শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


গিরিশচন্দ্র ঘোষ।

গিরিশচন্দ্রের ‘রাবণবধ’ নাটকাভিনয় যখন খুব প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এবং পৌরাণিক নাটকে সাধারণের আগ্রহ দর্শন করতে পেরে গিরিশচন্দ্র ঘোষ উৎসাহিত হয়ে তখন তিনি তাঁর তৃতীয় নাটক ‘সীতার বনবাস’ রচনা করলেন। ন্যাশনাল থিয়েটারে এই নাটকটি প্রথম অভিনীত হয়।

অমৃতলাল বসু।

প্রথম অভিনয় রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীরামচন্দ্রের ভূমিকায় গিরিশচন্দ্র ঘোষ, লক্ষণের চরিত্রে মহেন্দ্রলাল বসু, ভরত অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়, বশিষ্ট নীলমাধব চক্রবর্তী, বাল্মীকি অমৃতলাল মিত্র, দুর্মুখ অমৃতলাল বসু, সুমন্ত্র অতুল কৃষ্ণ মিত্র, অশ্বরক্ষক অঘরনাথ পাঠক। লবের ভূমিকাতে বিনোদিনী, কুশের চরিত্রে কুসুমকুমারী, সীতা কাদম্বিনী, অলিক্ষরা বনবিহারিনী, নিকষা ক্ষেত্রমণি প্রমুখ শিল্পী।
ভূমিকালিপির যে পরিচয় আমরা পেলাম, তার থেকে বুঝতে পারছি যে ডাকসাইটে অভিনেতা ও অভিনেত্রীরাই এই নাটকটিতে প্রথম রজনীতে অভিনয় করেছিলেন। প্রত্যেক নতুন নাটকের প্রথম অভিনয় রজনীতে দেখতে পাওয়া যায় সুশিক্ষাদান সত্ত্বেও ছোট ছোট ভূমিকাগুলো অল্প শক্তি বিশিষ্ট অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা ঠিকমতো অভিনয় করতে পারেন না। কিন্তু এই নাটকের ক্ষেত্রে দেখা গেল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূমিকাতে যাঁরা অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাঁরাও কিন্তু অত্যন্ত দাগ কাটতে পেরেছিলেন দর্শকের মনে।
আরও পড়ুন:

পর্ব-২৭: গিরিশচন্দ্রের ‘রাবণ বধ’-এ সবার অভিনয় দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৪: ওয়ার্কশপ থেকে হঠাৎ উধাও অভিনেত্রী সবিতা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাগানে, আর দূর দাঁড়িয়ে দেখছেন পরিচালক

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৩: বাবা বিশ্বনাথের দরবারে

সীতার বনবাস বিষয়টি রামায়ণের মধ্যে সবচেয়ে করুণরসাত্মক। তার উপর গিরিশচন্দ্রের রচনাকৌশল ও সম্প্রদায়ের পূর্ণ শক্তি সম্মেলনে অভিনীত হওয়ায় নাটকটি কি শিক্ষিত কি অশিক্ষিত সব শ্রেণির দর্শকেরই মনোরঞ্জন করতে সমর্থ হয়েছিল। রাম এবং লক্ষণের ভূমিকায় গিরিশচন্দ্র ও মহেন্দ্রলাল বসু এত সুন্দর অভিনয় করেছিলেন যে, প্রবীণ নাট্যমোদীদের এই নাটকের অভিনয়ের প্রশংসা বিভিন্ন পত্রিকায় পাওয়া যায়। লব ও কুশের চরিত্রে বিনোদিনী ও কুসুমকুমারী এই নাটকটিতে আরও মধুর আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন। বারবার এঁদের অভিনয় দেখেও দর্শকমন্ডলীর সাধ মিটতো না। মহিলাদের জন্য আগে থেকেই ন্যাশনাল থিয়েটারের দোতলার একপাশে চিক দিয়ে ঘেরা ছিল এবং এইগুলো প্রায়ই খালি পড়ে থাকত।

বিনোদিনী

‘রাবণবধ’ নাটক থেকে স্ত্রী দর্শক সংখ্যা কিছু কিছু করে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ‘সীতার বনবাস’ এর শতমুখে প্রশংসা শুনে শুনে মহিলাদের সংখ্যা প্রত্যেক সপ্তাহে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমন বৃদ্ধি দেখে স্বত্বাধিকারী প্রতাপচন্দ্র জহুরি মহাশয় স্ত্রীলোকের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। ফলত ‘সীতার বনবাস’ অভিনয় করে ন্যাশনাল থিয়েটার যেমন অজস্র সুখ্যাতি লাভ করেছিল, সেইসঙ্গে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৮: খোকা নয়, খুকি নয়

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২০: মেলা থেকে ফিরে ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’

বাড়তি মেদ ঝরবে মাত্র ৭ মিনিটেই, জেনে নিন ৭ দিনে ছিপছিপে হয়ে ওঠার ৭ সহজ টোটকা

ভারতী পত্রিকাতে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সীতার বনবাস নাটকের একটি দীর্ঘ সমালোচনা লিখেছিলেন; ‘গিরিশবাবু রচিত পৌরাণিক দৃশ্য কাব্য গুলিতে তাঁহার কবিত্বশক্তির যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। তিনি তাঁহার বিষয়গুলির সৌন্দর্য ও মহত্ব কবির ন্যায় বুঝিয়াছেন এবং তাহা অনেক স্থানে কবির ন্যায় প্রকাশ করিয়াছেন।

কুসুমকুমারী।

‘সীতার বনবাস’ নাটকটি গিরিশচন্দ্র পূণ্যশ্লোক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে উৎসর্গ করেছিলেন। বিদ্যাসাগর গদ্যে তো সীতার বনবাস লিখেছিলেন। উৎসর্গ পত্রটি এখানে উদ্ধৃত করা হল—
‘‘পূজনীয় শ্রীযুক্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় শ্রীচরণেষু
গুরুদেব দীননাথ,
মাতৃভাষা জানিনা বলা ভালো নয়, মন্দ। মহাশয়ের ‘বেতাল’ পাঠে বুঝিলাম। আচার্য্য! আমার পরীক্ষা গ্রহণ করুন। আমি চিরদিন মহাশয়কে মনে মনে বন্দনা করি।
সেবক শ্রীগিরিশচন্দ্র ঘোষ।”
* নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে (Girish Chandra Ghosh – Actor – Theatre) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content