গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দু শেখর মুস্তাফি।
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের প্রতিভা চারিদিকে ছড়ানো। তিনি নাটক লিখছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন, প্রযোজনা করছেন, অভিনয় করছেন। সবকিছুতেই তিনি তাঁর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ‘মুকুল মুঞ্জরা’ নাটকটি মিনার্ভা থিয়েটারে প্রথম অভিনীত হয়েছিল ১৮৯৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অচ্যুতানন্দের ভূমিকায় অঘোরনাথ পাঠক, মুকুলের চরিত্রে সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ (যাকে আমরা জানি বাবু বলে চিনি), বরুণচাঁদের চরিত্রে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি, ভজনরামের ভূমিকায় বিনোদবিহারী সোম, তারার ভূমিকায় তিনকড়িদাসী, মুঞ্জরার চরিত্রে কুসুমকুমারী, চামেলি চরিত্রে হরি সুন্দরী, পান্নার ভূমিকায় শ্রীমতি হরিদাসী।
‘মুকুল মুঞ্জরা’ আদিরসাত্মক দৃশ্যকাব্য। প্রকৃত প্রেম কাকে বলে, প্রকৃত প্রেমিক প্রেমিকার লক্ষণ কী, কোনটাই বা প্রেমের অদ্ভুত শক্তি গিরিশচন্দ্র তাঁর অসামান্য কবি প্রতিবায় সেই ছবি এই নাটকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। প্রেমালোকে জড়েরও পুঞ্চিত হৃদয় কমল যে পূর্ণবিকশিত হতে পারে, এই নাটকে মুকুলের চরিত্রে তা অতি সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। তারা, যুবরাজ এবং মুঞ্জরার প্রেম চরিত্র বড়ই বৈচিত্র্যময়। বিলিতি আদর্শে গঠিত উপন্যাসের প্রেমিক-প্রেমিকার চিত্র এটি নয়, খাঁটি এদেশের জিনিস।
আরও পড়ুন:
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩৩: ভক্তের বাড়িতে ভগবত প্রসঙ্গ সংকীর্তনের পর সেই স্থানের ধুলো গায়ে মাখতে শুরু করলেন রামকৃষ্ণদেব
ষাট পেরিয়ে, পর্ব-১৫: এখন থেকেই যত্ন নিন কিডনির, গুরুত্ব দিন এ সব বিষয়ে
মেদ নিয়ে দুশ্চিন্তা? চিন্তা নেই, খেলাচ্ছলেই সুঠাম এবং সুগঠিত দেহের অধিকারী হয়ে উঠতে পারেন
এই নতুন নাটকের প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রীর নিখুঁত ছবিই দেখা যায়। কিন্তু এই নাটকে পাত্র-পাত্রী গণ কি আকৃতি প্রকৃতি, কি বয়স হিসেবে এমন সামঞ্জস্য রক্ষা করেছিলেন যে এর অভিনয় সাফল্যে কোন চরিত্রেরই উঁচু-নিচ বিচার করার সুযোগ ছিল না। প্রত্যেকে নিজে নিজের চরিত্রে অতিকৃতিত্বের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। বরুণ চাঁদ, ভজনরামের হাস্যরস দর্শক সাধারণের কাছে অত্যন্ত মুখরোচক হতে পেরেছিল বহুদিন ধরে।
আরও পড়ুন:
বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-১৫: উচ্চমানের জমি বাছাইয়ে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভূমির শ্রেণিবিভাগ জানা খুবই জরুরি /২
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১২: দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ঢুকে পড়লাম নিকটবর্তী একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১২: স্ট্যানলি ম্যাথুজ— একজন কিংবদন্তি, লড়াই আবেগ আর মেহনতী জনতার বন্ধু
তাছাড়া এই নাটকে “ছড়ায় এত ভালোবাসা কোথায় পায়”, “বিলিয়ে দিতে চাও কি প্রাণ সই”, “কেন ফুল ফোটে কে জানে” প্রভৃতি এই নাটকের গানগুলি সংগীত প্রিয় রসিকদের এক সময় মুখে মুখেফিরত। সৌন্দর্য সৃষ্টির বিকাশে এই নাটকটি গিরিশচন্দ্রের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক গুলির মধ্যে যথারীতি স্থান পেয়েছে।
কুসুমকুমারী ও তিনকড়ি দাসী।
এই নাটকের চরিত্রে ঘটনা বৈচিত্র্যে, নাট্যমঞ্চের প্রকৃত ফলোপদায়ক কার্যকারিতায় পরিপূর্ণ। ভাষা, ভাব, শিল্প সৌন্দর্য, কবিত্ব, কাব্যের করণীয় বিষয় মাত্রের সবিশেষ বিকাশ। মুকুল মুঞ্জরায় গিরিশবাবুকে অন্যান্য নাট্যকার থেকে অনেক স্বতন্ত্র করে ফেলেছে। মুকুল মঞ্জুরা গিরিশবাবুকে সহজে বুঝে নেওয়া যায়। এর বাক বিন্যাসের ঘাতপ্রতিঘাতের এবং কল্পনা উদ্ভাবকতায় উচ্চতম আদর্শ আমরা লক্ষ্য করেছি। এই মিলানান্তক নাটকটি উচ্ছ্বসিত উদ্ভাসিত হয়েছে। মানব চরিত্রের গভীরতা অনুভব করবার শক্তি গিরিশবাবু কীভাবে লাভ করেছিলেন তা আমরা এই ‘মুকুল মুঞ্জরা’ নাটকে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করতে পেরেছি।
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।