ছবি: প্রতীকী: সংগৃহীত।
আমরা সমাজ গঠন করেছি এই পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য। সমাজে থাকার শর্তের মধ্যে পড়ছে ‘যদি হও সুজন, তেঁতুল পাতায় ন’জন’। আমাদের যা সম্পদ থাকবে সবাই মিলে ভাগ করে নেব। কিন্তু তার বদলে আমরা দেখতে পেলাম নারীদের বাড়িতে রেখে পুরুষ চলেছে সম্পদ আহরণে। পুরুষের যাত্রা পথের রোমাঞ্চ যুগে যুগে পরবর্তী পুরুষদের উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে। আর মহিলারা বাড়িতে থেকে ঘরের কাজ সামলে সন্তানদের মানুষ করে নীতি কথা মুখস্ত করিয়ে গিয়েছে।
আবার পুরুষ রোমাঞ্চ সফর শেষ করে কিছু পুঁজি নিয়ে বাড়ি ঢুকেছেন আর স্ত্রীকে পুনরায় সন্তান সম্ভবনা করে আবার বেরিয়ে পড়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের রোমাঞ্চ জীবনের বিবিধ অনুষঙ্গ দেখা যায়। কিন্তু নারীদের জীবনে কোনও বদল আসে না। বর্তমান সময়ে নারীরা অনেক রকম ভাবে বাড়ির কাজের পাশাপাশি (খুব ভালো করে লক্ষ্য করবেন নিজেদের আশপাশের নারীদের) বাড়ির বাইরের জীবনে পা দিচ্ছেন, কিন্তু পুরুষের মতো রোমাঞ্চ অনুভব করতে পারছেন না। কারণ বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে, তার সঙ্গে নীতি কথা মুখস্ত করানো মায়েদের দল আছেন যারা প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিচ্ছেন নারীদের কী করণীয়, আর কী নয়।
আমাদের পরিবারই আমাদের বলে দেয় কখন বিয়ে করতে হবে, কীভাবে সন্তান মানুষ করতে হবে। এও জানিয়ে দেওয়া হয়, বাড়ির সবাইকে নিয়ে চলা এবং খুশি রাখাই আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধের রাস্তা থেকে বিচ্যুত হলে আমাদের বলা হবে কুলটা, সমাজের কলঙ্ক। নারীকে তাই সন্তানের মতো সামাজিক দায়-দায়িত্বকেও বহন করে চলতে হবে। আর পুরুষের রোমাঞ্চ পৌরুষের প্রতীক হিসেবে গন্য করা হবে। পুরুষ একাধিক নারী সঙ্গ করলেও বলা হবে সেই নারীরা তার দিকে এসেছিল সে বিবাহিত জেনেও। যেমন সূর্পণখা এসেছিলেন। ভালোভাবে বোঝানোর পরও তিনি বোঝেনি তাই লক্ষ্মণ তার নাক কেটে দিয়েছিলেন। আর এখন পুরুষ নাক কাটে না উপভোগ বা রোমাঞ্চ অনুভব করে ফিরে আসেন। কারণ, তাকে কিছু বহন করতে হয় না।
আবার পুরুষ রোমাঞ্চ সফর শেষ করে কিছু পুঁজি নিয়ে বাড়ি ঢুকেছেন আর স্ত্রীকে পুনরায় সন্তান সম্ভবনা করে আবার বেরিয়ে পড়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের রোমাঞ্চ জীবনের বিবিধ অনুষঙ্গ দেখা যায়। কিন্তু নারীদের জীবনে কোনও বদল আসে না। বর্তমান সময়ে নারীরা অনেক রকম ভাবে বাড়ির কাজের পাশাপাশি (খুব ভালো করে লক্ষ্য করবেন নিজেদের আশপাশের নারীদের) বাড়ির বাইরের জীবনে পা দিচ্ছেন, কিন্তু পুরুষের মতো রোমাঞ্চ অনুভব করতে পারছেন না। কারণ বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে, তার সঙ্গে নীতি কথা মুখস্ত করানো মায়েদের দল আছেন যারা প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিচ্ছেন নারীদের কী করণীয়, আর কী নয়।
