে-আহ্লাদে: আম কাসুন্দি প্রিয়? বানানোর সময় এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখবেন
এই গীতিনাট্যের গানগুলি যেমন চটকদার তেমনি কবিত্বপূর্ণ। দুই একটা গানের উল্লেখ করা যাক। আবু হোসেনের ঘুম ভাঙ্গানোর ছলে সখি গান গাইছেন “জুটলো অলি ফুটলো কত ফুল /দোলে হায় ধীর পবনে সৌরভে আকুল।” রোশেনার প্রতি সখিগণ গান গাইছেন “একে লো তোরা ভরা যৌবন/ রসে করেছ অবশ, আবেশে ঢলে নয়ন।”
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৩: ‘ওই দেখ, রাহুল দেব বর্মণের বাবা হেঁটে যাচ্ছেন’
ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৫: চেয়ারে বসতে গিয়ে নজর গেল বিছানায়, দেখি সেই পুতুলের সবুজ চোখ দুটো আমাকে দেখছে
আবু হোসেনের ভূমিকায় অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি দেশব্যাপী অত্যন্ত সুযশ অর্জন করেছিলেন। এই তরল হাস্যরসাত্বক গীতিনাট্যের ভিতরেও গিরিশচন্দ্রের প্রতিভার বিকাশ পেয়েছে পাগলাগারদের দৃশ্যে। সাহিত্যিক ঐতিহাসিক বৈজ্ঞানিক প্রভৃতি পাগলদের চিত্র বিশেষভাবে উপভোগ্য হয়েছে। আবু হোসেনের অভিনয় মিনার্ভা থিয়েটার সর্বসাধারণের কাছে যেমন সমাদৃত হয়েছিল ঠিক তেমনি অজস্র অর্থাগমে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছিল মিনার্ভা থিয়েটারটি।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।