ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
আমাদের পুরাণের গল্পের একটি মুখ্য আকর্ষণ সতীর একান্নপিঠ নিয়ে গল্প। আমরা ছোট থেকে গল্পটি অনুমান করি যে, কীভাবে শিব ঠাকুর যজ্ঞের আগুনে আহুতি দেওয়া সতীর দেহ নিয়ে প্রলয় নৃত্য নাচছেন। আসলে তিনি বিচার চাইছেন এই বলে যে, পিতার অমতে বিয়ে করার অপরাধে প্রতিশোধস্পৃহা নিজের সন্তানকে কখনও হত্যা করতে দিতে পারে না। সমাজে ন্যায় অন্যায়ের বিভাজন এতটাই কঠিন, বাবা সন্তানকে বা বলা ভালো কন্যা সন্তানকেও হত্যা করতে পারে যদি সেই মেয়ে তাঁর মতের বিরোধিতা করে।
এই পুরাণ কালের গল্প বা বলা ভালো নারীদের আচরণীয়, পালনীয় রীতি নীতির খুব বেশি পরিমার্জন দেখা যায়নি। প্রমাণ অনেক আছে। তবে কিছুদিন আগেই এক তরুণী ইঞ্জিনিয়ার শ্বশুর বাড়ির সতী হওয়ার চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসে। যে দেশে আমরা সংবিধানে বলেছি, স্বাধীন ভাবে সবাই মিলে বেঁচে থাকব এবং এই বেঁচে থাকা নাগরিকদের অধিকার, সেখানে কাউকে সতী হতে প্ররোচিত করা আমাদের দমনমূলক মানসিকতার পরিচয় দেয়। আমরা এতটাই ক্ষমতা কেন্দ্রিক যে, আমরা আসলে কোথায় দমনমূলক আইন প্রয়োগ করব সেটাই বুঝে উঠতে পারি না। এর ফলে যা হয় সংবিধান বর্ণিত সাম্যের অধিকার আমাদের কাছে স্বাদহীন খাবারের মতো মনে হয়। দমনের উত্তেজনা না থাকলে জীবন বড় পানসে ঠেকে।
সেই কারণে আমাদের সমাজে আমরা সবসময় মাঝখানে সিঁথি কেটে দুই পাশে যেমন তেলে গোছানো চুল বেঁধে রাখতে পছন্দ করি, তেমনই আমাদের মনে সবসময় ঘোরা ফেরা করে মেয়েদের হয় সতী না হয় অসতী বলব। সিঁথি কাটা চুল সরিয়ে একটু শ্যাম্পু করা চুল খুলে হাওয়াতে উড়তে দিয়েছ কি দাওনি, অমনি মন্তব্য উড়ে আসবে, এই অসতী আচরণ যেন আমরা না করি। না হলে সমাজে বলবে আমরা কুলটা বা ভ্রষ্টা। আর এই সতী আর অসতীর মাঝখানে কেউ নেই। হয় তুমি বিনা প্রতিবাদে মেনে নাও, নয়তো প্রস্তুত হও সমাজে লাঞ্ছিত হতে। আর লাঞ্ছনার শেষ ধাপে তোমাকে সন্ধি করতে হবে। সবসময় এই সন্ধির শর্ত একপেশে আর প্রচণ্ড দমনমূলক। সমাজ যেন সবসময় তাই চরম ভাবাপন্ন হয়ে থাকতে পছন্দ করে।
এই পুরাণ কালের গল্প বা বলা ভালো নারীদের আচরণীয়, পালনীয় রীতি নীতির খুব বেশি পরিমার্জন দেখা যায়নি। প্রমাণ অনেক আছে। তবে কিছুদিন আগেই এক তরুণী ইঞ্জিনিয়ার শ্বশুর বাড়ির সতী হওয়ার চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসে। যে দেশে আমরা সংবিধানে বলেছি, স্বাধীন ভাবে সবাই মিলে বেঁচে থাকব এবং এই বেঁচে থাকা নাগরিকদের অধিকার, সেখানে কাউকে সতী হতে প্ররোচিত করা আমাদের দমনমূলক মানসিকতার পরিচয় দেয়। আমরা এতটাই ক্ষমতা কেন্দ্রিক যে, আমরা আসলে কোথায় দমনমূলক আইন প্রয়োগ করব সেটাই বুঝে উঠতে পারি না। এর ফলে যা হয় সংবিধান বর্ণিত সাম্যের অধিকার আমাদের কাছে স্বাদহীন খাবারের মতো মনে হয়। দমনের উত্তেজনা না থাকলে জীবন বড় পানসে ঠেকে।