আমাদের পরিবারই আমাদের বলে দেয় কখন বিয়ে করতে হবে, কীভাবে সন্তান মানুষ করতে হবে। এও জানিয়ে দেওয়া হয়, বাড়ির সবাইকে নিয়ে চলা এবং খুশি রাখাই আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধের রাস্তা থেকে বিচ্যুত হলে আমাদের বলা হবে কুলটা, সমাজের কলঙ্ক। নারীকে তাই সন্তানের মতো সামাজিক দায়-দায়িত্বকেও বহন করে চলতে হবে। আর পুরুষের রোমাঞ্চ পৌরুষের প্রতীক হিসেবে গন্য করা হবে। পুরুষ একাধিক নারী সঙ্গ করলেও বলা হবে সেই নারীরা তার দিকে এসেছিল সে বিবাহিত জেনেও। যেমন সূর্পণখা এসেছিলেন। ভালোভাবে বোঝানোর পরও তিনি বোঝেনি তাই লক্ষ্মণ তার নাক কেটে দিয়েছিলেন। আর এখন পুরুষ নাক কাটে না উপভোগ বা রোমাঞ্চ অনুভব করে ফিরে আসেন। কারণ, তাকে কিছু বহন করতে হয় না।
নারীকে বহন করতে যদি না হয় মানে সে যদি বলে আমি সন্তান বহন করব না এবং দরকার হলে গর্ভপাত করাতে হলে করব, তাহলে সমাজে বা বাড়িতে ন্যায়বিচার না করে সুপ্রিম কোর্ট এবং মেডিকেল বোর্ডকে সেখানে নিয়ে আসে। যেখানে ন্যায় মানেই পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের কী ব্যবহার হবে সেটাই বোঝায়। সেখানে আইনকে নিয়ে আসাটা এক ধরনের ভাবনাকে বেঁধে দেওয়ার প্রক্রিয়া। কিন্তু সেখানে নারীর কাছে জানতে চাওয়া হয় না, তোমার কী মতামত? তুমি কেন বহন করতে চাইছ না? বাড়ির বাইরে গিয়ে ন্যায়বিচার চাওয়া সমাজে গ্রহণীয় হয়, কারন পুরুষ মনে করে স্বায়ত্তশাসন পুরুষের এক চেটিয়া অধিকার। সেই অধিকারের বিপরীতেই রাখা হয়েছে মাতৃত্বকে।
নারীর জন্য মাতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে ইউরোপের বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকদের কিছু পদক্ষেপ বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তাঁদের মনে হয়েছিল যারা সন্তানের জন্ম দিয়ছেন তাদের নিজেদের স্তন দিয়ে দুধপান করাতে হবে, সেখানে ‘ওয়েট নার্স’দের দিয়ে এই প্রক্রিয়া করালে চলবে না। রীতিমতো এই নার্সের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয় যাতে তারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে না পারেন। অথচ আমি দেখেছি, মা বেড়াল বা অন্য পশুরা তাদের সন্তানের পাশে পাশে অন্য প্রজাতির বাচ্চাদেরও দুধ খাওয়াচ্ছে।
কিন্তু ইউরোপের বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকদের এই জোরাল আবেদনের ফলে নারীদের গার্হস্থ্য জীবনে আর একটি মূল্যবোধ জুড়ে গেল, তা হল তাঁকে নিজেকে স্তন পান করিয়ে মাতৃত্বের পরিচয় দিতে হবে। এর ফলে নারীদের ‘পাবলিক’ জীবনে কাটান সময়ের পরিমাণ কমে গেল। আর তার মধ্যে জন্ম নিল এক ধরনের অপরাধ বোধ যে, সে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ করে ছোট শিশুকে বাড়িতে রেখে কী করে যাবে কাজের জায়গায়। কর্মক্ষেত্রে আমাদের দেশে খুব কম জায়গা আছে যেখানে নারীদের জন্য শিশুকে স্তনপান করানোর সুযোগ রয়েছে। এমনকি ছোট শিশুদের রাখার ডে কেয়ার সেন্টারও থাকে না। এই রকম পরিস্থিতিতে বাড়ির বড়রা এবং তাদের স্বামীরা অপেক্ষা করে থাকে সকালের চায়ের জন্য, যা বাড়ি থেকে বেরনোর আগে সেই নারীকেই করে বেরতে হবে।
