ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এ বছর আমার এক রকম মিশ্র অনুভূতি হল। এরকম অনুভূতি হওয়ার পিছনে কারণ কী তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করে বুঝলাম এর মূলত দুটি বিষয় রয়েছে।
প্রথম কারণ, মণিপুরে নারীদের উপর যে ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে বা হয়ে চলেছে, ভারতীয় সমাজ এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা কী হওয়া দরকার ছিল তাই নিয়ে কিছু হতাশা এবং প্রশ্ন উঠে আসছে। এই প্রশ্নের উত্তরের প্রত্যাশা এবং মণিপুরের নারীদের মনে এবং শরীরের ক্ষত আমাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করছে। যে কোনও সমস্যা হলে আগে নারীদের উপর অত্যাচার করো। যদি এই ভাবনা আমাদের নীতিবোধের মধ্যে প্রবেশ করে যায়, তাহলে আমি এবং আমার মতো অন্য ভারতীয় নারীরা ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিতে থাকবেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নারীরাও প্রতিবাদ করতে ভুলে যাবেন।
দ্বিতীয়ত, একটি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে শহরতলি থেকে পড়তে আসা ছাত্রের মৃত্যু এবং তাঁর বাবা-মায়ের রিগিংয়ের অভিযোগ দায়ের। অর্থাৎ একজন ছাত্রকে আপন করে নেওয়ার নামে এমন ভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে, যার পরিণামে কিছু বোঝার আগেই জীবনটা শেষ হয়ে গেল। ছাত্রের বাবা-মা ন্যায়বিচার চাইছেন। এই চাওয়াতে কোনও সংশয়ও নেই। বরং জীবন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা জড়িয়ে আছে। আমরা সবাই সুবিচার চাইছি।
এই দুটি ঘটনার মধ্যে অমিল যেমন অনেক, তেমন একটি জায়গায় এসে অদ্ভুত মিল পাওয়া যাচ্ছে। সেটি হোল মণিপুরেও নারীদের যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে, আর এই ছাত্রের ক্ষেত্রেও রিগিংয়ের নামে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আমাদের চারিদিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে হিংসাকে আশ্রয় করে কিছু নীতি তৈরি করা হয়েছে। আমরা ভীষণ রকম ভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ছি এই হিংসা আশ্রিত নীতি বোধের দ্বারা। এই হিংসা আশ্রিত নীতি প্রায়শই দেখা যায় যৌন আক্রমণ কিংবা ধর্ষণের মতো একটি আদিম পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটায়। মানুষের মধ্যে একটি প্রবণতা কাজ করে যে, সে কীভাবে ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাবে এবং নিজেকে ক্ষমতাশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। ভারতীয় সমাজের বিবর্তনের ইতিহাস যার মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পরিবারের কাঠামোর গঠন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে নারীর উপর যৌন অত্যাচারকে একপ্রকার মেনে নেওয়া হয়েছে না না ভাবে। ছাত্ররা যখন এই ঘটনার সুবিচার চাইছে, তখনও তারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে ফেলছে।
প্রথম কারণ, মণিপুরে নারীদের উপর যে ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে বা হয়ে চলেছে, ভারতীয় সমাজ এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা কী হওয়া দরকার ছিল তাই নিয়ে কিছু হতাশা এবং প্রশ্ন উঠে আসছে। এই প্রশ্নের উত্তরের প্রত্যাশা এবং মণিপুরের নারীদের মনে এবং শরীরের ক্ষত আমাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করছে। যে কোনও সমস্যা হলে আগে নারীদের উপর অত্যাচার করো। যদি এই ভাবনা আমাদের নীতিবোধের মধ্যে প্রবেশ করে যায়, তাহলে আমি এবং আমার মতো অন্য ভারতীয় নারীরা ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিতে থাকবেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নারীরাও প্রতিবাদ করতে ভুলে যাবেন।
