![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/09/gender-equality.jpg)
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
কিছুদিন আগে একজন দিদির সঙ্গে আলাপ হল। তিনি সেলফ হেল্প গ্রুপের তৈরি একটি দোকান চালান। এই দিদি মূলত হুগলি জেলার তাঁতিদের তৈরি শাড়ি ও জামা কাপড় নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন। তিনি কথায় কথায় জানালেন, যতদিন তাঁর স্বামী বেঁচেছিলেন ততদিন উনি কোথাও গিয়ে রাত কাটাননি। বাড়ির আশপাশে সমাজসেবা মূলক কাজ করেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি স্বামীর ওষুধের দোকান বিক্রি করে সেলফ হেল্প গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে মানুষ করছেন।
আপাত দৃষ্টিতে এই ঘটনার মধ্যে আপনারা বলবেন যাঁরা আমার লেখা পড়েন সেরকম কোনও বৈশিষ্ট নেই। এরকম সংগ্রাম আজকাল বহু নারীকেই করতে হচ্ছে। এই বর্ণনাতে সংগ্রামের গুরুত্ব পরে আসবে। আসলে আমি যা বলতে চাইছি তাহল, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়িত করতে পারার বিষয়টাই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্ব আদায় করার পদ্ধতিই হল আজকের প্রতিবেদনের মূল বিষয়। কারণ সমাজ যখন চাইবে আপনি সংগ্রাম করুন তখন করবেন অন্য সময় নয়, তা কখনই স্বনির্ভরতার পরিচয় বহন করে না।
দেশের নতুন লোকসভা ভবনে গত মঙ্গলবার থেকে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগেও এই বিল উত্থাপন করা হয়েছিল আইন করার উদ্দ্যেশে, কিন্তু তখন নানান অজুহাতে সেই বিল পাশ করতে সাহায্য করেননি আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই।
এই বিল পাশ করতে না দেওয়ার একাধিক কারণ নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেখিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে পুরুষদের সংখ্যাধিক্য ছিল তা বলাই বাহুল্য। এই ঘটনা ১৯৯৬ সালের। তারপর অনেক জল বয়ে গেছে আমাদের নদী নালা দিয়ে। আমরা চন্দ্রযান পাঠিয়েছি।
কিন্তু এই বিল দ্বিতীয়বার উত্থাপন করতে আমাদের ২৬ বছর মানে দুই যুগ লেগে গেল। কেন? এই কেন প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বহু জানা অজানা কারণ এবং মুখ্যত এখন আমাদের দেখতে হবে আমাদের লিঙ্গভেদে যে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করেছি তার কারণ কি ছিল এবং সেই সম্পর্কের কাঠামো কি উপাদানের উপর নির্ভর করে বানিয়েছি । মানুষের সামাজিকজীব হয়ে ওঠার পিছনে পারস্পরিক সম্পর্কের বুনন সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আপাত দৃষ্টিতে এই ঘটনার মধ্যে আপনারা বলবেন যাঁরা আমার লেখা পড়েন সেরকম কোনও বৈশিষ্ট নেই। এরকম সংগ্রাম আজকাল বহু নারীকেই করতে হচ্ছে। এই বর্ণনাতে সংগ্রামের গুরুত্ব পরে আসবে। আসলে আমি যা বলতে চাইছি তাহল, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়িত করতে পারার বিষয়টাই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্ব আদায় করার পদ্ধতিই হল আজকের প্রতিবেদনের মূল বিষয়। কারণ সমাজ যখন চাইবে আপনি সংগ্রাম করুন তখন করবেন অন্য সময় নয়, তা কখনই স্বনির্ভরতার পরিচয় বহন করে না।
দেশের নতুন লোকসভা ভবনে গত মঙ্গলবার থেকে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগেও এই বিল উত্থাপন করা হয়েছিল আইন করার উদ্দ্যেশে, কিন্তু তখন নানান অজুহাতে সেই বিল পাশ করতে সাহায্য করেননি আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই।
এই বিল পাশ করতে না দেওয়ার একাধিক কারণ নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেখিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে পুরুষদের সংখ্যাধিক্য ছিল তা বলাই বাহুল্য। এই ঘটনা ১৯৯৬ সালের। তারপর অনেক জল বয়ে গেছে আমাদের নদী নালা দিয়ে। আমরা চন্দ্রযান পাঠিয়েছি।
