ছবি: প্রতীকী।
কিছুদিন আগে সংবাদ মাধ্যমে একটি অবরোধের খবর পড়েছিলাম। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাঁকুড়া জেলা। সেখানে কিছু মহিলা খুব ঘরোয়া ভাবে শাড়ি পরা, গ্রামীণ জীবনযাত্রার ছাপ সেখানে স্পষ্ট, তাঁরা একত্রিত ভাবে রাস্তা আটকে, শুয়ে পড়ে রাস্তা অবরোধ করছেন এবং খুব উত্তেজিত ভাবে কিছু দাবি করছেন। তাঁদের প্রতিবাদ এবং দাবি ছিল, সেলফ হেল্প গ্রুপের টাকা নিয়ে তছরুপ করা হয়েছে। তাঁরা একজোট হয়ে তাঁদের এই আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গ্রামের মেয়েদের এই একসঙ্গে হয়ে প্রতিবাদ করার যে চিত্র দেখা গেল তা নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ঘটনার গুরুত্ব বহুমুখী। কিন্তু এখানে দুটি বিষয়কে আমি প্রাধান্য দিতে চাইছি। একটি হল স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা সেলফ হেল্প গ্রপ তৈরির মাধ্যমে নারীরা কি পারছে দেশের অর্থনীতিতে তাঁদের প্রান্তিক অবস্থানের পরিবর্তন করতে? কারণ অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তৃতীয় বিশ্বের নারীরা কীভাবে নিজেদের আন্দোলনে সমবেত করছেন এরকম অর্থনৈতিক বিষয়ের প্রেক্ষাপটে যেখানে পিতৃ-তন্ত্র এক চেটিয়া অধিকার কায়েম করে আছে এখনও?
প্রথমেই আমাদের একটু ইতিহাসের পথে হেঁটে দেখে নিতে হবে যে, এই অর্থনৈতিক-প্রান্তিকতা কীভাবে তৈরি হল আমাদের সমাজে। এই প্রান্তিকতা বলতে আমি বোঝাতে চাইছি নারীদের অর্থনৈতিক অধিকার থেকে কীভাবে বঞ্চিত করে নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে পিতৃতন্ত্রের উপর এবং সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র কীভাবে সেই বঞ্চনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। আমার আগের লেখাগুলোতে বলেছি, সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই কিছু না কিছু কাজ করতে হয়। পৃথিবীতে মানব সমাজের টিকে থাকার পেছনে এই কাজের ভূমিকা বিশাল।
কিন্তু মজার বিষয়টি হল, আমরাই সমাজ গড়েছি আবার আমরাই নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করেছি। কিন্তু কিছু কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে আমরা টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি আর কিছু কাজকে আমরা টাকা বিনিময়ের মধ্যে না রেখে সামাজিক দায় ও কর্ত্যব্যের মধ্যে গেঁথে দিয়েছি। যেমন ঘরের কাজ আর সেটা করবে মূলত মহিলারাই। আগের লেখাগুলোতে উল্লেখ করেছি কীভাবে ঘরের কাজকে মূল্যহীন করে দেওয়া হয়েছে। এবারে আমি তুলে ধরতে চাইছি সেই রাজনীতির চোরাপথগুলো যার মাধ্যমে এখনও আমরা নারীরা কীভাবে সমানাধিকারের চোরাগলিতে ঘুরপাক খাচ্ছি।
প্রথমেই আমাদের একটু ইতিহাসের পথে হেঁটে দেখে নিতে হবে যে, এই অর্থনৈতিক-প্রান্তিকতা কীভাবে তৈরি হল আমাদের সমাজে। এই প্রান্তিকতা বলতে আমি বোঝাতে চাইছি নারীদের অর্থনৈতিক অধিকার থেকে কীভাবে বঞ্চিত করে নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে পিতৃতন্ত্রের উপর এবং সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র কীভাবে সেই বঞ্চনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। আমার আগের লেখাগুলোতে বলেছি, সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই কিছু না কিছু কাজ করতে হয়। পৃথিবীতে মানব সমাজের টিকে থাকার পেছনে এই কাজের ভূমিকা বিশাল।
