নটগুরু গিরিশচন্দ্র ঘোষের ভক্তিরসাত্মক আত্মচরিত নাটক ‘বিল্বমঙ্গল ঠাকুর’। এই নাটক ৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটারে প্রথম অভিনীত ১৮৮৬ সালের ১২ জুন শনিবার। ব্রজভাখার বিখ্যাত কবি নাভাজি ‘ভক্তমাল’ নামে এক ভক্ত কাহিনী কাব্য রচনা করেছিলেন। এটি বাংলায় অনুবাদ করেন লালদাস। ভক্তমাল গ্রন্থে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণবেণ্বা নদীর তীরে কোনও গ্রামে বিল্বমঙ্গল নামে জনৈক স্বভাব লম্পট বাস করতেন। নদীর ওপারে চিন্তামণি নামে এক বারাঙ্গনার প্রতি বিল্বমঙ্গল এতদূর আসক্ত ছিলেন উক্ত বিপ্রের পিতৃশ্রাদ্ধের রাতে, তীব্র কামাবেগ প্রবল হওয়াতে, ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে নৌকার অভাবে, নদীতে ঝাঁপ দিয়ে গলিত মৃতদেহ আশ্রয় করে, চিন্তামণি গৃহে উপস্থিত হন। দ্বার বন্ধ থাকায় প্রাচীরের ঝুলন্ত সাপকে রজ্জুমনে করে তাই ধরে প্রাচীরে উঠে বিল্বমঙ্গল অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বারাঙ্গনার তিরস্কার করেন।
তিরস্কারের জন্য বিল্বমঙ্গলের বৈরাগ্য জাগে এবং তিনি গৃহত্যাগ করেন। সোমগিরি নামে এক গুরুর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করে কৃষ্ণ চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। বছরের শেষে বৃন্দাবন যাত্রাকালে সরোবরে স্নানরতা বণিক পত্নীকে দেখে বিল্বমঙ্গল এর আবার কামনা জেগে ওঠে। বিল্বমঙ্গলের প্রার্থনা পূরণ করতে এগিয়ে আসেন বণিকপত্নী। তখন অনুতপ্ত বিল্বমঙ্গলের সনির্বন্ধ অনুরোধে বণিক পত্নী সূচ দিয়ে বিল্বমঙ্গলের চোখ দুটি বিদ্ধ করে দেয়। অতঃপর বৃন্দাবনে উপনীত বিল্বমঙ্গল কৃষ্ণব্যাকুলতায় গোপবালকের ছদ্মবেশে শ্রীকৃষ্ণ বিল্বমঙ্গলের কাছে আবির্ভূত হলেন।
তিরস্কারের জন্য বিল্বমঙ্গলের বৈরাগ্য জাগে এবং তিনি গৃহত্যাগ করেন। সোমগিরি নামে এক গুরুর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করে কৃষ্ণ চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। বছরের শেষে বৃন্দাবন যাত্রাকালে সরোবরে স্নানরতা বণিক পত্নীকে দেখে বিল্বমঙ্গল এর আবার কামনা জেগে ওঠে। বিল্বমঙ্গলের প্রার্থনা পূরণ করতে এগিয়ে আসেন বণিকপত্নী। তখন অনুতপ্ত বিল্বমঙ্গলের সনির্বন্ধ অনুরোধে বণিক পত্নী সূচ দিয়ে বিল্বমঙ্গলের চোখ দুটি বিদ্ধ করে দেয়। অতঃপর বৃন্দাবনে উপনীত বিল্বমঙ্গল কৃষ্ণব্যাকুলতায় গোপবালকের ছদ্মবেশে শ্রীকৃষ্ণ বিল্বমঙ্গলের কাছে আবির্ভূত হলেন।
বিল্বমঙ্গল ঠাকুর রচনা সময়ের গিরিশচন্দ্র জনশ্রুতি কিংবদন্তির আশ্রয় নিলেও প্রধানত তিনি ভক্তমাল গ্রন্থ বর্ণিত কাহিনীকেই বিশ্বস্তভাবে অনুসরণ করেছেন তাতে সন্দেহ নেই। নাটক রচনার সময় গিরিশচন্দ্র বহু নতুন বিষয়ের সংযোজন ঘটিয়েছেন। মূল কাহিনীর কিছু হেরফের ঘটাতে বাধ্য হয়েছেন। যেমন ভক্তমালে বিল্বমঙ্গল চিন্তামণি মূল বৃত্তে বর্ণিত। নাট্যকার এখানে একাধিক উপকাহিনী সংযোজন করেছেন। যেমন পাগলিনী কাহিনী, ভিক্ষুক উপকাহিনী, সাধক থাক উপকাহিনী।
বিল্বমঙ্গল ঠাকুর ভক্তি রসের নাটক। প্রেমভক্তি এই নাটকটির অঙ্গীরস। উনিশ শতকের শেষভাগে বাংলাদেশ ভক্তিবাদের নবজাগরণ ঘটেছিল। হরিভক্তির মাধ্যমেই নবজাগরণের সরস্বতী প্রকাশ ঘটে বিল্বমঙ্গল ঠাকুর নাটকে। গিরিশচন্দ্র কৃষ্ণ মাহাত্ম্যের নাট্যলীলা নির্মাণ করেছেন। কৃষ্ণপ্রেমে উন্মাদ হয়ে যেসব সাধক সংসার সুখ ত্যাগ করে সাধনপথে মুক্তিলাভ করেছেন তাঁদের অমৃত জীবনী তাঁকে প্রচণ্ড আকৃষ্ট করে। ইতিপূর্বে ‘চৈতন্যলীলা’ লিখে তিনি দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছিলেন। তারপর ‘রূপ সনাতন’ নাটকেই কৃষ্ণভক্তির দ্বিতীয় প্রকাশ ঘটেছে।