দ্বিতীয়ত, একটি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে শহরতলি থেকে পড়তে আসা ছাত্রের মৃত্যু এবং তাঁর বাবা-মায়ের রিগিংয়ের অভিযোগ দায়ের। অর্থাৎ একজন ছাত্রকে আপন করে নেওয়ার নামে এমন ভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে, যার পরিণামে কিছু বোঝার আগেই জীবনটা শেষ হয়ে গেল। ছাত্রের বাবা-মা ন্যায়বিচার চাইছেন। এই চাওয়াতে কোনও সংশয়ও নেই। বরং জীবন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা জড়িয়ে আছে। আমরা সবাই সুবিচার চাইছি।
এই দুটি ঘটনার মধ্যে অমিল যেমন অনেক, তেমন একটি জায়গায় এসে অদ্ভুত মিল পাওয়া যাচ্ছে। সেটি হোল মণিপুরেও নারীদের যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে, আর এই ছাত্রের ক্ষেত্রেও রিগিংয়ের নামে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আমাদের চারিদিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে হিংসাকে আশ্রয় করে কিছু নীতি তৈরি করা হয়েছে। আমরা ভীষণ রকম ভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ছি এই হিংসা আশ্রিত নীতি বোধের দ্বারা। এই হিংসা আশ্রিত নীতি প্রায়শই দেখা যায় যৌন আক্রমণ কিংবা ধর্ষণের মতো একটি আদিম পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটায়। মানুষের মধ্যে একটি প্রবণতা কাজ করে যে, সে কীভাবে ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাবে এবং নিজেকে ক্ষমতাশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। ভারতীয় সমাজের বিবর্তনের ইতিহাস যার মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পরিবারের কাঠামোর গঠন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে নারীর উপর যৌন অত্যাচারকে একপ্রকার মেনে নেওয়া হয়েছে না না ভাবে। ছাত্ররা যখন এই ঘটনার সুবিচার চাইছে, তখনও তারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে ফেলছে।
ফলে আমাদের নীতিবোধের মধ্যে যৌন অত্যাচার একটি স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে করতে শিখে গিয়েছি। আমাদের পুরাণের গল্পগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাব, পারস্পরিক লড়াই এবং নারীদের প্রতি যৌন অত্যাচারকে কীভাবে ক্ষমতার লড়াইয়ের আঙ্গিকে দেখানো হয়েছে। অহল্যার গল্প মনে করলেই দেখব কীভাবে ইন্দ্র আহল্যার স্বামীর রূপ ধরে ছলনা করে যৌন কর্মে লিপ্ত হন। পদ্মপুরাণ থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে যত পুরাণ লেখা হয়েছে এবং যেখানে আহল্যার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে, সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে আহল্যাকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি স্বরূপ পাথরে পরিণত করা হয়েছে।
একা ওই ভাবে পাথরের মূর্তি করে রেখে স্বামী চলে গিয়েছেন সাধনা করতে। অর্থাৎ নারীকে বারে বারে আলাদা করে রাখা, একা করে দেওয়া, শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। সেখানে ইন্দ্রকে অভিশাপ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এ ভাবে এক ঘরে করে রাখার প্রবণতা কোথায় লক্ষ্য করা যায়নি। আহল্যার গল্পগুলো শেষ হচ্ছে রামের বা বলতে পারি কোনও এক পুরুষের আগমন কিংবা পুরুষের সাহায্য নিয়ে পরিস্থিতি থেকে বেরোনো। নারীর যৌনদাসী বা বস্তুতে থাকা এবং তার মধ্যে মানুষের গুণ উপলব্ধি করার বোধ একমাত্র পুরুষের হাতেই ছেড়ে রাখা হয়েছে। এই সব পুরাণের পাশাপাশি আমাদের দুই মহাকাব্যকে দেখলে এক নিঃশ্বাসে বলা যাবে যে, দুই মহাকাব্যের দুই প্রধান নারী চরিত্র বহুবার যৌন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। সেই ঘটনা আমাদের কাছে বহুবার বহুরূপে উঠে এসেছে। প্রমাণ করেছে যে নারী সমাজের যে স্তর থেকেই আসুক না কেন তাকে এক রকমের যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সমাজের বাকিরা এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই এই নিপীড়নকে খুব সহজ ভাবে দেখবে। এই সহজ ভাবে দেখার পরিণাম আজও আমরা দিচ্ছি। কীভাবে?