সেই কারণে আমাদের সমাজে আমরা সবসময় মাঝখানে সিঁথি কেটে দুই পাশে যেমন তেলে গোছানো চুল বেঁধে রাখতে পছন্দ করি, তেমনই আমাদের মনে সবসময় ঘোরা ফেরা করে মেয়েদের হয় সতী না হয় অসতী বলব। সিঁথি কাটা চুল সরিয়ে একটু শ্যাম্পু করা চুল খুলে হাওয়াতে উড়তে দিয়েছ কি দাওনি, অমনি মন্তব্য উড়ে আসবে, এই অসতী আচরণ যেন আমরা না করি। না হলে সমাজে বলবে আমরা কুলটা বা ভ্রষ্টা। আর এই সতী আর অসতীর মাঝখানে কেউ নেই। হয় তুমি বিনা প্রতিবাদে মেনে নাও, নয়তো প্রস্তুত হও সমাজে লাঞ্ছিত হতে। আর লাঞ্ছনার শেষ ধাপে তোমাকে সন্ধি করতে হবে। সবসময় এই সন্ধির শর্ত একপেশে আর প্রচণ্ড দমনমূলক। সমাজ যেন সবসময় তাই চরম ভাবাপন্ন হয়ে থাকতে পছন্দ করে।
সমাজে মানুষকে দেগে দেওয়ার প্রচেষ্টা মানে— কেউ কিছু করলে বা কিছু নিয়ম না মেনে চললে সমাজের সদস্য হিসেবে থাকা যাবে না।কথায় কথায় সমাজের সদস্যপদ বাতিলের হুমকি কেন দেওয়া হয়? নারীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে সমাজ কেন এত সক্রিয় থাকে?
এই বাহিরের শৃঙ্খলা যেমন সতীকে অপমান করা বা চুল খুলে রাখলে অলক্ষ্মী বলা এগুলোর আড়ালে রয়েছে কুমারিত্ব বা ভার্জিন নারীকে পবিত্র নারীর মর্যাদা দেওয়ার রাজনীতি। আর এই রাজনীতির মূল তীরটাই তাক করা আছে সমাজে পিতৃত্ব নির্ধারণ প্রক্রিয়া এবং তার সঙ্গে নারীর শরীরের উপর মালিকানা আদায় করা। এই পিতৃত্ব নির্ধারণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চাওয়া হয় যেন প্রকৃত উত্তরাধিকার পিতার সম্পত্তির মালিকানা পেতে পারে। নারীর শরীরের উপরে মালিকানার স্ট্যাম্প না দিতে পারলে নিজের রক্তের উত্তরাধিকার জোর করে আদায় করা যাবে না। নারীকে ততক্ষণ সন্তানের জন্ম দিয়ে যেতে হবে, যতক্ষণ না তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে পারছেন। সন্তানের জন্মের পাশাপাশি নারীকে শারীরিক এবং অন্যায় পরিষেবাও দিয়ে যেতে হবে। এই যে বাধ্য করা হচ্ছে নারীকে বিনা প্রশ্নে পরিষেবা দিয়ে যাওয়ার জন্য তার জন্যই খুব শক্তিশালি অস্ত্র দরকার যা দিয়ে নারীকে সবসময় বাধ্য করা যাবে পিতৃতন্ত্রের কথা শুনতে।
এই বাহিরের শৃঙ্খলা যেমন সতীকে অপমান করা বা চুল খুলে রাখলে অলক্ষ্মী বলা এগুলোর আড়ালে রয়েছে কুমারিত্ব বা ভার্জিন নারীকে পবিত্র নারীর মর্যাদা দেওয়ার রাজনীতি। আর এই রাজনীতির মূল তীরটাই তাক করা আছে সমাজে পিতৃত্ব নির্ধারণ প্রক্রিয়া এবং তার সঙ্গে নারীর শরীরের উপর মালিকানা আদায় করা। এই পিতৃত্ব নির্ধারণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চাওয়া হয় যেন প্রকৃত উত্তরাধিকার পিতার সম্পত্তির মালিকানা পেতে পারে। নারীর শরীরের উপরে মালিকানার স্ট্যাম্প না দিতে পারলে নিজের রক্তের উত্তরাধিকার জোর করে আদায় করা যাবে না। নারীকে ততক্ষণ সন্তানের জন্ম দিয়ে যেতে হবে, যতক্ষণ না তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে পারছেন। সন্তানের জন্মের পাশাপাশি নারীকে শারীরিক এবং অন্যায় পরিষেবাও দিয়ে যেতে হবে। এই যে বাধ্য করা হচ্ছে নারীকে বিনা প্রশ্নে পরিষেবা দিয়ে যাওয়ার জন্য তার জন্যই খুব শক্তিশালি অস্ত্র দরকার যা দিয়ে নারীকে সবসময় বাধ্য করা যাবে পিতৃতন্ত্রের কথা শুনতে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৩: বিবাহ প্রতিষ্ঠানে অবিশ্বাস কিংবা সম্পর্কে দাঁড়ি