নারীর জন্য মাতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে ইউরোপের বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকদের কিছু পদক্ষেপ বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তাঁদের মনে হয়েছিল যারা সন্তানের জন্ম দিয়ছেন তাদের নিজেদের স্তন দিয়ে দুধপান করাতে হবে, সেখানে ‘ওয়েট নার্স’দের দিয়ে এই প্রক্রিয়া করালে চলবে না। রীতিমতো এই নার্সের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয় যাতে তারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে না পারেন। অথচ আমি দেখেছি, মা বেড়াল বা অন্য পশুরা তাদের সন্তানের পাশে পাশে অন্য প্রজাতির বাচ্চাদেরও দুধ খাওয়াচ্ছে।
কিন্তু ইউরোপের বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকদের এই জোরাল আবেদনের ফলে নারীদের গার্হস্থ্য জীবনে আর একটি মূল্যবোধ জুড়ে গেল, তা হল তাঁকে নিজেকে স্তন পান করিয়ে মাতৃত্বের পরিচয় দিতে হবে। এর ফলে নারীদের ‘পাবলিক’ জীবনে কাটান সময়ের পরিমাণ কমে গেল। আর তার মধ্যে জন্ম নিল এক ধরনের অপরাধ বোধ যে, সে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ করে ছোট শিশুকে বাড়িতে রেখে কী করে যাবে কাজের জায়গায়। কর্মক্ষেত্রে আমাদের দেশে খুব কম জায়গা আছে যেখানে নারীদের জন্য শিশুকে স্তনপান করানোর সুযোগ রয়েছে। এমনকি ছোট শিশুদের রাখার ডে কেয়ার সেন্টারও থাকে না। এই রকম পরিস্থিতিতে বাড়ির বড়রা এবং তাদের স্বামীরা অপেক্ষা করে থাকে সকালের চায়ের জন্য, যা বাড়ি থেকে বেরনোর আগে সেই নারীকেই করে বেরতে হবে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৩৮: মহিলা সংরক্ষণ বিল বনাম পিতৃতান্ত্রিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৬: সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা পঞ্চানন্দ বা বাবাঠাকুর
অন্যদিকে, পুরুষের জন্য বাড়ির বাইরের রোমাঞ্চ, বেপরোয়া গতি, বেপরোয়া জীবন অপেক্ষা করতে থাকে। তারা বাড়ির কোনও কাজের দায়িত্ব নিতে চায় না। শুধু দেখে নেয়, তার পুত্রসন্তান জন্মেছে কিনা। কারণ, সম্পত্তির অধিকার আইনে মূলত মিতাক্ষরা আইনে পুত্রদের অধিকার অনেক বেশি সুনিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু বাড়ির বউয়ের জন্য এমনি নেই স্বামী মৃত্যুর পরে আছে। যুক্তি দিয়ে বলা আছে বাড়ির মেয়ে দু’বার সম্পত্তির অধিকার পায় নিজের বাড়িতে এবং শ্বশুর বাড়িতে। তাহলে ছেলেরা একবার পাবে। কারণ তারা বিয়ের পর স্থান পরিবর্তন করে না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে নারীদের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার যখন কোনও ব্যবস্থা রাখতে পারছে না, তখন তারা কেন সন্তানের জন্ম দেবে? কেন দায়ভার বহন করবে? কেন সে নিজের ইচ্ছেতে গর্ভধারণ কিংবা গর্ভপাত করাতে পারবে না?