আমরা যদি রাবণের বোন সূর্পণখার কাহিনি মনে করার চেষ্টা করি, এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার সেটা হল আমাদের মহাকাব্যগুলি বিশেষ করে, অঞ্চল ভেদে গল্পের মধ্যে কিছু পার্থক্য দেখা যায়। আঞ্চলিক সংস্কৃতির একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। সেই মতো তারা তাদের মহাকাব্যের গল্পগুলি বুনেছেন। আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যখন সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয় তখন ওই আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অম্বেদকর যখন হিন্দু কোড বিল তৈরি করে লোকসভায় পেশ করলেন সবাই নিজেদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকে সরে আসতে চাইলেন না। তাঁদের মনে হয়েছিল, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকে সরে আসা মানে নিজেদের পরিচয় আলাদা করে স্থান পাবে না। তাঁদের অধিকার খর্ব হবে। অর্থাৎ তুলনামূলক ভাবনা চিন্তা করা এবং ভালো বিষয়কে গ্রহণ করা এবং হিন্দু কোড বিলের ক্ষেত্রে নারীদের কথাই আলাদা করে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট পথে এগোলই না।
একা ওই ভাবে পাথরের মূর্তি করে রেখে স্বামী চলে গিয়েছেন সাধনা করতে। অর্থাৎ নারীকে বারে বারে আলাদা করে রাখা, একা করে দেওয়া, শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। সেখানে ইন্দ্রকে অভিশাপ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এ ভাবে এক ঘরে করে রাখার প্রবণতা কোথায় লক্ষ্য করা যায়নি। আহল্যার গল্পগুলো শেষ হচ্ছে রামের বা বলতে পারি কোনও এক পুরুষের আগমন কিংবা পুরুষের সাহায্য নিয়ে পরিস্থিতি থেকে বেরোনো। নারীর যৌনদাসী বা বস্তুতে থাকা এবং তার মধ্যে মানুষের গুণ উপলব্ধি করার বোধ একমাত্র পুরুষের হাতেই ছেড়ে রাখা হয়েছে। এই সব পুরাণের পাশাপাশি আমাদের দুই মহাকাব্যকে দেখলে এক নিঃশ্বাসে বলা যাবে যে, দুই মহাকাব্যের দুই প্রধান নারী চরিত্র বহুবার যৌন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। সেই ঘটনা আমাদের কাছে বহুবার বহুরূপে উঠে এসেছে। প্রমাণ করেছে যে নারী সমাজের যে স্তর থেকেই আসুক না কেন তাকে এক রকমের যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হবে। সমাজের বাকিরা এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই এই নিপীড়নকে খুব সহজ ভাবে দেখবে। এই সহজ ভাবে দেখার পরিণাম আজও আমরা দিচ্ছি। কীভাবে?
আমরা যদি রাবণের বোন সূর্পণখার কাহিনি মনে করার চেষ্টা করি, এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার সেটা হল আমাদের মহাকাব্যগুলি বিশেষ করে, অঞ্চল ভেদে গল্পের মধ্যে কিছু পার্থক্য দেখা যায়। আঞ্চলিক সংস্কৃতির একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। সেই মতো তারা তাদের মহাকাব্যের গল্পগুলি বুনেছেন। আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যখন সমাজ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয় তখন ওই আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অম্বেদকর যখন হিন্দু কোড বিল তৈরি করে লোকসভায় পেশ করলেন সবাই নিজেদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকে সরে আসতে চাইলেন না। তাঁদের মনে হয়েছিল, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকে সরে আসা মানে নিজেদের পরিচয় আলাদা করে স্থান পাবে না। তাঁদের অধিকার খর্ব হবে। অর্থাৎ তুলনামূলক ভাবনা চিন্তা করা এবং ভালো বিষয়কে গ্রহণ করা এবং হিন্দু কোড বিলের ক্ষেত্রে নারীদের কথাই আলাদা করে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট পথে এগোলই না।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৩২: যৌনতা, ক্ষমতা, রাষ্ট্র ও সমাজ
