ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
সমাজে মানুষের নিজের প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করতে ভাষার দরকার হয় প্রতি মুহূর্তে। পরস্পরের প্রয়োজনীয় তথ্যের আদান-প্রদানের জন্যও কিন্তু ভাষা অত্যন্ত জরুরি আবিষ্কার। গণতান্ত্রিক হোক বা অগণতান্ত্রিক পরিবেশ, মানুষ মতামত প্রকাশ করে এসেছে হয় মুখে কথা বলে কিংবা ছাপার অক্ষরে। কারণ, মানুষ ভাষা দিয়ে সমাজ কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করে, নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে সঙ্গে নির্মাণ করে। ভাষার মধ্যে দিয়ে সমাজ পূর্বাপর সম্বন্ধ তৈরি করে, যেমন রান্নাঘর শব্দ শুনলেই আমরা মনে করতে থাকি যে মা, ঠাকুমা অর্থাৎ বাড়ির মহিলারাই ব্যস্ত থাকেন সেখানে। আবার দেশের বাড়ি কথাটা শুনলেই নিজের শিকড়, আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোর কথা কিংবা ফেলে আসা সম্পত্তির কথা মনে হতে পারে।
এ ভাবেই আমরা বলে থাকি, ‘মেন ইন ব্লু’ আর ‘উইমেন ইন পিঙ্ক’। তাই মানুষ গুহামানব থেকে ‘হাই রাইজ বিল্ডিং’ এর বাসিন্দা হয়ে গেলেও ভাষার প্রয়োজন ফুরিয়ে তো যায়নি উল্টে সারা পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন ভাষায় শব্দ জুড়ে যাচ্ছে একে অন্যের সঙ্গে। তবে মানুষের ভাষায় অনেক বদল এসেছে সময়, রাজনীতি বা ক্ষমতার দাবিতে। ভাষার রকমফেরও দেখা যায় পৃথিবীব্যাপী। এই রকমফেরের বহু কারণ থাকে। কোনও একটি নির্দিষ্ট কারণ বলা সম্ভব নয়। তবে একটা বিষয় ঠিক, মানুষ নিজের প্রয়োজনে ভাষা তৈরি করে, বদলেও ফেলে। আবার কখনও অন্যদের উপর চাপিয়েও দেওয়া হয়ে থাকে নিজের ভাষা।
এ ভাবেই আমরা বলে থাকি, ‘মেন ইন ব্লু’ আর ‘উইমেন ইন পিঙ্ক’। তাই মানুষ গুহামানব থেকে ‘হাই রাইজ বিল্ডিং’ এর বাসিন্দা হয়ে গেলেও ভাষার প্রয়োজন ফুরিয়ে তো যায়নি উল্টে সারা পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন ভাষায় শব্দ জুড়ে যাচ্ছে একে অন্যের সঙ্গে। তবে মানুষের ভাষায় অনেক বদল এসেছে সময়, রাজনীতি বা ক্ষমতার দাবিতে। ভাষার রকমফেরও দেখা যায় পৃথিবীব্যাপী। এই রকমফেরের বহু কারণ থাকে। কোনও একটি নির্দিষ্ট কারণ বলা সম্ভব নয়। তবে একটা বিষয় ঠিক, মানুষ নিজের প্রয়োজনে ভাষা তৈরি করে, বদলেও ফেলে। আবার কখনও অন্যদের উপর চাপিয়েও দেওয়া হয়ে থাকে নিজের ভাষা।
মানুষ নিজের মাতৃভাষায় মত প্রকাশ করার পর যে তৃপ্তি অনুভব করে তার সঙ্গে স্বর্গীয় সুখের কল্পনার যোগ আছে ভীষণ ভাবে। নিজের মাতৃভাষাতেই তো প্রেম নিবেদন করে থাকে মানুষ। আমাদের বিনোদন দুনিয়া সেই চিত্র দেখিয়েছে যুগে যুগে। এবারে এই সুখের কল্পনার মধ্যে একটু বিরতি দিতে বলা যাক। কারণ আর কিছুই নয়, যে কথাগুলো যাদেরকে বলে আমরা সুখ অনুভব করি সেগুলো যদি আমরা একটু টেপ রেকর্ড করে শুনি আমরা লজ্জা পেতে পারি বা নিজেদের নির্বিকার মনে হতে পারে। কারণ, চেতনা না থাকলে সব কিছুই একইরকম মনে হয়।