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২: “যে ‘কেবল’ পালিয়ে বেড়ায়”
সতীর দেহ নিয়ে শিব বিক্ষোভ দেখালেন কিন্তু তাতে বাকি দেবতারা প্রমাদ গুনলেন। তাঁরা বুঝলেন শিবের এই দুঃখকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু শিবের কথা পুরপুরি শুনে নেওয়া যায় না। সেটা শুনে নিলে নারীর প্রতিটি দাবি মেনে নিতে হয়। নারীর শরীর বা বলা ভালো তার প্রজনন ক্ষমতার উপর পুরুষের অধিকার চলে গেলে পৌরুষের প্রতীক যেমন ক্ষমতার বিস্তার রাজ্য স্থাপনে, সম্পদ আহরণে সেগুলোর কী হবে? সুতরাং পৌরুষের প্রতীককে বজায় রাখতে গেলে নারীর শরীরে আগে ক্ষমতা বিস্তার করতে হবে। তাই সতীর শরীর টুকর করে কেটে ছড়িয়ে দেওয়া হল বিশ্ব চরাচরে সুদর্শন চক্র দিয়ে । সবাই নিশ্চিন্ত হল যে শিব আর বিচার চাইবে না।
এখনও অবধি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নারী শরীরে ক্ষমতা বিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যখন মানুষ গাছপালা, পশুপাখিকে গৃহপালিত করে তুলছিল এবং নিজেদের মূল খাদ্যাভাসের মধ্যে আনতে শুরু করেছিল সেই সমস্ত গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখিকে। আমাদের ছোটবেলার ইতিহাস বইতে একবার ফিরে যান। সেখানে কীভাবে গুহা মানুষ ধীরে ধীরে গৃহ নির্মাণ করে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছিল সেই অধ্যায়ে আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। সেই সময় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল তা হল, গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখিকে মানুষের ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা। অর্থাৎ কীভাবে গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখিকে গুছিয়ে রাখতে হবে বাড়ির আসে পাশে। সেই সঙ্গে বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে রসদ যেমন কাঠ ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। আবার সেই রসদ ফুরিয়ে গেলে অপেক্ষা করতে হবে নতুন ভাবে সেই জঙ্গল গড়ে ওঠা অবধি। অর্থাৎ অপেক্ষা করতে হবে প্রকৃতির ভরে ওঠার প্রক্রিয়ার উপর। কিন্তু আমরা এখন প্রকৃতি বা নারী কারোর কাছেই অপেক্ষা করতে চাই না।
এখনও অবধি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নারী শরীরে ক্ষমতা বিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যখন মানুষ গাছপালা, পশুপাখিকে গৃহপালিত করে তুলছিল এবং নিজেদের মূল খাদ্যাভাসের মধ্যে আনতে শুরু করেছিল সেই সমস্ত গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখিকে। আমাদের ছোটবেলার ইতিহাস বইতে একবার ফিরে যান। সেখানে কীভাবে গুহা মানুষ ধীরে ধীরে গৃহ নির্মাণ করে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছিল সেই অধ্যায়ে আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। সেই সময় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল তা