বিল্বমঙ্গল ঠাকুর ভক্তি রসের নাটক। প্রেমভক্তি এই নাটকটির অঙ্গীরস। উনিশ শতকের শেষভাগে বাংলাদেশ ভক্তিবাদের নবজাগরণ ঘটেছিল। হরিভক্তির মাধ্যমেই নবজাগরণের সরস্বতী প্রকাশ ঘটে বিল্বমঙ্গল ঠাকুর নাটকে। গিরিশচন্দ্র কৃষ্ণ মাহাত্ম্যের নাট্যলীলা নির্মাণ করেছেন। কৃষ্ণপ্রেমে উন্মাদ হয়ে যেসব সাধক সংসার সুখ ত্যাগ করে সাধনপথে মুক্তিলাভ করেছেন তাঁদের অমৃত জীবনী তাঁকে প্রচণ্ড আকৃষ্ট করে। ইতিপূর্বে ‘চৈতন্যলীলা’ লিখে তিনি দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছিলেন। তারপর ‘রূপ সনাতন’ নাটকেই কৃষ্ণভক্তির দ্বিতীয় প্রকাশ ঘটেছে।
এবার ‘ভক্তমাল’ অবলম্বন করে বিল্বমঙ্গল ঠাকুরের প্রেমের কাহিনী সংকলন করে তিনি আরেকটি জনপ্রিয় ও সার্থক নাটকের সৃষ্টি করলেন। ‘বিল্বমঙ্গল’ ঠাকুর নাটকে প্রথম অভিনয় রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা হলেন অমৃতলাল মিত্র (বিল্বমঙ্গল) বিনোদিনী (চিন্তামণি) প্রবোধ চন্দ্র ঘোষ (সোমগিরি), অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় (সাধক), অঘোরনাথ পাঠক (ভিক্ষুক) গঙ্গা মনি (পাগলিনী) বনবিহারিনী (বণিক পত্নী), উপেন্দ্রনাথ মিত্র (বণিক)। বিল্বমঙ্গল ঠাকুর নাটকের অন্যতম চরিত্র পাগলিনী শ্রীরামকৃষ্ণ পরিমণ্ডল থেকে আহরণ করা হয়েছে। দক্ষিণেশ্বরে এবং কাশীপুর উদ্যানবাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে এক পাগলী আসত। সেই পাগলীকে অবলম্বন করে গিরিশচন্দ্র পাগলিনী চরিত্রটি অঙ্কন করেন।
এই নাটকের গানগুলি বিভিন্ন রাগে ও তালে সাজানো হয়েছে। এ নাটকের সাফল্যের মূলে গানগুলির অবদান অনেকখানি। বিখ্যাত গুলির মধ্যে রয়েছে ওটা নাবা প্রেমের তুফানে, ওমা কেমন মা তা কে জানে, আমার পাগল বাবা পাগলি আমার মা, সাধে কি গো শ্মশানবাসিনী, আমায় বড় দেয় দাগা, জয় বৃন্দাবন লীলা প্রভৃতি।
এই নাটকের গানগুলি বিভিন্ন রাগে ও তালে সাজানো হয়েছে। এ নাটকের সাফল্যের মূলে গানগুলির অবদান অনেকখানি। বিখ্যাত গুলির মধ্যে রয়েছে ওটা নাবা প্রেমের তুফানে, ওমা কেমন মা তা কে জানে, আমার পাগল বাবা পাগলি আমার মা, সাধে কি গো শ্মশানবাসিনী, আমায় বড় দেয় দাগা, জয় বৃন্দাবন লীলা প্রভৃতি।
লেখার পর বুঝতে চেয়েছিলেন নাটকটি কেমন হয়েছে। তিনি এর পাণ্ডুলিপি নরেন্দ্রনাথের (বিবেকানন্দ) হাতে তুলে দিয়ে দোষগুণের দায়িত্ব অর্পণ করলেন। নরেন্দ্রনাথ খুব মন দিয়ে পান্ডুলিপিটি পড়লেন। তিনি তখন অভিভূত। তিনি গিরিশচন্দ্রকে বলছেন, ‘আমি সংস্কৃত এবং ইংরাজী বহু কাব্য পড়েছি, মিল্টন, শেক্সপিয়ার, কালিদাস আমার কন্ঠস্থ রয়েছে, কিন্তু বিল্বমঙ্গল — খানা যেমন লেগেছে, অন্য বইগুলি তত ভালো লাগছে। বিল্বমঙ্গল — খানা আমার বড় ভালো লাগছে।’ ভক্তিরস এই নাটকের অঙ্গীরস। এজন্য গিরিশচন্দ্র এই নাটকটিকে ‘প্রেম ও বৈরাগ্য মূলক নাটক’ বলেছেন। এই নাটকে নিপুণ বৈষ্ণবের মতো গিরিশচন্দ্র কৃষ্ণরতির প্রকাশ দেখিয়েছেন, পাগলিনী চরিত্রের মধ্যে মহাভাবের বিকাশ, বণিক ও বণিক পত্নীর মধ্যে বাৎসল্যের, ভিক্ষুকের মধ্যে সখ্যের এবং নাটকের শেষ দৃশ্যে শান্তরসের বিকাশ ঘটেছে।