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন
সূর্পণখার ও বালির স্ত্রী তারার গল্প এবং পরবর্তীকালে ঘটা যাওয়া মথুরা রেপ কেস আমাদের সামনে একটি ঐতিহাসিক ধারাবিবরণী তুলে আনে। যার পর্যালোচনা করলে ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, যেগুলি লিঙ্গ নির্মাণ, আধিপত্যবাদী পুরুষ নির্মাণ এবং পরবর্তী কালে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব এই লিঙ্গ নির্মাণে কীভাবে পড়েছে তার একটি ধারণা করা যায়। এই ধারণার গুরুত্ব অসীম। কারণ, এই ধারণাই আমাদের নীতি, নৈতিকতার ধারণাতে প্রভাব ফেলেছিল এবং এখনও ফেলছে। তাই আমাদের এই আলোচনা করার মধ্যে প্রান্তিকতার স্বরকে চেনা এবং তার অনুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে যেতে হবে। তা না হলে স্বাধীনতার চেতনাকে চিন্তে ভুল করব আমরা।
সূর্পণখা তাঁদের পারিবারিক শত্রুর ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। দাদা রাবণ মেনে নিতে পারেননি রাজনৈতিক কারণে। তিনি দু’জনকেই হত্যা করতে উদ্যত হলেন। কারণ, এখানে পারিবারিক শত্রুকে চিরদিন শত্রু করেই রেখে দিতে হবে, সেখানে প্রেম ভালোবাসা বা এরকম আত্মীয়তার সম্পর্ক জায়গা পায় না। রাবণ বোনের স্বামীকে হত্যা করলেন। তারপর বোনের দিকে অগ্রসর হতে গেলে রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী বাধা দেন। রাবণ স্ত্রীর কথা শুনেছিলেন। আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা যে, নারীর কোনও বুদ্ধি নেই বা নারী অন্য নারীর শত্রু হয়। এগুলো আসলে এক ধরনের নির্মাণ এবং এই নির্মাণের গোড়াতে দমনের চেতনা যে প্রবল, সেটাই বারে বারে উঠে আসে। দমনের চেতনা থেকে এক অদ্ভুত স্বাধীনতার চেতনা তৈরি করা হল। মন্দোদরী সূর্পণখাকে বললেন, নিজের জন্য স্বামী খুঁজে নিতে। আপাত ভাবে এই স্বাধীনতা দিয়ে সূর্পণখাকে সান্ত্বনা দেওয়া হল। সূর্পণখা তাঁর মৃত স্বামীর আত্মীয়দের সাহায্যে বনে বাদাড়ে জঙ্গলে নিজের জন্য সঙ্গী খুঁজতে শুরু করলেন, আর সেখানেই দেখা হল রামের সঙ্গে।
রাম রাজি হলেন না। লক্ষ্মণও রাজি হননি। এখানেই গল্পের মোড় অন্য দিকে ঘুরে গেল । সূর্পণখা সীতাকে আক্রমণ করে বসলেন। লক্ষ্মণ সীতাকে বাঁচাতে গিয়ে সূর্পণখার নাক কেটে ফেললেন। সীতা সেই আক্রমণের মুখে কী করেছিলেন তার কোনও বর্ণনা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। কারণ, পুরুষ বা আগ্রাসী পুরুষ রক্ষা করতে আসবে, নারী নিজের অধিকার রক্ষা করতে এগবে না। স্বাধীন চিন্তা সে কিছুতেই করবে না। সূর্পণখা যতই নিজের স্বাধীনতা প্রকাশ করুক না কেন, সেটা রক্ষা করার জন্য সীতার মতামতের দরকার ছিল বইকি।