হল, গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখিকে মানুষের ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা। অর্থাৎ কীভাবে গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখিকে গুছিয়ে রাখতে হবে বাড়ির আসে পাশে। সেই সঙ্গে বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে রসদ যেমন কাঠ ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। আবার সেই রসদ ফুরিয়ে গেলে অপেক্ষা করতে হবে নতুন ভাবে সেই জঙ্গল গড়ে ওঠা অবধি। অর্থাৎ অপেক্ষা করতে হবে প্রকৃতির ভরে ওঠার প্রক্রিয়ার উপর। কিন্তু আমরা এখন প্রকৃতি বা নারী কারোর কাছেই অপেক্ষা করতে চাই না।
আরও পড়ুন:
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-২: আইজেনস্টাইন, যুদ্ধজাহাজ ও মন্তাজ
চলো যাই ঘুরে আসি: রোমের ভ্যাটিকান কথা
এ ভাবে জমির ব্যবহারের ব্যবস্থাপনাও শুরু হল। এই ব্যবস্থাপনার মধ্যে পুরুষ এবং নারী দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। পুরুষ দূরে খাবার খুঁজতে না গিয়ে গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখির মধ্যে থেকে বেছে নিতে শুরু করে। আবার অবসর সময়ে শিকারে যাওয়া বন্ধ করল না, কারণ গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখির জন্য চরার জমি, আবাদের জমি দখল নেওয়ার প্রয়োজনে শিকার পেলে বন্যপশুর স্বাদ পাওয়া আর মানসিক ও শারীরিক আনন্দ পাওয়াও হল।
অন্য দিকে নারীদের মধ্যে খাবার খোঁজার প্রবণতা কমতে শুরু করল। তারা রান্নাঘর গুছিয়ে রাখা, সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা এবং রান্নার উনুন তৈরি করতে শুরু করে দিল। এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে নারীদের শরীরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিল। কী সেই পরিবর্তন? নারীর শরীরের বক্ষ ও স্তনের গঠনের এবং জননতন্ত্রের গঠন কাঠামোর মধ্য পরিবর্তন দেখা দিল। এই পরিবর্তনের প্রভাবে নারীর সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হল। তারা বাড়ির মধ্যে বেশি সময় ধরে থাকা শুরু করল। নারীর গতিশীল জীবনে একটা বড় রকমের পরিবর্তন দেখা দিল। তাদের রান্নাঘরে তখন আস্তে শুরু করেছে আটা, চাল অর্থাৎ কার্বহাইড্রেড খাবার।
এই খাবারের গুণে নারী শরীরে আবারও পরিবর্তন দেখা দিল। শরীরের ডিম্ব স্ফুটনের সময়ের পরিবর্তন দেখা দিল। ফলে বেশি সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হয়ে উঠল। অন্যদিকে জনসখ্যা বৃদ্ধি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীরা বাড়িতে থাকার ফলে সেবা দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেল। অন্য দিকে বৃদ্ধি পাওয়া জনসখ্যা নতুন উদ্যমে জমি ও গৃহপালিত পশুর ব্যাবস্থা করতে লেগে পড়ল ।পুরুষের বাড়ির মধ্যের কাজ কমে গেল। ফলে এ বার সে বেরিয়ে পড়ল জমি দখল নিতে আর নতুন উদ্ভিত এবং প্রাণীকে গৃহপালিত করে তুলতে। শুরু হল রাজায় রাজায় যুদ্ধ।