কিন্তু এই বিল দ্বিতীয়বার উত্থাপন করতে আমাদের ২৬ বছর মানে দুই যুগ লেগে গেল। কেন? এই কেন প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বহু জানা অজানা কারণ এবং মুখ্যত এখন আমাদের দেখতে হবে আমাদের লিঙ্গভেদে যে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করেছি তার কারণ কি ছিল এবং সেই সম্পর্কের কাঠামো কি উপাদানের উপর নির্ভর করে বানিয়েছি । মানুষের সামাজিকজীব হয়ে ওঠার পিছনে পারস্পরিক সম্পর্কের বুনন সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
শুরুতে বলা দিদির গল্পে আবার ফিরে আসছি। দিদি জানিয়েছেন, স্বামী যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন উনি কিছুই সে-ভাবে করতে পারেননি। নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে পারেননি স্বামীর দেখভাল করতে হবে বলে। এখন তাহলে কি নিজের ইচ্ছেতেই বাঁচছেন? আমি যখন এই প্রশ্ন করলাম তখন বললেন আসলে ছেলেটা আছে তো। তাকে বড় করতে হবে। ছেলে নিট পরিক্ষা দিয়ে ডাক্তারি পড়বে বলে তৃতীয় বারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মা হিসেবে এখন ওর দায়িত্ব ছেলের ইচ্ছে-অনিচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া। ছেলে যেন কখনই না মনে করে মা, বাবার দায়িত্ব পালন করছে না।
তাহলে দেখা গেল একজন মা বা একজন নারী প্রথমে পরিবারের দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ, তারপর তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানদের দেখভাল করা। একজন নারীর মূল কাজ আমাদের দেশের সমাজে সবাইকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে অনাবিল আনন্দ দিয়ে যাওয়া। সেই আনন্দে ছেদ পড়লে চলবে না তাই আজও নারীকে বাড়ি এবং বাইরের জগতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয়। না করলে বাড়িতে খাপ পাঞ্ছায়েত বসে যায় বউকে শাসন করার জন্য।
এতদূর পড়ে আপনারা ভাবছেন আমি কি তাহলে বিলের বিরোধিতা করতে চাইছি। না, একদম তা নয়। আসলে আমি বোঝাতে চাইছি, রাজনৈতিক ক্ষমতার মতো বিষয়কে আমরা নারীরা কীভাবে বুঝব এবং কেন সেই ক্ষমতা অর্জন করতে আমাদের সমাজ বাধা দিচ্ছে। এই বাধা দেওয়ার পিছনের রাজনীতিটাই বা কি?
সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণা এই লিঙ্গ বৈষম্যের বা ক্ষমতার বৈষম্যের কারণ অনুসন্ধান করেছে। তাঁদের মতে, সম্পদের অসম বণ্টন হওয়া একটি কারণ সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য তৈরি হওয়ার। তবে গবেষণা বৈষম্যের উপরি কাঠামো ভেদ করে যতই গভীরে প্রবেশ করতে গিয়েছে, ততই নানা রকমের চমকপ্রদ তথ্য কারণ উঠে এসেছে। এই কারণ খোঁজার প্রথম ধাপে উঠে এসেছে নির্দিষ্ট সমাজের পরিবারের কাঠামোকে কেন্দ্র করে। দ্বিতীয় ধাপে উঠে এসেছে সমাজে যৌন সম্পর্কের কাঠামোর গঠন নিয়ে। তৃতীয়ত উঠে এসেছে সমাজের ক্ষমতার বণ্টন কীভাবে গড়ে উঠেছিল সম্পদ এবং যৌনতা কে কেন্দ্র করে। অবশ্যই এখানে বিসমকামি যৌনতার কথাই বলা হচ্ছে।
তাহলে দেখা গেল একজন মা বা একজন নারী প্রথমে পরিবারের দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ, তারপর তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানদের দেখভাল করা। একজন নারীর মূল কাজ আমাদের দেশের সমাজে সবাইকে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে অনাবিল আনন্দ দিয়ে যাওয়া। সেই আনন্দে ছেদ পড়লে চলবে না তাই আজও নারীকে বাড়ি এবং বাইরের জগতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয়। না করলে বাড়িতে খাপ পাঞ্ছায়েত বসে যায় বউকে শাসন করার জন্য।
এতদূর পড়ে আপনারা ভাবছেন আমি কি তাহলে বিলের বিরোধিতা করতে চাইছি। না, একদম তা নয়। আসলে আমি বোঝাতে চাইছি, রাজনৈতিক ক্ষমতার মতো বিষয়কে আমরা নারীরা কীভাবে বুঝব এবং কেন সেই ক্ষমতা অর্জন করতে আমাদের সমাজ বাধা দিচ্ছে। এই বাধা দেওয়ার পিছনের রাজনীতিটাই বা কি?
সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণা এই লিঙ্গ বৈষম্যের বা ক্ষমতার বৈষম্যের কারণ অনুসন্ধান করেছে। তাঁদের মতে, সম্পদের অসম বণ্টন হওয়া একটি কারণ সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য তৈরি হওয়ার। তবে গবেষণা বৈষম্যের উপরি কাঠামো ভেদ করে যতই গভীরে প্রবেশ করতে গিয়েছে, ততই নানা রকমের চমকপ্রদ তথ্য কারণ উঠে এসেছে। এই কারণ খোঁজার প্রথম ধাপে উঠে এসেছে নির্দিষ্ট সমাজের পরিবারের কাঠামোকে কেন্দ্র করে। দ্বিতীয় ধাপে উঠে এসেছে সমাজে যৌন সম্পর্কের কাঠামোর গঠন নিয়ে। তৃতীয়ত উঠে এসেছে সমাজের ক্ষমতার বণ্টন কীভাবে গড়ে উঠেছিল সম্পদ এবং যৌনতা কে কেন্দ্র করে। অবশ্যই এখানে বিসমকামি যৌনতার কথাই বলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/09/gender-bias.jpg)
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৩৭: অনুভূতির বৈচিত্র বনাম লিঙ্গ বৈচিত্র
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/09/Health.jpeg)
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৮: চল্লিশ পার হলেই নিরামিষ?
ভারতীয় সমাজের দিকে তাকালে দেখব এই সমাজ পিতৃতান্ত্রিক দর্শন গ্রহণ করেছে মাতৃতন্ত্রকে সরিয়ে দিয়ে। মাতৃতন্ত্র সন্তানের দায়িত্ব যেমন নিয়েছিল তেমনি মূল্যবোধের মধ্যে সবার বেঁচে থাকার অধিকার আছে এই দর্শন অভ্যাস করেছিল। কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক এই দর্শনের মূল বিষয়ই ক্ষমতা আসম বণ্টনের মধ্যে নিয়োজিত। পিতৃতান্ত্রিক দর্শন পুরুষলিঙ্গকে ক্ষমতা দিয়েছে এবং কিছু গুণাবলির উল্লেখ করে দিয়েছে এই সক্ষম ক্ষমতাশালী পুরুষদের জন্য। সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে এই ক্ষমতা বিভাজন। অর্থাৎ সমাজ পুরুষের ক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নারীর এবং আমাদের সমাজে যাঁরা জাত ব্যবস্থার নিচের সারিতে আছেন তাঁদের উপর প্রয়োগ করার সম্পূর্ণ অধিকার দিয়ে রেখেছে।
এই অধিকার এতটাই সর্বগ্রাসী যে, বহুগামির মতো যৌন ব্যবস্থা সেখানে অন্যতম প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায় পুরুষের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। মানসিক শারীরিক এবং যৌন নিপীড়ন নারীদের এবং শিশুদের উপর এতটাই প্রভাব ফেলে যে, তারা গৃহবন্দি পশুর মতো জীবনধারণ করতে বাধ্য হয়। এ ভাবে গৃহবন্দি করে রাখার প্রবণতা থেকেই জন্ম নিল আমাদের মধ্যে যে, গৃহ আসলে একটি কাঠামো যা প্রকৃতিতে সরল। এই সরল কাঠামোর মধ্যে নারীরা যে কাজগুলো করতে বাধ্য হয়, তার মধ্যে অন্যতম সন্তানের জন্ম দেওয়া এবং প্রতিপালন করা। যেগুলো খুব সহজ এবং খুব একটা উল্লেখযোগ্য কাজও নয়।