সূর্পণখা তাঁদের পারিবারিক শত্রুর ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। দাদা রাবণ মেনে নিতে পারেননি রাজনৈতিক কারণে। তিনি দু’জনকেই হত্যা করতে উদ্যত হলেন। কারণ, এখানে পারিবারিক শত্রুকে চিরদিন শত্রু করেই রেখে দিতে হবে, সেখানে প্রেম ভালোবাসা বা এরকম আত্মীয়তার সম্পর্ক জায়গা পায় না। রাবণ বোনের স্বামীকে হত্যা করলেন। তারপর বোনের দিকে অগ্রসর হতে গেলে রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী বাধা দেন। রাবণ স্ত্রীর কথা শুনেছিলেন। আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা যে, নারীর কোনও বুদ্ধি নেই বা নারী অন্য নারীর শত্রু হয়। এগুলো আসলে এক ধরনের নির্মাণ এবং এই নির্মাণের গোড়াতে দমনের চেতনা যে প্রবল, সেটাই বারে বারে উঠে আসে। দমনের চেতনা থেকে এক অদ্ভুত স্বাধীনতার চেতনা তৈরি করা হল। মন্দোদরী সূর্পণখাকে বললেন, নিজের জন্য স্বামী খুঁজে নিতে। আপাত ভাবে এই স্বাধীনতা দিয়ে সূর্পণখাকে সান্ত্বনা দেওয়া হল। সূর্পণখা তাঁর মৃত স্বামীর আত্মীয়দের সাহায্যে বনে বাদাড়ে জঙ্গলে নিজের জন্য সঙ্গী খুঁজতে শুরু করলেন, আর সেখানেই দেখা হল রামের সঙ্গে।
রাম রাজি হলেন না। লক্ষ্মণও রাজি হননি। এখানেই গল্পের মোড় অন্য দিকে ঘুরে গেল । সূর্পণখা সীতাকে আক্রমণ করে বসলেন। লক্ষ্মণ সীতাকে বাঁচাতে গিয়ে সূর্পণখার নাক কেটে ফেললেন। সীতা সেই আক্রমণের মুখে কী করেছিলেন তার কোনও বর্ণনা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। কারণ, পুরুষ বা আগ্রাসী পুরুষ রক্ষা করতে আসবে, নারী নিজের অধিকার রক্ষা করতে এগবে না। স্বাধীন চিন্তা সে কিছুতেই করবে না। সূর্পণখা যতই নিজের স্বাধীনতা প্রকাশ করুক না কেন, সেটা রক্ষা করার জন্য সীতার মতামতের দরকার ছিল বইকি।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৩: কানে ব্যথা? তেল দেবেন কি?
প্রথম আলো, পর্ব-১: বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি জানেন?
কিন্তু কী হল? সূর্পণখাকে দেখান হল রাবণের কাছে গিয়ে নালিশ করতে। সূর্পণখা একা লড়াই করার থেকে ভেবেছেন দাদার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। কারণ, রাম ও লক্ষ্মণ একযোগে তাকে প্রতিহত করতে চেয়েছে। গল্পে দেখান হল, রাবণ তৎক্ষণাৎ সীতাকে হরণ করে রাম এবং লক্ষ্মণকে সায়েস্তা করতে চাইল। বাকি গল্প আমরা জেনেছি ঠিকই, কিন্তু যে জায়গায়টা আমরা ঠিক মতো খেয়াল করিনি সেটা হল, সূর্পণখা লঙ্কাতেই কাটিয়েছিলেন তার পরবর্তী জীবন। অর্থাৎ তার জীবনে সীতার মতো অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। জীবনের শুরুতে রাজনীতির বলি হওয়া জীবন বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। মন্দোদরীর মত অনুযায়ী সূর্পণখার ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
বাল্মীকি রামায়াণ অবশ্য সূর্পণখার জীবনের গল্পকে বিশেষ আমল দেননি। সূর্পণখার সমসাময়িক তারা, বালির স্ত্রীর কথা পাওয়া যায়। বালি আর সুগ্রীবের লড়াইয়ের কথা আমরা জানি। এবং সুগ্রীব বালির স্ত্রীকে পেতে চেয়েছেন সেই গল্প আমরা জানি। কিন্তু আঞ্চলিক রামায়াণগুলি তুলনামূলক আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, তারা তার স্বামী বালির মৃত্যুর জন্য রামকে দায়ী করেছিলেন। রামকে সেই জন্য অভিশাপ দিয়েছিলেন যে সীতাকে ফিরে পেলেও তার সঙ্গে থাকতে পারবে না। সীতা পৃথিবীতে বা পাতালে নিজের মায়ের কাছে ফিরে চলে যাবে। “ রামাভাতারম”, এবং ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রামায়ণে আমরা দেখছি, সুগ্রীব বালির মৃত্যুর পর বিয়ে করেনি। বরং মাতৃ জ্ঞানে সন্মান দিয়েছেন। আবার টিকাকারদের মনে হয়েছে মৃত ভায়ের স্ত্রীকে বিয়ে করা একটি আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। আবার বলা যেতে পারে, যদি আমরা এই বিবাহের ঘটনাকে মেনে নিয়ে থাকি, তাহলে এই বিয়ে একটি রাজনৈতিক বিয়ে। সুগ্রীব এবং তারা দু’জনেই রাজনৈতিক কারণে এই বিয়েকে পরিণতি দিয়েছিল। রাম কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে কোনও আপত্তি জানাননি। তারা এই বিয়ের পরেও নিজের বুদ্ধি এবং কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় রাখতে পেরেছেন। তিনি নিজের মতামতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছেন। লক্ষ্মণকে শান্ত করতে গিয়ে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়ে ছিলেন সেগুলি তার প্রমাণ রাখে। আমরা তারার এই বিশেষ দিকগুলিকে উপেক্ষা করেছি বারে বারে এবং তার যৌন স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন করে গিয়েছি।
সূর্পণখা ও তারার পর বহু জল গঙ্গা, কাবেরি, গোদাবরী নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমাদের নারীদের কোন দিকটা দেখতে হবে তাই নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটেনি। বরং দখলের, দমনের চেতনার সঙ্গে কাম-বাসনাকে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রেখেছি। আর বারে বারে দাঁত মুখ বার করেছি নিজেদের আগ্রাসী পুরুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। এই আগ্রাসি পুরুষের মনভাবের পরিবর্তন দেখি পরবর্তীকালে কিন্তু সেই পরিবর্তন আসলে শুধুই রূপের পরিবর্তন। আসল রূপ অটুট রয়ে গিয়েছে। মনের মধ্যে যুগে যুগে গেঁথে যাওয়া আগ্রাসী ধারণা এখন বহু ধারায় এবং রঙ্গে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। আমাদের স্বাধীন ভাবে সেগুলকে বুঝতে হবে।
বাল্মীকি রামায়াণ অবশ্য সূর্পণখার জীবনের গল্পকে বিশেষ আমল দেননি। সূর্পণখার সমসাময়িক তারা, বালির স্ত্রীর কথা পাওয়া যায়। বালি আর সুগ্রীবের লড়াইয়ের কথা আমরা জানি। এবং সুগ্রীব বালির স্ত্রীকে পেতে চেয়েছেন সেই গল্প আমরা জানি। কিন্তু আঞ্চলিক রামায়াণগুলি তুলনামূলক আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, তারা তার স্বামী বালির মৃত্যুর জন্য রামকে দায়ী করেছিলেন। রামকে সেই জন্য অভিশাপ দিয়েছিলেন যে সীতাকে ফিরে পেলেও তার সঙ্গে থাকতে পারবে না। সীতা পৃথিবীতে বা পাতালে নিজের মায়ের কাছে ফিরে চলে যাবে। “ রামাভাতারম”, এবং ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রামায়ণে আমরা দেখছি, সুগ্রীব বালির মৃত্যুর পর বিয়ে করেনি। বরং মাতৃ জ্ঞানে সন্মান দিয়েছেন। আবার টিকাকারদের মনে হয়েছে মৃত ভায়ের স্ত্রীকে বিয়ে করা একটি আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। আবার বলা যেতে পারে, যদি আমরা এই বিবাহের ঘটনাকে মেনে নিয়ে থাকি, তাহলে এই বিয়ে একটি রাজনৈতিক বিয়ে। সুগ্রীব এবং তারা দু’জনেই রাজনৈতিক কারণে এই বিয়েকে পরিণতি দিয়েছিল। রাম কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে কোনও আপত্তি জানাননি। তারা এই