সমাজে এখনও পরিবারকে ধরা হয় খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তবে সমাজতত্ত্বের পড়ুয়ারা পরীক্ষার খাতায় লেখে এবং বলে পরিবারের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে সন্তান প্রতিপালন করা। পরিবারের মধ্যে তারা কী পরিবর্তন লক্ষ্য করছে প্রশ্ন এলেই লিখছে, এখন সন্তান প্রতিপালন ঠিক করে হচ্ছে না। মা বাড়ির বাইরে যান, তাই রান্না করতে দেরি হয়। ফলে খেতে দেরি হয়। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। এরা কেউ মায়ের কাজের জায়গাতে ভালো কাজ করার স্বীকৃতি পাচ্ছে কিনা তাই নিয়ে ভাবতে রাজি নন (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। কিন্তু মূল চিত্র ধরতে গেলে বুঝতে গেলে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে কী হচ্ছে সেটা)। সেই সঙ্গে বাড়িতেও দেখছে যে, বাবা কিংবা অন্য বয়োজ্যেষ্ঠরাও মায়ের কাজের ক্ষেত্রের অর্জন নিয়ে ভাবতে রাজি নয়। এই কারণে আনেক সময় লক্ষ্য করা গিয়েছে, যে নারী বাড়ির বাইরে ভালো করে কাজ করেন তিনি বাড়ি এসে কোনও কাজ করতে চায় না।
কিন্তু এই সব কিছুর পর শিক্ষিত চাকুরিতা নারী থেকে যিনি গৃহ-সহায়িকা হিসেবে কাজ করেন প্রত্যেকেই পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার চাপ অনুভব করতে হয়। সেই সঙ্গে প্রথম সন্তান ছেলে হলে তার জন্য একজন খেলার সঙ্গী আনার চাপ অনুভব করতে হয় না, কিন্তু প্রথম সন্তান মেয়ে হলে সেই মেয়ের জন্য খেলার সঙ্গী মানে দ্বিতীয় সন্তান আনার চাপ এসে যায়। এই চাপের প্রভাব কখনও এমন বেড়ে যায় যে, সেই নারীকে নিয়ে তার স্বামী অবশ্যই বাড়ির লোকের চাপে পড়ে এবং নিজের পৌরুষের দম প্রমাণ করার জন্য দৌড়ে যায় ডাক্তারের কাছে লিঙ্গ পরিচয় জানার জন্য।
সমাজে এখনও পরিবারকে ধরা হয় খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তবে সমাজতত্ত্বের পড়ুয়ারা পরীক্ষার খাতায় লেখে এবং বলে পরিবারের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে সন্তান প্রতিপালন করা। পরিবারের মধ্যে তারা কী পরিবর্তন লক্ষ্য করছে প্রশ্ন এলেই লিখছে, এখন সন্তান প্রতিপালন ঠিক করে হচ্ছে না। মা বাড়ির বাইরে যান, তাই রান্না করতে দেরি হয়। ফলে খেতে দেরি হয়। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। এরা কেউ মায়ের কাজের জায়গাতে ভালো কাজ করার স্বীকৃতি পাচ্ছে কিনা তাই নিয়ে ভাবতে রাজি নন (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। কিন্তু মূল চিত্র ধরতে গেলে বুঝতে গেলে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে কী হচ্ছে সেটা)। সেই সঙ্গে বাড়িতেও দেখছে যে, বাবা কিংবা অন্য বয়োজ্যেষ্ঠরাও মায়ের কাজের ক্ষেত্রের অর্জন নিয়ে ভাবতে রাজি নয়। এই কারণে আনেক সময় লক্ষ্য করা গিয়েছে, যে নারী বাড়ির বাইরে ভালো করে কাজ করেন তিনি বাড়ি এসে কোনও কাজ করতে চায় না।