অন্য দিকে নারীদের মধ্যে খাবার খোঁজার প্রবণতা কমতে শুরু করল। তারা রান্নাঘর গুছিয়ে রাখা, সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা এবং রান্নার উনুন তৈরি করতে শুরু করে দিল। এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে নারীদের শরীরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিল। কী সেই পরিবর্তন? নারীর শরীরের বক্ষ ও স্তনের গঠনের এবং জননতন্ত্রের গঠন কাঠামোর মধ্য পরিবর্তন দেখা দিল। এই পরিবর্তনের প্রভাবে নারীর সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হল। তারা বাড়ির মধ্যে বেশি সময় ধরে থাকা শুরু করল। নারীর গতিশীল জীবনে একটা বড় রকমের পরিবর্তন দেখা দিল। তাদের রান্নাঘরে তখন আস্তে শুরু করেছে আটা, চাল অর্থাৎ কার্বহাইড্রেড খাবার।
এই খাবারের গুণে নারী শরীরে আবারও পরিবর্তন দেখা দিল। শরীরের ডিম্ব স্ফুটনের সময়ের পরিবর্তন দেখা দিল। ফলে বেশি সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হয়ে উঠল। অন্যদিকে জনসখ্যা বৃদ্ধি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীরা বাড়িতে থাকার ফলে সেবা দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেল। অন্য দিকে বৃদ্ধি পাওয়া জনসখ্যা নতুন উদ্যমে জমি ও গৃহপালিত পশুর ব্যাবস্থা করতে লেগে পড়ল ।পুরুষের বাড়ির মধ্যের কাজ কমে গেল। ফলে এ বার সে বেরিয়ে পড়ল জমি দখল নিতে আর নতুন উদ্ভিত এবং প্রাণীকে গৃহপালিত করে তুলতে। শুরু হল রাজায় রাজায় যুদ্ধ।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৫: গায়ের জামা হাওয়ায় উড়বে বলে দেহের সঙ্গে ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখতেন
ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৬: সাদা ধবধবে মার্বেলের ওপর ভিজে পায়ের ছাপ ওয়াশরুম থেকে ঘরের দিকে গিয়েছে
রান্নাঘর আর নারীর মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হতে শুরু করল। আর সেটাই হয়ে উঠল পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অস্ত্র। এই অস্ত্রকেই বারে বারে কাজে লাগান হয়েছে নারীকে দমন করার জন্য। সেই অস্ত্রের ধার বজায় রাখতে প্রজনন অঙ্গকে বার বার আক্রমণ করা হয়েছে। নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর বাড়ি হয়ে উঠেছে একটি আস্ত জেলখানা। পুরুষের কাছে গৃহপালিত গাছপালা, পশুপাখি এবং নারী ক্রমেই সম্পদে পরিণত হয়েছে। ফলে এক নতুন রাজনৈতিক-অর্থনীতির জন্ম হয়েছিল। এই নতুন অর্থনীতির একটি আগ্রাসী দিক আছে। সেই আগ্রাসনের হাত থেকে মানুষ নিজেই বেঁচে বেরতে পারেনি।
এই আগ্রাসনের কারণ নতুন জমি দরকার, জনসংখ্যা বাড়ছে, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বাড়ছে, তাদের থাকার জায়গা দরকার। ক্রমে এই জায়গা দখল শুরু হল অশ্বমেধ যজ্ঞের মধ্যে দিয়ে। ঘোড়া যে পথ দিয়ে যাবে সেই পথের সব জমি হবে আমার। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে এল সাম্রাজ্য আর উপনিবেশ স্থাপন। নারীর থেকে নিতে হবে শ্রমিক, নিতে হবে দখলদার পুত্র। ফলে নারীকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চাপ তৈরি হল। ধর্ম এবং রাজনীতি জড়িয়ে গেল নারীর শরীরের উপরের দখলের রাজনীতিতে। ক্রমে তা আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে গেল।