পুরুষকে দেওয়া হয়েছে রাজ্যপাট। বাড়ির বাইরে। পুরুষ সেখানে একজন বা কয়েকজন নারীকে নিয়ে ভাবছে না। সেখানে বহু জাতির, বহু প্রকারের সন্তানদের নিয়ে তাকে ভাবতে হচ্ছে। আমি যদি একজন রাজা, আমলা বা একজন চিকিৎসকের জীবন ধরে বলি তাহলে দেখব এই পেশার পুরুষদের বলছি তারা খুব জটিল সর্বজনীনের জীবনের কাঠামো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই সমাজ এদের কাজকে আলাদা করে সম্মান দিয়ে বলে যে, এরা জটিল বিষয় দেখে এবং এদেরকেই ক্ষমতাশালী বলা দরকার। আমরা ভারতীয় সমাজে এই সম্মান দিয়েছি এবং তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিয়েছি। সেই সঙ্গে নিজেদের মজ্জায় ঢুকিয়ে নিয়েছি যে, বাইরের জটিল কাঠামোর দায়িত্ব পুরুষের। সেটাই সমাজে পুরুষের কাজ। সমাজে সে সবসময় অগ্রাধিকার পাবে। তার ক্ষমতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
এই অধিকার এতটাই সর্বগ্রাসী যে, বহুগামির মতো যৌন ব্যবস্থা সেখানে অন্যতম প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায় পুরুষের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। মানসিক শারীরিক এবং যৌন নিপীড়ন নারীদের এবং শিশুদের উপর এতটাই প্রভাব ফেলে যে, তারা গৃহবন্দি পশুর মতো জীবনধারণ করতে বাধ্য হয়। এ ভাবে গৃহবন্দি করে রাখার প্রবণতা থেকেই জন্ম নিল আমাদের মধ্যে যে, গৃহ আসলে একটি কাঠামো যা প্রকৃতিতে সরল। এই সরল কাঠামোর মধ্যে নারীরা যে কাজগুলো করতে বাধ্য হয়, তার মধ্যে অন্যতম সন্তানের জন্ম দেওয়া এবং প্রতিপালন করা। যেগুলো খুব সহজ এবং খুব একটা উল্লেখযোগ্য কাজও নয়।
পুরুষকে দেওয়া হয়েছে রাজ্যপাট। বাড়ির বাইরে। পুরুষ সেখানে একজন বা কয়েকজন নারীকে নিয়ে ভাবছে না। সেখানে বহু জাতির, বহু প্রকারের সন্তানদের নিয়ে তাকে ভাবতে হচ্ছে। আমি যদি একজন রাজা, আমলা বা একজন চিকিৎসকের জীবন ধরে বলি তাহলে দেখব এই পেশার পুরুষদের বলছি তারা খুব জটিল সর্বজনীনের জীবনের কাঠামো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই সমাজ এদের কাজকে আলাদা করে সম্মান দিয়ে বলে যে, এরা জটিল বিষয় দেখে এবং এদেরকেই ক্ষমতাশালী বলা দরকার। আমরা ভারতীয় সমাজে এই সম্মান দিয়েছি এবং তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিয়েছি। সেই সঙ্গে নিজেদের মজ্জায় ঢুকিয়ে নিয়েছি যে, বাইরের জটিল কাঠামোর দায়িত্ব পুরুষের। সেটাই সমাজে পুরুষের কাজ। সমাজে সে সবসময় অগ্রাধিকার পাবে। তার ক্ষমতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/09/Baitarani-River.jpg)
পরিযায়ী মন, পর্ব-৬: বৈতরণীর পারে…
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/09/cartoon-1.jpg)
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৫: আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে / খুঁজে পেতে আনি খেতে-নয় বড় সিধে সে!…