কিন্তু মনে হতে পারে কোন চেতনার কথা বলছি এখানে? অবশ্যই লিঙ্গ বৈষম্যের চেতনার কথা বলছি। ভাষা দিয়ে যখন সমাজ কাঠামো নির্মাণ করি, তখন এই লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রকাশ করে ফেলি। শুধু শারীরিক বা মানসিক দিক দিয়ে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকাশ হয় না, ভাষা দিয়েও হয়ে থাকে।
এখানে আর একবার লক্ষ্মীর পাঁচালির কথা মনে করুন, সেখানে বলা আছে নারী জোরে কথা বলবে না কিংবা জোরে হাসবেও না। এর উলটটা মানে পুরুষের জন্য কিন্তু এরকম কোনও নির্দেশিকা নেই। উলটে ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষ একটু জোরে ধমকে কথা বলছে কেন প্রশ্ন করলে বলতে শোনা যাবে যে, মেয়েদের মতো মিউ মিউ করলে কেউ পাত্তা দেবে না। এ বার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কোন বিষয়টি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাইছি। আমাদের ভাষা ব্যবহারের মধ্যেই লুকিয়ে রাখা আছে লিঙ্গ বৈষম্যের জটাজাল। পুরুষ বেশ রাশভারী গলায় কথা বলবেন। নারী পুরুষের কথোপকথন চলাকালে পুরুষ নারীকে বারংবার থামিয়ে দেবে, যাকে আমরা ‘ইন্টেরাপ্ট’ করা বলে থাকি। কিন্তু পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কথা বললে, শুনতে হবে সেই নারীর সভ্যতাবোধ নেই। কথা মন দিয়ে শোনার ধৈর্য নেই। তাই পুরুষ একতরফা বলে যাবেন, আর নারী শুধু মন দিয়ে শুনেই যাবে।
কিন্তু মনে হতে পারে কোন চেতনার কথা বলছি এখানে? অবশ্যই লিঙ্গ বৈষম্যের চেতনার কথা বলছি। ভাষা দিয়ে যখন সমাজ কাঠামো নির্মাণ করি, তখন এই লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রকাশ করে ফেলি। শুধু শারীরিক বা মানসিক দিক দিয়ে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকাশ হয় না, ভাষা দিয়েও হয়ে থাকে।
এখানে আর একবার লক্ষ্মীর পাঁচালির কথা মনে করুন, সেখানে বলা আছে নারী জোরে কথা বলবে না কিংবা জোরে হাসবেও না। এর উলটটা মানে পুরুষের জন্য কিন্তু এরকম কোনও নির্দেশিকা নেই। উলটে ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষ একটু জোরে ধমকে কথা বলছে কেন প্রশ্ন করলে বলতে শোনা যাবে যে, মেয়েদের মতো মিউ মিউ করলে কেউ পাত্তা দেবে না। এ বার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কোন বিষয়টি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাইছি। আমাদের ভাষা ব্যবহারের মধ্যেই লুকিয়ে রাখা আছে লিঙ্গ বৈষম্যের জটাজাল। পুরুষ বেশ রাশভারী গলায় কথা বলবেন। নারী পুরুষের কথোপকথন চলাকালে পুরুষ নারীকে বারংবার থামিয়ে দেবে, যাকে আমরা ‘ইন্টেরাপ্ট’ করা বলে থাকি। কিন্তু পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কথা বললে, শুনতে হবে সেই নারীর সভ্যতাবোধ নেই। কথা মন দিয়ে শোনার ধৈর্য নেই। তাই পুরুষ একতরফা বলে যাবেন, আর নারী শুধু মন দিয়ে শুনেই যাবে।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৭: হয় বলো ভালোবাসি, নয় তো ভালোবাসি না!