এই নতুন অর্থনীতিতে নারীকে সম্পদে পরিণত করার ফলে নারীর গুণমান অন্যান্য সম্পদের মত নির্ধারণ করা শুরু হল। বিবাহ ব্যবস্থার মধ্যে ফুলশয্যার মতো রীতি তৈরি করা হল সমাজের সবার সামনে তার গুণমান অর্থাৎ তার যে যনি অক্ষত তার প্রমাণ দিতে হবে বলে।
নারীর মূল্য তার অক্ষত যনিতে এসে থামল। আজকের পুরুষ চায় নারী তার মুঠো ফোন খুলে দেখাবে সে অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা বলেনি তো? নারী পা, মাথা ঢাকা পোশাক পরে থাকবে। তার পরেও সে সবসময় কেঁদে ক্ষমা ভিক্ষা করবে পুরুষের কাছে। নিজেকে সতী প্রমাণ করার জন্য। না হলে অত্যাচারের বন্যা নেবে আসবে। বলা হবে, সতী না হলে বেশ্যা হয়ে যাও। কিন্ত বলা হবে না যে, তুমি যুক্তির পথে চলো।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
ঋণ স্বীকার
Swanson, H. A., Lien, M. E., & Ween, G. B. (Eds.). (2018). Domestication Gone Wild: Politics and Practices of Multispecies Relations. Duke University Press.
https://doi.org/10.2307/j.ctv11sn74f
এই আগ্রাসনের কারণ নতুন জমি দরকার, জনসংখ্যা বাড়ছে, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বাড়ছে, তাদের থাকার জায়গা দরকার। ক্রমে এই জায়গা দখল শুরু হল অশ্বমেধ যজ্ঞের মধ্যে দিয়ে। ঘোড়া যে পথ দিয়ে যাবে সেই পথের সব জমি হবে আমার। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে এল সাম্রাজ্য আর উপনিবেশ স্থাপন। নারীর থেকে নিতে হবে শ্রমিক, নিতে হবে দখলদার পুত্র। ফলে নারীকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চাপ তৈরি হল। ধর্ম এবং রাজনীতি জড়িয়ে গেল নারীর শরীরের উপরের দখলের রাজনীতিতে। ক্রমে তা আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে গেল।
এই নতুন অর্থনীতিতে নারীকে সম্পদে পরিণত করার ফলে নারীর গুণমান অন্যান্য সম্পদের মত নির্ধারণ করা শুরু হল। বিবাহ ব্যবস্থার মধ্যে ফুলশয্যার মতো রীতি তৈরি করা হল সমাজের সবার সামনে তার গুণমান অর্থাৎ তার যে যনি অক্ষত তার প্রমাণ দিতে হবে বলে।
নারীর মূল্য তার অক্ষত যনিতে এসে থামল। আজকের পুরুষ চায় নারী তার মুঠো ফোন খুলে দেখাবে সে অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা বলেনি তো? নারী পা, মাথা ঢাকা পোশাক পরে থাকবে। তার পরেও সে সবসময় কেঁদে ক্ষমা ভিক্ষা করবে পুরুষের কাছে। নিজেকে সতী প্রমাণ করার জন্য। না হলে অত্যাচারের বন্যা নেবে আসবে। বলা হবে, সতী না হলে বেশ্যা হয়ে যাও। কিন্ত বলা হবে না যে, তুমি যুক্তির পথে চলো।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
ঋণ স্বীকার
Swanson, H. A., Lien, M. E., & Ween, G. B. (Eds.). (2018). Domestication Gone Wild: Politics and Practices of Multispecies Relations. Duke University Press.
https://doi.org/10.2307/j.ctv11sn74f
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।