অন্যদিকে, নারী যেহেতু খুব সহজ কাঠামোর দেখভাল করে, তাই তার ভূমিকা ওই দেখভালের মধ্যেই সীমিত থাকবে। তার ক্ষমতাও তাই খুব প্রভাবশালী সর্বজনগ্রাহ্য হতে পারবে না। আর সঙ্গে আছে জাতিগত বৈষম্য প্রদর্শন করা। নিচু জাতের মানুষদের কোনও সামাজিক কাঠামো বা প্রতিনিধিত্ব বা কর্তৃত্ব প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি, এখনও হয় না। ফলে সমাজের তথাকথিত নিচু তলার মানুষদের আবার পৌরুষ বা নারীত্ব কোনওটাকেই আলাদা করে দেখা হয় না। তাদের সমাজস্থ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অধিকার কায়েম করতে দেওয়া হয় না।
ফলে একতরফা তথাকথিত উঁচু জাতের পুরুষদের আমরা সবসময় সক্রিয় রাজনীতিতে দেখে থাকি এবং তাদের করা আইনের হিসেব আমাদের মেনে চলতে হয়। স্বাধীন ভারতে আমরা যতই জাতের নিরিখে রাজনীতির লড়াই এবং ক্ষমতা দখল দেখে থাকি না কেন নারীদের অবস্থান সবসময় পরিবেষ্টিত। বাড়ির চার দেওয়াল থেকে শুরু করে কোন আইন তাকে অত্যাচার থেকে বাঁচাবে, সব ক্ষেত্রেই দলে ভারি থাকা পুরুষেরাই সওয়াল এবং নিদান দিয়ে যাচ্ছে।
আপনাদের মনে হতে পারে ভারতীয় সমাজে নারীরা কি একদমই এগোয়নি। আমরা ইন্দিরা গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। আমরা দ্রৌপদী মুর্মু যিনি আমাদের দেশের অন্যতম পিছিয়ে থাকা জনজাতিদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু এই পাওনা কি আমাদের নারী প্রতিনিধির সংখ্যা লোকসভাতে ১৫ শতাংশের বেশি বাড়াতে পেরেছে? কেন বাড়াতে পারেনি। কেন আমরা নিজেদের অভিমত জোর গলায় বলতে পারছি না? কেন আমাদের সবসময় বলতে হচ্ছে, আমাদের জীবনসঙ্গী বলে দিয়েছেন বা আমাদের নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই বলতে পারব কি? অন্যরা কীভাবে বলবে যখন সে আমাদের জীবন কাটায়নি!
ফলে একতরফা তথাকথিত উঁচু জাতের পুরুষদের আমরা সবসময় সক্রিয় রাজনীতিতে দেখে থাকি এবং তাদের করা আইনের হিসেব আমাদের মেনে চলতে হয়। স্বাধীন ভারতে আমরা যতই জাতের নিরিখে রাজনীতির লড়াই এবং ক্ষমতা দখল দেখে থাকি না কেন নারীদের অবস্থান সবসময় পরিবেষ্টিত। বাড়ির চার দেওয়াল থেকে শুরু করে কোন আইন তাকে অত্যাচার থেকে বাঁচাবে, সব ক্ষেত্রেই দলে ভারি থাকা পুরুষেরাই সওয়াল এবং নিদান দিয়ে যাচ্ছে।
আপনাদের মনে হতে পারে ভারতীয় সমাজে নারীরা কি একদমই এগোয়নি। আমরা ইন্দিরা গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। আমরা দ্রৌপদী মুর্মু যিনি আমাদের দেশের অন্যতম পিছিয়ে থাকা জনজাতিদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু এই পাওনা কি আমাদের নারী প্রতিনিধির সংখ্যা লোকসভাতে ১৫ শতাংশের বেশি বাড়াতে পেরেছে? কেন বাড়াতে পারেনি। কেন আমরা নিজেদের অভিমত জোর গলায় বলতে পারছি না? কেন আমাদের সবসময় বলতে হচ্ছে, আমাদের জীবনসঙ্গী বলে দিয়েছেন বা আমাদের নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই বলতে পারব কি? অন্যরা কীভাবে বলবে যখন সে আমাদের জীবন কাটায়নি!
