শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


বেশ কিছুদিন বাদে মিনার্ভা থিয়েটারে যোগদান করলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ এবং সেখানে যোগদান করার পর নতুন নাটক অভিনয়ের আয়োজন করলেন গিরিশ। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ‘সীতারাম’ উপন্যাসটিকে নাটক আকারে পরিবর্তিত করে তিনি শুরু করলেন তাঁর কাজ। মোকদ্দমা প্রভৃতি নিয়ে গিরিশচন্দ্র তখন এত ব্যস্ত ও বিব্রত ছিলেন যে, নতুন করে কোন নাটক লিখবার সময় তিনি পাননি। এক সপ্তাহে তিনি ‘সীতারাম’ উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়ে মহড়া শুরু করে দিয়েছিলেন। ১৩০৭ সালের ৯ আষাঢ় ‘সীতারাম’ নাটক প্রথম অভিনীত হল মিনার্ভা থিয়েটারে।
প্রথম দিনে যে সব শিল্পীরা অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ (সীতারাম), সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ (গঙ্গারাম), অঘোরনাথ পাঠক (চন্দ্রচূড়), প্রিয়নাথ ঘোষ (মৃন্ময়), তিনকড়ি দাসী (শ্রী), সুশীলা বালা (জয়ন্তী), সরোজিনী (নন্দা) প্রমুখ। দু’-চারটি দৃশ্য ছাড়া উপন্যাসের প্রায় সমস্ত দৃশ্য এবং সংলাপ গিরিশচন্দ্র তাঁর নাটকের মধ্যে রেখেছিলেন। নতুন সংযোজিত দৃশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সীতারামের পরিণাম দৃশ্যটি। সেখানে উপন্যাসে এক রকম রয়েছে, গিরিশচন্দ্র আরেকরকম ভাবে করেছেন। যে সহানুভূতি আকর্ষণ নাটকীয় চরিত্র সৃষ্টির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বঙ্কিমচন্দ্রের বর্ণনার মধ্যে তা সম্পূর্ণভাবে সার্থক হতে পারেনি। রূপজ মোহ সীতারামের সর্বনাশের কারণ।
আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব -২৪: ন্যাশনাল থিয়েটারে মধুকবির ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র গিরিশচন্দ্রের নাট্যরূপ মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের

বেশ ধাঁধায় ফেলছে প্লেটলেট, কমলেই সতর্ক হোন, কাউন্ট কত নামলে প্রয়োজন হয় প্লেটলেটের?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৪: আশা-নিরাশা ও ভরসার সে এক অন্য ‘মনের ময়ূর’

বীর সীতারামকে বীরত্বের রমনীয় চিত্র দেখাতে গিয়ে শয়তানিতে মজেছিল কিন্তু মজলেও শয়তানী একেবারে তাঁকে মনুষ্যত্বহীন করতে পারেনি। কিন্তু গিরিশচন্দ্র পরিণাম দৃশ্য উজ্জ্বলভাবে নতুন করে গড়ে তুলেছিলেন। নাটকের এই পরিণাম দৃশ্যে সীতা রামের অন্তর দ্বন্দ্বে দর্শকেরা সীতারামের উপর সম্পূর্ণ সহানুভূতি সম্পন্ন হয়ে উঠেছিলেন এবং চোখের জল ফেলে তাঁরা মঞ্চ ত্যাগ করতেন, এটা বহুবার দেখা গিয়েছে।
সীতারামে প্রত্যেকটি চরিত্র অতি সুন্দরভাবে অভিনীত হয়েছিল। এমনকি ছোট ছোট যে চরিত্রগুলো আছে সেগুলো জীবন্ত হয়েছিল। নাটকের সর্বশেষ দৃশ্যে গিরিশচন্দ্র নামভূমিকায় যে অভিনয় প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন তার কোনও তুলনা নেই। নাটকটির নিখুঁত অভিনয় প্রদর্শনের জন্য গিরিশচন্দ্র অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে শিক্ষাদান করিয়েছিলেন শিল্পীদের। তিনি স্বয়ং নৃত্য গীতে পারদর্শী না হলেও, একজন উচ্চদরের সমাজদার ছিলেন। তাই নাটকগুলির মধ্যে গানে যে সব সুর বা নৃত্য সংযোজিত হতো তার মধ্যে যেগুলি তার মনোমত না হতো সে সব গান বা নৃত্যের ভাব তিনি সবাইকে বুঝিয়ে একটা ব্যবস্থা করে নিতেন। মূল উপন্যাসের সঙ্গে নাটকের পার্থক্য আরেকটা দিক দিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি। সীতারাম মুষ্টিমেয় সৈন্য নিয়ে সূচিব্যূহ তৈরি করে বিশাল সাগরের মতো মুসলমান সৈন্য ভেদ করছেন, সেই সময় শ্রী ও জয়ন্তী গাইছেন ”জয় শিবশঙ্কর ত্রিপুর নিধন কর/ রণে ভয়ংকর! জয় জয় রে।”
আরও পড়ুন:

ইংলিশ টিংলিশ: জানো কি ‘বাজি ফাটানো’ কিংবা ‘মোমবাতি জ্বালানো’র ইংরেজি কী?

বাইরে দূরে: ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-২: ঠিক করলাম উত্তরে ডোর কাউন্টি, মধ্যে মিলওয়াকি, দক্ষিণে গ্রান্ট কাউন্টি—সবই দেখব

সকালটা কচুরি দিয়ে শুরু করতে চান? বাড়িতে চটজলদি বানিয়ে ফেলুন কচুরির তরকারি

গিরিশচন্দ্র এই গানের পরিবর্তে এই গানটি যোজনা করেছিলেন। “ত্রিপুরান্তকারী ভৈরব শূলধারি ভুবন সংহার কারণ হে/ ঊর্ধ্ব বদনে নাশ নাশ রব সৃষ্টি ধ্বংস কর প্রলয় ভৈরব /বব ব্যোম ঘোর রব দশ দিশা গ্রন্থি ভজন হে।” সেই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং সুধা কণ্ঠের গায়িকা সুশীলা বালা এই নাটকে জয়ন্তীর ভূমিকাতে অভিনয় করে খুব নাম করেছিলেন। এই জয়ন্তীর ভূমিকাভিনয়ই সুশীলা বালার প্রতিষ্ঠার মূল। গিরিশচন্দ্র রচিত জয়ন্তীর এই গানটি সেই সময় অত্যন্ত প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল: “উদার অম্বর, শূন্য সাগর, শূন্যে মিলাও প্রাণ”।
আরও পড়ুন:

ঘরের এইসব জায়গায় আয়না রাখছেন নাকি! বিপদ এড়াতে জেনে নিন কী বলছে বাস্তুশাস্ত্র

দশভুজা: দেবীপক্ষের প্রাককালে তিনিই তো দুর্গা…

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৯: ঠাকুরবাড়ির বিয়েতে এমন জাঁকজমক আর হয়নি

মিনার্ভা থিয়েটারে ‘সীতারাম’র যখন অভিনয় চলছে তার পাশাপাশি ক্লাসিক থিয়েটারেও অমরেন্দ্রনাথ দত্ত ‘সীতারামের’ অভিনয় ঘোষণা করেন। সেই সময় উভয় থিয়েটারেই ‘সীতারাম’ অভিনীত হয়েছিল। কিন্তু বলা বাহুল্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ অভিনীত ও পরিচালিত ‘সীতারাম’ দর্শকদের বেশি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল।

Skip to content