কিন্তু এই সব কিছুর পর শিক্ষিত চাকুরিতা নারী থেকে যিনি গৃহ-সহায়িকা হিসেবে কাজ করেন প্রত্যেকেই পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার চাপ অনুভব করতে হয়। সেই সঙ্গে প্রথম সন্তান ছেলে হলে তার জন্য একজন খেলার সঙ্গী আনার চাপ অনুভব করতে হয় না, কিন্তু প্রথম সন্তান মেয়ে হলে সেই মেয়ের জন্য খেলার সঙ্গী মানে দ্বিতীয় সন্তান আনার চাপ এসে যায়। এই চাপের প্রভাব কখনও এমন বেড়ে যায় যে, সেই নারীকে নিয়ে তার স্বামী অবশ্যই বাড়ির লোকের চাপে পড়ে এবং নিজের পৌরুষের দম প্রমাণ করার জন্য দৌড়ে যায় ডাক্তারের কাছে লিঙ্গ পরিচয় জানার জন্য।
আরও পড়ুন:
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৯: যত সুর সবই তোমার…
পরিযায়ী মন, পর্ব-৮: চোখিধানির জগৎখানি
পশ্চিম বঙ্গের ‘সেক্স রেশিও’ দেখলে দেখা যাবে ২০২০-২০২১ সালে ছিল ৯৪৩ জন নারী ১০০০ জন পুরুষের সাপেক্ষে। আবার আমরা যদি ২০২২-২০২৩ সালের তথ্য দেখি তাহলে দেখব কমে গিয়ে হয়েছে ৯৩২। কেন কমে গেল? তার মানে আমরা কন্যাভ্রূণ হত্যা করছি কোনও কোনও ক্ষেত্রে। আমি এমনও শুনেছি, দুটি কন্যা সন্তান হওয়ার জন্য হা হুতাশ করছে। কারণ মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে তার বংশ আর থাকবে না। কন্যা সন্তানকে আমরা সহজ ভাবে নিতে পারছি না। আমরা এই সহজ ভাবে নিতে না পারাকেই আমাদের ব্যবহারের মধ্যে ফুটিয়ে তুলছি।
কীভাবে? সন্তানের সঙ্গে বঞ্চনা করছি। সন্তানকে ধরেই নিচ্ছি বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। তাই তাকে এমন বিষয় পড়াবো যা বিয়ের বাজারে দাম আছে। পাত্র নিজে বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়লে প্রথমেই চায় পাত্রী যেন বিজ্ঞান পড়ে আসে। সেই বিজ্ঞান জীববিজ্ঞান হলেও হবে। কিন্তু পাত্রীর বয়স যেন কখনই ত্রিশ পেরিয়ে না যায়। আবার পাত্রী যদি ভালো চাকরি করে আর বেশি টাকা রোজগার করে তাহলে আবার পাত্র বেঁকে বসে এই বলে যে, পাত্রী তার বশ্যতা স্বীকার করবে না। আর সেই শিক্ষিত পাত্রী মেয়েদের রক্ষাকারী আইনকে জানবে তাহলে আরই সেই নারীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ফলে সেই পাত্ররা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না বা নিরবিচ্ছিন্ন সেবা পাবে না, যা তারা দেখেছে তাদের মা-বাবাদের জন্য করতে।
সমাজে যখন মেয়েরা দেখছে, পুত্র সন্তানের এত চাহিদা তখন নিজেরাই একটি শ্রেণি বিভাজন করে নিয়েছেন নিজেদের মধ্যে। যে নারীরা পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তারা নিজেদের রত্নগর্ভা এবং ক্ষমতাশালী নারী মনে করেন। এই নারীরা এবং তাদের বাড়ির লোকেরা সেই পুত্র সন্তানকে বলে থাকেন বিয়ে হয়ে যাওয়া বাড়ির উত্তরাধিকার। সেই বাড়ির ‘জিনিস’ বা সম্পত্তি। সেই প্রেক্ষাপটে নারীর জন্ম দেওয়া নারী চিরকাল দ্বিতীয় শ্রেণির নারী বলেই পরিচিতি পায়।