বিয়ের পরেও নিজের বুদ্ধি এবং কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় রাখতে পেরেছেন। তিনি নিজের মতামতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছেন। লক্ষ্মণকে শান্ত করতে গিয়ে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়ে ছিলেন সেগুলি তার প্রমাণ রাখে। আমরা তারার এই বিশেষ দিকগুলিকে উপেক্ষা করেছি বারে বারে এবং তার যৌন স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন করে গিয়েছি।
সূর্পণখা ও তারার পর বহু জল গঙ্গা, কাবেরি, গোদাবরী নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমাদের নারীদের কোন দিকটা দেখতে হবে তাই নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটেনি। বরং দখলের, দমনের চেতনার সঙ্গে কাম-বাসনাকে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রেখেছি। আর বারে বারে দাঁত মুখ বার করেছি নিজেদের আগ্রাসী পুরুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। এই আগ্রাসি পুরুষের মনভাবের পরিবর্তন দেখি পরবর্তীকালে কিন্তু সেই পরিবর্তন আসলে শুধুই রূপের পরিবর্তন। আসল রূপ অটুট রয়ে গিয়েছে। মনের মধ্যে যুগে যুগে গেঁথে যাওয়া আগ্রাসী ধারণা এখন বহু ধারায় এবং রঙ্গে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। আমাদের স্বাধীন ভাবে সেগুলকে বুঝতে হবে।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১০: ধনু হেসে বলে, শর, জান না সে কথা—আমারি অধীন জেনো তব স্বাধীনতা
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৬: ঐতিহাসিক বিরল বিবাহ ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
আমরা যদি ঔপনিবেশিক আমলের পুরুষকে আলাদা করি, তাহলে বলতে হয় ইউরোপীয় ভাবনায় স্বাধীনতার ধারণা পুষ্ট পুরুষ কিন্তু সমাজে অভিজাত গোষ্ঠী ভুক্ত ছিলেন। তবুও তারা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে দূরে সরিয়ে রেখে নারীদের স্বাধীনতার ধারণাতে নিজস্ব ঘরানার প্রবেশ ঘটাতে পারেননি। তাদের সবাইকে শাস্ত্র ঘেঁটে শাস্ত্রীয় উপায় বের করতে হয়েছিল। সেক্ষেত্রে বিধবা বিবাহ চালু এবং সতী প্রথার নিবারণ ঘটান গিয়েছিল অনেকটাই। কিন্তু যৌন প্রক্রিয়ার সম্মতি এবং গর্ভপাত করানোর অনুমতি নিয়ে আজও আমরা লড়ে যাচ্ছি। আসলে ক্ষমতার প্রয়োগ শারীরিক ভাবে না হলে আমরা নিয়ন্ত্রণ করব কি করে । মনের নিয়ন্ত্রণ করা মানে শরীর কে অগ্রাহ্য করা। দেশ শাসন থেকে নাগরিক শাসন ভারতে এখনও শারীরিক ।
মথুরা নামের আঠারো বয়েস না হওয়া আদিবাসী মেয়েটি দাদার অমতে অন্য একটি ছেলেকে ভালোবাসলে দাদা বোনকে বাঁচানর জন্য পুলিশের সাহায্য চায়। কিন্তু পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করার নামে নিজেরাই ধর্ষণ করে। কারণ তাদের মনে হয়েছিল একটি আদিবাসী মেয়ের যার যৌন সম্পর্ক রয়েছে অন্য পুরুষের সঙ্গে তখন তার সঙ্গে যৌন কর্মে লিপ্ত হওয়া কোনও অপরাধ নয়। প্রথমে দেশের আদালত এই দুই পুলিশকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের নাগরিক দের স্বাধীন চেতনা যখন লড়াই করে দমনমূলক চেতনার সঙ্গে তখন দেশের আইন বদলাতে আমরাই বাধ্য হই। তাই দেখা গিয়েছে আমাদের চেতনার স্রোত গতি পরিবর্তন করলেই আমাদের শারীরিক ক্ষমতার প্রয়োগ কিংবা যৌন নিপীড়ন করা থেকে নিজেরাই বিরত হতে পারি।