কিন্তু মজার বিষয়টি হল, আমরাই সমাজ গড়েছি আবার আমরাই নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করেছি। কিন্তু কিছু কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে আমরা টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি আর কিছু কাজকে আমরা টাকা বিনিময়ের মধ্যে না রেখে সামাজিক দায় ও কর্ত্যব্যের মধ্যে গেঁথে দিয়েছি। যেমন ঘরের কাজ আর সেটা করবে মূলত মহিলারাই। আগের লেখাগুলোতে উল্লেখ করেছি কীভাবে ঘরের কাজকে মূল্যহীন করে দেওয়া হয়েছে। এবারে আমি তুলে ধরতে চাইছি সেই রাজনীতির চোরাপথগুলো যার মাধ্যমে এখনও আমরা নারীরা কীভাবে সমানাধিকারের চোরাগলিতে ঘুরপাক খাচ্ছি।
যন্ত্রের আবিষ্কার এবং অধিক উৎপাদনে তার ব্যবহার হল অন্যতম একটি ঘটনা যা নারীদের ক্রমেই সমাজের মূল অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। প্রশ্ন উঠবে কীভাবে? খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের কৃষি নির্ভর সমাজে কৃষিক্ষেত্র বা চাষের জমি কৃষকের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। ঠিক যেন যেথা চাষ সেথায় বাস, ব্যাপার ছিল। চাষি খুব ভোরে উঠে মাঠে চলে যেতেন আবার দরকারে ফিরে আসা আবার যাওয়ার সেই সঙ্গে বাড়ির নারীরাও হাত লাগাতেন কৃষির না না কাজে। সেই সঙ্গে খাবারের ব্যবস্থা করা, তামাক পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও ছিল। বাড়ি আর কাজের জায়গার মধ্যে ভৌগলিক অবস্থানের মধ্যে বিশাল ফারাক না থাকার ফলে অর্থনৈতিক বিভাজন খুব বেশি প্রত্যক্ষ করা যেত না। পারিবারিক ভাবে যৌথ ভূমিকা নেওয়ার ইচ্ছে অনেক বেশি ছিল।
কোথাও যেন সেই ছবি ভেসে ওঠে যেখানে নারী-পুরুষ উভয় বাড়ি বা বাড়ির আসে পাশেই ব্যস্ত আছেন ফসল ফলাতে, খাদ্য সংগ্রহ করতে, শিকার করতে, গৃহপালিত পশু পাখিদের দেখভাল করতে, বাড়িতে থাকা শিশু ও অসুস্থ বয়স্কদের দেখভাল করার জন্য। সেই সঙ্গে আর একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, সেই সময়ের মানুষ জন এই সীমিত পরিসরের উৎপাদনে অনেক বেশি সন্তুষ্ট। তাঁরা প্রাকৃতিক সম্পদের থেকে খুব বেশি বা কম নয় যেটুকু প্রয়োজন সেটাই গ্রহণ করছেন। নৃবিজ্ঞানীদের কাছে এই সমাজ যেন একটি পর্যাপ্ত সম্পদে সম্পদশালী সমাজ। কিন্তু যেই মুহূর্তে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হওয়ার গেল অতিরিক্ত উৎপাদন কে ব্যবহার করে আরও বেশি অন্য ধরনের সম্পদ বাড়ানোর জন্য তখন থেকে নারীদের ভূমিকা সমাজে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকলো।
নারীদের সেই যন্ত্র চালানো শেখানোর বদলে বাড়িতে থেকে পরিবারের দেখভাল করতে বলা হতো। যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষেত্র বাড়ি থেকে দূরে হতে শুরু করল। ফলে যেখানে বাড়ি সেখানে নারী থেকে গেলো, সেই সময়ের মতো যখন পুরুষ শিকারে যেত আর নারীরা গুহায় থেকে শিশু বয়স্কদের দেখভাল করত। অর্থাৎ প্রতিটি পরিবর্তনের সঙ্গে যখন স্থানও বদলে গিয়েছে তখন এই নারী-পুরুষের সম্পর্ক বদলে গিয়েছে। বাড়ি থেকে দূরে কর্মক্ষেত্র হওয়ার জন্য এবং সন্তান উৎপাদনের জন্য কাজের থেকে বিরতি নেওয়ার দরকার বলে পুরুষ দূরে গিয়ে কাজ করা বন্ধ করেনি। বরং যন্ত্রের ব্যবহার শিখে আরও বেশি নিজের অর্থনৈতিক অবস্থান কে পোক্ত করে তুলেছিল। যন্ত্রকে ক্রমেই আরও বেশি পুরুষদের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হল। আর নারীরা ক্রমে আরও বেশি অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হতে শুরু করল।