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৮: জ্বরে ভাত খাবেন?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৪: মন তোর শক্তিই ‘মন্ত্রশক্তি’
নারীকে ধরেই নেওয়া হয়েছে সে শুধুই আজ্ঞাপালনকারী। আমরা মহিলা রাজনীতিবিদদের ভাষণ নিয়ে তেমন কোনও আলোচনা শুনতে পাই? সার্বিক ভাবে মহিলা রাজনীতিবিদদের আলোচনার মঞ্চে আহ্বান জানিয়েছি? হাতে গোনা কিছু উদাহরণ ছাড়া এই উপমহাদেশে মহিলা রাজনীতিবিদদের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করি না। যদি কোনও মহিলা রাজনীতিবিদের ঝাঁঝালো বক্তব্য শুনতেও পাই, তখন পাল্টা মন্তব্য উড়ে আসে যে, ওই ‘মেয়েছেলে’ মার্কা কথা বলছে। আমার আগের লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, মনসা যখন স্বামীর আদেশের উত্তরে নিজের যুক্তি সাজান, তখন কীভাবে তাকে ভৎর্সনা করা হয়।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নারীকে কখনও সম্মান দেয় না যখন তার সঙ্গে কথা বলে। সেই সঙ্গে এটাও দেখা যায়, নারী কখনও কোন পুরুষের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই মাঝেমধ্যেই তার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করে দেওয়া হয়। ফলে নারী অনেকটাই বাধ্য হয় শুধু নিজেদের মধ্যে কথা বলতে। নারী সবসময় যে কাজটা করে থাকেন, সেটা হল তার এই কথা বলার কৌশল দিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো বজায় রাখে। এই কথা বলার অভ্যেসকে বহু পণ্ডিত মানুষ কারণ বোঝার বদলে খুব নিন্দাসূচক শব্দ দিয়ে বর্ণনা করে থাকেন। তাঁরা বলতে থাকেন মহিলাদের এত কথা বলার অভ্যেস ভালো নয়। তারা পাখির মতো কিচিরমিচির করে। বলা হয় “বউয়ের গলার স্বর কেমন না, শালিক চেঁচায় যেমন”। ইতর প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করাটা খুব স্বাভাবিক শব্দ চয়নের মধ্যে পড়ে যায়। তাই ‘বাচাল’ শব্দটি খুব বেশি ব্যবহার করতে শোনা যায়।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নারীকে কখনও সম্মান দেয় না যখন তার সঙ্গে কথা বলে। সেই সঙ্গে এটাও দেখা যায়, নারী কখনও কোন পুরুষের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই মাঝেমধ্যেই তার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করে দেওয়া হয়। ফলে নারী অনেকটাই বাধ্য হয় শুধু নিজেদের মধ্যে কথা বলতে। নারী সবসময় যে কাজটা করে থাকেন, সেটা হল তার এই কথা বলার কৌশল দিয়ে আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো বজায় রাখে। এই কথা বলার অভ্যেসকে বহু পণ্ডিত মানুষ কারণ বোঝার বদলে খুব নিন্দাসূচক শব্দ দিয়ে বর্ণনা করে থাকেন। তাঁরা বলতে থাকেন মহিলাদের এত কথা বলার অভ্যেস ভালো নয়। তারা পাখির মতো কিচিরমিচির করে। বলা হয় “বউয়ের গলার স্বর কেমন না, শালিক চেঁচায় যেমন”। ইতর প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করাটা খুব স্বাভাবিক শব্দ চয়নের মধ্যে পড়ে যায়। তাই ‘বাচাল’ শব্দটি খুব বেশি ব্যবহার করতে শোনা যায়।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৬: উত্তম কাছে এসে বললেন, “তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি সাবু, এ বার আমায় মাফ করে দে”
