রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


অমৃতলাল বসু, নটী বিনোদিনী ও গিরিশচন্দ্র ঘোষ।

গুর্মুখ রায় স্টার থিয়েটার পরিত্যাগের পর চরিত্রাভিনেতা অমৃতলাল মিত্র, রসরাজ অমৃতলাল বসু সহকারী ম্যানেজার দাশুচরণ নিয়োগী এবং হিসাবরক্ষক হরিপ্রসাদ বসুর স্বত্বাধিকারীতে নতুন ব্যবস্থাপনায় এই মঞ্চটি চালু রইল এবং সেখানে নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্রের ভক্তি রসাত্মক নাটকটি প্রথম অভিনীত হয়। এই অভিনয় অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মার্চ শনিবার ১৮৮৪ সালে। ‘কমলে কামিনী’ নাটকের প্রথম অভিনয় রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁরা হলেন শ্রীমন্তের চরিত্রে বনবিহারিণী, শালিবাহনের চরিত্রে উপেন্দ্রনাথ মিত্র, গুরুমশাইও সভাসদচরিত্রে অমৃতলাল বসু, খুল্লনা ও চণ্ডীর চরিত্রে বিনোদিনী, লহনা চরিত্রে গঙ্গামণি, দুর্বলা চরিত্রে ক্ষেত্রমণি।

আখেটিক খণ্ড কালকেতু ও ফুল্লরা কাহিনি রয়েছে আর বণিক খণ্ডে রয়েছে ধনপতি সওদাগর খুল্লনা লহনা, শ্রীমন্ত সদাগর সুশীলা ও জয়াবতীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। ধনপতি সওদাগর ও শ্রীমন্ত সদাগর পিতা-পুত্র। দুই পুরুষকে অবলম্বন করে বণিক খণ্ড রচিত হয়। এর কাহিনি সুদীর্ঘকাল ধরে হয়েছে। গিরিশচন্দ্র এই ঘটনাকে অবলম্বন করে তাঁর কমলে কামিনী নাটক রচনা করেছেন। নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্রের ভক্তি রসাত্মক ভক্তিমূলক পৌরাণিক নাটক হলেও কমলে কামিনী খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ৩টি অঙ্ক আর আঠারোটি গর্ভাঙ্ক বিশিষ্ট এ নাটক। অসাধারণ নাটক কমলে কামিনী, সেখানে দর্শক সমাজে এর বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ মূলত দুটি; একটি হল: নায়ক শ্রীমন্তের ভূমিকায় প্রসিদ্ধ গায়িকা-অভিনেত্রী বনবিহারিণীর সুমিষ্ট গান এবং তার অপূর্ব অভিনয়, আর দ্বিতীয়টি হল: রঙ্গমঞ্চে যান্ত্রিক কৌশলে অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে কালীদহ দৃশ্যের সৃষ্টি করে দৃষ্টিবিভ্রম ঘটানো।

কমলে কামিনী নাটকের অন্যতম আকর্ষণ হল এর ভক্তিরসামৃত অগণিত সংগীত প্রবাহ। বিশিষ্ট সুরকার ও সংগীত শিক্ষক বেণী মাধব অধিকারী এই নাটকের সুরকার। স্টার থিয়েটারের পূর্ববর্তী নাটকগুলির মতো তিনি এই নাটকেও গানগুলিকে বিভিন্ন রাগে ও তালে অনবদ্য সুর সংযোজন করেছেন। এই নাটকে গানের প্রাচুর্য দেখা যায়। মোট ২১টি গান এখানে রয়েছে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল রেখো মা আমারে অকুলপাথারে, মা বলে ডাকলে তোরে আশায় হৃদয় পুরে, তুমি মা রয়েছ আমার কাছে, ফুরালো স্বপন ইত্যাদি ইত্যাদি গান।

পূর্ববর্তী নাটকগুলির মতো কমলে কামিনী নাটকের স্টেজ ম্যানেজার ছিলেন প্রখ্যাত মঞ্চশিল্পী প্রফেসর জহরলাল ধর। দক্ষযজ্ঞ ও নল দময়ন্তীর মতো এই নাটকের দৃশ্য পরিকল্পনায় তাঁর অনন্যসাধারণ প্রয়োগ নৈপুণ্যের পরিচায়ক। কমলে কামিনী নাটকের সূচনায় গুরুমশাইয়ের একটিমাত্র দৃশ্য ও পরে শালিবাহনের সভাসদের ভূমিকায় রসরাজ অমৃতলাল বসু তাঁর অভিনয়প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর বাচনভঙ্গির বিশেষত্বে চরিত্র দুটি দর্শক মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। খুল্লনা ও চণ্ডীর চরিত্রে বিনোদিনী, লহনার চরিত্র গঙ্গামণি, দুর্বলা ও পদ্মার চরিত্রে ক্ষেত্রমণি প্রমুখ শিল্পী জমিয়ে অভিনয় করেছিলেন। নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্রের স্মরণীয় নাটক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ‘কমলে কামিনী’।

Skip to content