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত আমাদের আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলছে যে, আমাদের চেতনা কেন এখনও দমনমূলক হয়ে রয়েছে। আমরা যৌন আক্রমণ করার জন্য এখন শুধু নারী নয়, যারাই আগ্রাসী পুরুষ হতে চাইবে না, তাঁদেরকেও ক্রমাগত আক্রমণ করে যাব। এই আক্রমণের তীব্রতা শুধু মৃত্যুতে শেষ হল, তাই নয় একটি আগ্রাসী চেতনাকে স্থায়ী করে জিইয়ে রাখল। তা না হলে তার সহপাঠীরাও নিজেদের মধ্যে সুবিচার চেয়ে লড়াইতে জড়িয়ে পড়ত না।
আক্রমণ শুধু নয়, যৌন আক্রমণের চেতনা ধীরে ধীরে আমাদের স্বাধীন চেতনাকে এতটাই পিছিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা সুবিচার চাইতে গিয়ে আবার আক্রমণ করছি, আবারও বলছি সাহায্য করতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছে। লঘু অপরাধে লোক বেশি বলছে, আরও বলছি রাঘব বোয়াল একই কাজ করে বেরিয়ে গেল। কিন্তু সাধারণ লোক ফেঁসে গেল বেশি। কিন্তু দিনের শেষে কেউ বলছি না, আমাদের চেতনার স্বাধীনতা আসুক আগে। আমরা হুঁশ সহযোগে একটু ভাবি কেন নির্যাতন করব বা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাব।
মথুরা নামের আঠারো বয়েস না হওয়া আদিবাসী মেয়েটি দাদার অমতে অন্য একটি ছেলেকে ভালোবাসলে দাদা বোনকে বাঁচানর জন্য পুলিশের সাহায্য চায়। কিন্তু পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করার নামে নিজেরাই ধর্ষণ করে। কারণ তাদের মনে হয়েছিল একটি আদিবাসী মেয়ের যার যৌন সম্পর্ক রয়েছে অন্য পুরুষের সঙ্গে তখন তার সঙ্গে যৌন কর্মে লিপ্ত হওয়া কোনও অপরাধ নয়। প্রথমে দেশের আদালত এই দুই পুলিশকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের নাগরিক দের স্বাধীন চেতনা যখন লড়াই করে দমনমূলক চেতনার সঙ্গে তখন দেশের আইন বদলাতে আমরাই বাধ্য হই। তাই দেখা গিয়েছে আমাদের চেতনার স্রোত গতি পরিবর্তন করলেই আমাদের শারীরিক ক্ষমতার প্রয়োগ কিংবা যৌন নিপীড়ন করা থেকে নিজেরাই বিরত হতে পারি।
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত আমাদের আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলছে যে, আমাদের চেতনা কেন এখনও দমনমূলক হয়ে রয়েছে। আমরা যৌন আক্রমণ করার জন্য এখন শুধু নারী নয়, যারাই আগ্রাসী পুরুষ হতে চাইবে না, তাঁদেরকেও ক্রমাগত আক্রমণ করে যাব। এই আক্রমণের তীব্রতা শুধু মৃত্যুতে শেষ হল, তাই নয় একটি আগ্রাসী চেতনাকে স্থায়ী করে জিইয়ে রাখল। তা না হলে তার সহপাঠীরাও নিজেদের মধ্যে সুবিচার চেয়ে লড়াইতে জড়িয়ে পড়ত না।
আক্রমণ শুধু নয়, যৌন আক্রমণের চেতনা ধীরে ধীরে আমাদের স্বাধীন চেতনাকে এতটাই পিছিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা সুবিচার চাইতে গিয়ে আবার আক্রমণ করছি, আবারও বলছি সাহায্য করতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছে। লঘু অপরাধে লোক বেশি বলছে, আরও বলছি রাঘব বোয়াল একই কাজ করে বেরিয়ে গেল। কিন্তু সাধারণ লোক ফেঁসে গেল বেশি। কিন্তু দিনের শেষে কেউ বলছি না, আমাদের চেতনার স্বাধীনতা আসুক আগে। আমরা হুঁশ সহযোগে একটু ভাবি কেন নির্যাতন করব বা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাব।
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।