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৭: একটার পর একটা রেস্তরাঁয় ফোন করে জানতে পারলাম ৫ মাইল দূরে একটি খোলা আছে
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৭: কুডার ছুঁয়ে শিরপুর
যে সব মহিলারা তার কথা বলার কৌশল দিয়ে অন্যায়ের প্রতি বাদ করতে যান, তাঁদের সমাজ ভালো চোখে দেখে না। কারণ নারীকে অন্তঃপুরবাসি করে রাখতে চায় সমাজ। প্রতিবাদী নারীকে তাই সমাজ ‘মাগি’ বলে দাগিয়ে দিতে কুণ্ঠা বোধ করে না। নারী বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কথা বলতে খুব একটা সড়গড় হয় না। আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ চায় না নারী সেই দক্ষতা অর্জন করুক। তাই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বহু নারী কোনও কারণে বাড়ির বাইরে বেরতে হলে খুব অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তখনও সমাজে কারণ খুঁজে দেখার বদলে সেই সব নারীদের ‘অলক্ষ্মী’ বলে গালিগালাজ করা হয় বা বোকা বা বুদ্ধিহীন বলে হাসাহাসি করা হয়।
নারীদের আত্মবিশ্বাসকে টলিয়ে দিয়ে তাঁদের চিরকালের মতো নির্ভরশীল করে রাখা হয়। আর খুব সহজেই তাদের পতিতা রূপে বর্ণনা করা শুরু হয়ে যায়। আমাদের সমাজে এই সব ভাষার উপস্থিতি প্রমাণ করে দেয় সমাজ নারীদের জন্য কী ভাষা নির্মাণ করেছে।
নারীদের আত্মবিশ্বাসকে টলিয়ে দিয়ে তাঁদের চিরকালের মতো নির্ভরশীল করে রাখা হয়। আর খুব সহজেই তাদের পতিতা রূপে বর্ণনা করা শুরু হয়ে যায়। আমাদের সমাজে এই সব ভাষার উপস্থিতি প্রমাণ করে দেয় সমাজ নারীদের জন্য কী ভাষা নির্মাণ করেছে।
আরও পড়ুন:
স্বাদে-আহ্লাদে: সকালে জলখাবারে থাক নতুনত্ব, বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পালক পনির পরোটা
যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১
অন্দরসজ্জার ভোল পাল্টাতে গাছ লাগান, ভবে এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখুন
সমাজ তাই নারীর ভাষা কেমন হবে সেই কাঠামো আমাদের সামনে বারে বারে তুলে ধরে। সেই কাঠামো পেশাদারিত্ব বোঝে না, বোঝে একটাই বিষয় যে, নারীকে পদদলিত, শান্ত, বোবা মূর্তি হয়ে থাকতে হবে। যে শুধু কথায় কথায় হেসে ফেলবে আবার একটু বেশি হাসলে তাকে বলব সে কেমন ‘ঢলঢল’। কিন্তু সে রিনরিনে গলায়, মধু ঢালা কণ্ঠে কথা বলবে। আবার সেই নারী কথায় কথায় নিজের ভুল স্বীকার করবে। কিন্তু কর্মস্থলে যতই পুরুষ বা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাজ না করে বসে থাকুক না কেন, নারী বলেই তার কোন কড়া কথা বলার হুকুম নেই। যদি সে নিয়ম দেখাতে যায় সেই সব কর্মীদের তাহলে উলটে সেই নারীকেই বলা হয় তার অধিকার নেই পুরুষতন্ত্রের ভুল ধরার।