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/09/Madan-Mohan-Bari.jpg)
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১১: দেব-দেউল কথা ও মদনমোহন মন্দির
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/09/Sundarban-1-1.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৪: সুন্দরবনের মৎস্যদেবতা মাকাল
এই রকম সামাজিক কাঠামোর মধ্যে যে সমস্থ নারীরা সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করতে পেরেছেন তাদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যাঁরা পড়াশুনোর সুযোগ পেয়েছেন কিংবা যাঁরা পরিবারে কাউকে পেয়েছেন রাজনীতিতে যুক্ত থাকা অবস্থায় তারাই পেরেছেন এগিয়ে আসতে। রাজনীতিতে সক্রিয় হতে। গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনে পঞ্চায়তের মতো ব্যবস্থাতে যখন নারীরা ভোট দিতে যায় বা ভোটে দাঁড়ায় এবং জিতে নিজেদের নামে নিজেরা পরিচিতি পায় তখন মনে হয় নারীরা এগোচ্ছে, তারা পারবে। তারাই আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধরে রাখবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই নারীদেরও নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষ। সেই পুরুষ স্বামী হতে পারে। রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয়গুরু হতে পারে। আসলে বিষয়টা কী? পুরুষদের নারীর হাতটা ছেড়ে দিতে সমস্যা কোথায়?
হাত ছাড়তে না পারা নয়, হাত ছাড়তে না চাওয়ার কারণ পুরুষ সবসময় নারীদেরকে নিজেদের সব রকমের আনন্দের উৎস হিসেবে দেখেছে। যৌন আনন্দ থেকে শুরু করে সময়ে খাবার দেওয়া, দেখভাল করা কিংবা কারও উপর রাগ হলে বউ পিটিয়ে রাগ প্রশমন করা। স্বাভাবিকভাবেই নারীকে কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চাইছে না পুরুষ। নারী যত নিজের মত করে বাঁচতে চাইবে ততই তার এই পরিষেবা, সন্তান উৎপাদন করার ইচ্ছেগুলো চলে যেতে পারে। তাই রাজনীতিবিদরা মনে করেন চুল কাটা আধুনিক নারীরা ক্ষমতায় এলে হবে না। বাহানা খোঁজেন এই বলে যে, তাতে প্রকৃত ভারতীয় নারী সামনে এগিয়ে আসবে না রাজনীতির আঙিনাতে।
এখন আমাদেরকেই তাই ভাবতে হবে, আমরা আনন্দময়ী থাকব, নাকি সময়কালে একটু দজ্জাল হয়ে উঠবো!—চলবে।
হাত ছাড়তে না পারা নয়, হাত ছাড়তে না চাওয়ার কারণ পুরুষ সবসময় নারীদেরকে নিজেদের সব রকমের আনন্দের উৎস হিসেবে দেখেছে। যৌন আনন্দ থেকে শুরু করে সময়ে খাবার দেওয়া, দেখভাল করা কিংবা কারও উপর রাগ হলে বউ পিটিয়ে রাগ প্রশমন করা। স্বাভাবিকভাবেই নারীকে কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চাইছে না পুরুষ। নারী যত নিজের মত করে বাঁচতে চাইবে ততই তার এই পরিষেবা, সন্তান উৎপাদন করার ইচ্ছেগুলো চলে যেতে পারে। তাই রাজনীতিবিদরা মনে করেন চুল কাটা আধুনিক নারীরা ক্ষমতায় এলে হবে না। বাহানা খোঁজেন এই বলে যে, তাতে প্রকৃত ভারতীয় নারী সামনে এগিয়ে আসবে না রাজনীতির আঙিনাতে।
এখন আমাদেরকেই তাই ভাবতে হবে, আমরা আনন্দময়ী থাকব, নাকি সময়কালে একটু দজ্জাল হয়ে উঠবো!—চলবে।
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।