ফলে কন্যা সন্তানের প্রতি ঘৃণা এবং নিজের সামাজিক অবস্থানকে কীভাবে বদল করবে ভেবে না পেয়ে হয় মুখে নুন দিয়ে মেরে ফেলে, নয়তো জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসে যাতে কুকুর বা এরকম প্রাণী খেয়ে নেয়। জলে ভাসিয়ে দেয়, নয়তো বিক্রি করে দেয়। অর্থাৎ জন্মানো কন্যা সন্তানের মৃত্যু ঘটানো সমাজ মেনে নেয়। মেয়ে সন্তান হবে জানতে পারলে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়। সেই ভ্রূণ হত্যার জন্য সমাজ পরিবার দায়ী থাকে না। সেই হত্যার জন্য কেউ ন্যায় বিচার চায় না।
কীভাবে? সন্তানের সঙ্গে বঞ্চনা করছি। সন্তানকে ধরেই নিচ্ছি বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। তাই তাকে এমন বিষয় পড়াবো যা বিয়ের বাজারে দাম আছে। পাত্র নিজে বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়লে প্রথমেই চায় পাত্রী যেন বিজ্ঞান পড়ে আসে। সেই বিজ্ঞান জীববিজ্ঞান হলেও হবে। কিন্তু পাত্রীর বয়স যেন কখনই ত্রিশ পেরিয়ে না যায়। আবার পাত্রী যদি ভালো চাকরি করে আর বেশি টাকা রোজগার করে তাহলে আবার পাত্র বেঁকে বসে এই বলে যে, পাত্রী তার বশ্যতা স্বীকার করবে না। আর সেই শিক্ষিত পাত্রী মেয়েদের রক্ষাকারী আইনকে জানবে তাহলে আরই সেই নারীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ফলে সেই পাত্ররা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না বা নিরবিচ্ছিন্ন সেবা পাবে না, যা তারা দেখেছে তাদের মা-বাবাদের জন্য করতে।
সমাজে যখন মেয়েরা দেখছে, পুত্র সন্তানের এত চাহিদা তখন নিজেরাই একটি শ্রেণি বিভাজন করে নিয়েছেন নিজেদের মধ্যে। যে নারীরা পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তারা নিজেদের রত্নগর্ভা এবং ক্ষমতাশালী নারী মনে করেন। এই নারীরা এবং তাদের বাড়ির লোকেরা সেই পুত্র সন্তানকে বলে থাকেন বিয়ে হয়ে যাওয়া বাড়ির উত্তরাধিকার। সেই বাড়ির ‘জিনিস’ বা সম্পত্তি। সেই প্রেক্ষাপটে নারীর জন্ম দেওয়া নারী চিরকাল দ্বিতীয় শ্রেণির নারী বলেই পরিচিতি পায়।
ফলে কন্যা সন্তানের প্রতি ঘৃণা এবং নিজের সামাজিক অবস্থানকে কীভাবে বদল করবে ভেবে না পেয়ে হয় মুখে নুন দিয়ে মেরে ফেলে, নয়তো জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসে যাতে কুকুর বা এরকম প্রাণী খেয়ে নেয়। জলে ভাসিয়ে দেয়, নয়তো বিক্রি করে দেয়। অর্থাৎ জন্মানো কন্যা সন্তানের মৃত্যু ঘটানো সমাজ মেনে নেয়। মেয়ে সন্তান হবে জানতে পারলে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়। সেই ভ্রূণ হত্যার জন্য সমাজ পরিবার দায়ী থাকে না। সেই হত্যার জন্য কেউ ন্যায় বিচার চায় না।
আরও পড়ুন:
পালকিতে যেতে যেতে লেখা হয়েছিল ‘বর্ণপরিচয়’
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৮: ও দয়াল! বিচার করো!