তাই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ সহজে কাউকে গালি দেওয়ার জন্য সেই সব শব্দ ব্যবহার করতে শেখে যেগুলো নারীকে ধর্ষণ করা বোঝায়। আমরা ছোট থেকে সেই সব শব্দ খুব সহজে ব্যবহার করি যেগুলো সমাজের দলিত জাতির মানুষ বা নারি দের প্রতি আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করে। তাদের প্রতি আক্রমণ ধেয়ে আসে তাঁদের সঙ্গে ব্যবহারে। বাড়ির কাজের পরিচারিকাকে তাই তুই বলে ডাকা বা খুব সহজে গালি দেওয়া খুব স্বাভাবিক হয়ে যায়। নারী যদি দলিত হয় তাহলে তাঁর জন্য যেন সব বাছাই করা ভাষা জড় করে রাখা আছে।
তাই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ সহজে কাউকে গালি দেওয়ার জন্য সেই সব শব্দ ব্যবহার করতে শেখে যেগুলো নারীকে ধর্ষণ করা বোঝায়। আমরা ছোট থেকে সেই সব শব্দ খুব সহজে ব্যবহার করি যেগুলো সমাজের দলিত জাতির মানুষ বা নারি দের প্রতি আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করে। তাদের প্রতি আক্রমণ ধেয়ে আসে তাঁদের সঙ্গে ব্যবহারে। বাড়ির কাজের পরিচারিকাকে তাই তুই বলে ডাকা বা খুব সহজে গালি দেওয়া খুব স্বাভাবিক হয়ে যায়। নারী যদি দলিত হয় তাহলে তাঁর জন্য যেন সব বাছাই করা ভাষা জড় করে রাখা আছে।
আরও পড়ুন:
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৮: হৃদয়মন্দিরে মন শুদ্ধ করে দেবতা প্রতিষ্ঠা করলে তবেই তো দেবতার পুজো হবে
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৩: সুন্দরবনের সুন্দর মাছ
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২: এসেছে দৈব পিকনিকে
তাই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে সেই সব নারীরা সমাদর পান যারা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ভুলগুলিকে ক্ষমা করে দিয়ে তাঁদের সঙ্গে বসে তাঁদের ভাষায় প্রতিবাদী নারীদের কোণঠাসা করে আনন্দ উপভোগ করে।
আমাদের ভাষার মধ্যে কোনটা পুংলিঙ্গ নির্ধারণ করে আর কোনটা স্ত্রীলিঙ্গ নির্ধারণ করে তা খুব ছোট থেকেই আমাদের শেখান হয়। ব্যাকরণ বইতে বলা থাকে কোনটা কোন লিঙ্গের শব্দ। আমরা সেই শব্দগুলো মুখস্ত করতে থাকি আর প্রয়োগ করি, কিন্তু প্রশ্ন করি না নিজেদের যে, কেন আমরা এই ভাবে বৈষম্যমূলক ভাষা ব্যবহার করি? নিত্যদিনের অভ্যেস কবেই যেন আমাদের চেতনাতে ঘুণ ধরিয়ে দিয়ে বলছে, “নারী মায়ের জাত” আবার পরক্ষণেই বলছে “নারী পরের ভাগ্যে খায়”। আর শেষে বলে, পুড়বে মেয়ে, উড়বে ছাই, তবে তার গুণ গাই”।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
আমাদের ভাষার মধ্যে কোনটা পুংলিঙ্গ নির্ধারণ করে আর কোনটা স্ত্রীলিঙ্গ নির্ধারণ করে তা খুব ছোট থেকেই আমাদের শেখান হয়। ব্যাকরণ বইতে বলা থাকে কোনটা কোন লিঙ্গের শব্দ। আমরা সেই শব্দগুলো মুখস্ত করতে থাকি আর প্রয়োগ করি, কিন্তু প্রশ্ন করি না নিজেদের যে, কেন আমরা এই ভাবে বৈষম্যমূলক ভাষা ব্যবহার করি? নিত্যদিনের অভ্যেস কবেই যেন আমাদের চেতনাতে ঘুণ ধরিয়ে দিয়ে বলছে, “নারী মায়ের জাত” আবার পরক্ষণেই বলছে “নারী পরের ভাগ্যে খায়”। আর শেষে বলে, পুড়বে মেয়ে, উড়বে ছাই, তবে তার গুণ গাই”।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।