অথচ দেশের আইন বলেছে ১২ সপ্তাহের গর্ভবতী নারী একজন চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে করতে পারেন, কিন্তু গর্ভাবস্থা ২৪ সপ্তাহ অবধি গেলে কমপক্ষে দু’জন চিকিৎসকের মতামত নিতে হবে। গর্ভপাত করা যাবে এবং তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকতে হবে। এই পর্যন্ত দেশের শীর্ষ আদালত বলেছে আইনত সিদ্ধ। কিন্তু তার পরে কেউ গর্ভপাত করতে চাইলে তা আইনত দণ্ডনীয় এবং আদালতের বিচারের মধ্যে আসবে। এটাও বলা হয়েছে, অবিবাহিত নারী বা শিশু, যাদের ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন তাদেরকেও এই আইনের মধ্যে আনা হয়েছে।
প্রশ্ন এখানে আসে যে, নারীর শরীরের অধিকার তার নিজের। সেই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেন বার বার প্রশ্নের মুখে পড়বে? সে কার সঙ্গে মিশবে এবং কার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে যাবে সেটাও তার ব্যাক্তিগত বিষয়। আমাদের আদালতও সেই বিষয়টি মেনে নিয়েছে। তাহলে সে ২৪ সপ্তাহের পরে কেন নিজে থেকে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না?
তার সেই সিদ্ধান্তের মধ্যে দেখা হবে যে, সে একটি প্রাণকে হত্যা করতে পারবে না। কারণ আমাদের দেশে স্বেচ্ছামৃত্যুর আইনি অধিকার আমাদের নেই। তাহলে যখন কন্যা সন্তান জন্মানোর পর মেরে ফেলা হচ্ছে বা বেআইনি ভাবে লিঙ্গ নির্ধারণ করে করে মেরে ফেলা হচ্ছে বা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে বলে মারধর করা হচ্ছে, তখন কেন আমরা এগিয়ে এসে বলছি না আমরা লিঙ্গ বিভাজন মানব না। কেন নারীকে সংগ্রাম করে যেতে হবে বেঁচে থাকার জন্য গায়ে ফোস্কার দাগ নিয়ে, কপালে আঘাতের দাগ নিয়ে?
প্রশ্ন এখানে আসে যে, নারীর শরীরের অধিকার তার নিজের। সেই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেন বার বার প্রশ্নের মুখে পড়বে? সে কার সঙ্গে মিশবে এবং কার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে যাবে সেটাও তার ব্যাক্তিগত বিষয়। আমাদের আদালতও সেই বিষয়টি মেনে নিয়েছে। তাহলে সে ২৪ সপ্তাহের পরে কেন নিজে থেকে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না?
তার সেই সিদ্ধান্তের মধ্যে দেখা হবে যে, সে একটি প্রাণকে হত্যা করতে পারবে না। কারণ আমাদের দেশে স্বেচ্ছামৃত্যুর আইনি অধিকার আমাদের নেই। তাহলে যখন কন্যা সন্তান জন্মানোর পর মেরে ফেলা হচ্ছে বা বেআইনি ভাবে লিঙ্গ নির্ধারণ করে করে মেরে ফেলা হচ্ছে বা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে বলে মারধর করা হচ্ছে, তখন কেন আমরা এগিয়ে এসে বলছি না আমরা লিঙ্গ বিভাজন মানব না। কেন নারীকে সংগ্রাম করে যেতে হবে বেঁচে থাকার জন্য গায়ে ফোস্কার দাগ নিয়ে, কপালে আঘাতের দাগ নিয়ে?
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।