কোথাও যেন সেই ছবি ভেসে ওঠে যেখানে নারী-পুরুষ উভয় বাড়ি বা বাড়ির আসে পাশেই ব্যস্ত আছেন ফসল ফলাতে, খাদ্য সংগ্রহ করতে, শিকার করতে, গৃহপালিত পশু পাখিদের দেখভাল করতে, বাড়িতে থাকা শিশু ও অসুস্থ বয়স্কদের দেখভাল করার জন্য। সেই সঙ্গে আর একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, সেই সময়ের মানুষ জন এই সীমিত পরিসরের উৎপাদনে অনেক বেশি সন্তুষ্ট। তাঁরা প্রাকৃতিক সম্পদের থেকে খুব বেশি বা কম নয় যেটুকু প্রয়োজন সেটাই গ্রহণ করছেন। নৃবিজ্ঞানীদের কাছে এই সমাজ যেন একটি পর্যাপ্ত সম্পদে সম্পদশালী সমাজ। কিন্তু যেই মুহূর্তে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হওয়ার গেল অতিরিক্ত উৎপাদন কে ব্যবহার করে আরও বেশি অন্য ধরনের সম্পদ বাড়ানোর জন্য তখন থেকে নারীদের ভূমিকা সমাজে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকলো।
নারীদের সেই যন্ত্র চালানো শেখানোর বদলে বাড়িতে থেকে পরিবারের দেখভাল করতে বলা হতো। যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষেত্র বাড়ি থেকে দূরে হতে শুরু করল। ফলে যেখানে বাড়ি সেখানে নারী থেকে গেলো, সেই সময়ের মতো যখন পুরুষ শিকারে যেত আর নারীরা গুহায় থেকে শিশু বয়স্কদের দেখভাল করত। অর্থাৎ প্রতিটি পরিবর্তনের সঙ্গে যখন স্থানও বদলে গিয়েছে তখন এই নারী-পুরুষের সম্পর্ক বদলে গিয়েছে। বাড়ি থেকে দূরে কর্মক্ষেত্র হওয়ার জন্য এবং সন্তান উৎপাদনের জন্য কাজের থেকে বিরতি নেওয়ার দরকার বলে পুরুষ দূরে গিয়ে কাজ করা বন্ধ করেনি। বরং যন্ত্রের ব্যবহার শিখে আরও বেশি নিজের অর্থনৈতিক অবস্থান কে পোক্ত করে তুলেছিল। যন্ত্রকে ক্রমেই আরও বেশি পুরুষদের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হল। আর নারীরা ক্রমে আরও বেশি অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হতে শুরু করল।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৬: লিঙ্গ পরিচিতিতে খাদ্যাভ্যাসের রাজনীতি
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৭: গরমে পান্তা ভাত কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা করে?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬০: রাতদুপুরে বিপন্নকে বাঁচাতে হাটখোলার পাট আড়তের টাকা এসেছিল জোড়াসাঁকোয়
নারীরা যখন দেখল পুরুষদের রোজগার বেশি হচ্ছে, তখন তাদের অন্যের করে আনা রোজগারের উপর নির্ভরতা বাড়তে শুরু করল। তবে যুদ্ধ বা অন্যান্য না না কারণে নারীদের বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে কিছু কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু সেই নারীরা হাত দিয়ে যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলোতে বেশি করে ভিড় জমিয়েছিলেন। চা বাগানের শ্রমিক, গৃহ পরিচারিকা, আয়া, নার্স, শিক্ষিকা, মহিলা দের চিকিৎসক প্রভৃতি কাজে নারী দের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। সেই সঙ্গে এই ভবানা মাথায় ছিল যে, তাঁরা বিশেষ প্রয়োজনে কাজ করতে এসেছেন।
কিন্তু নিজের একটি স্বতন্ত্র কর্মজগৎ তৈরি করার কোনও ইচ্ছেই তাঁদের নেই। তাঁরা নিজেদের মূল প্রয়োজন অনুভব করতে শিখেছিলেন বাড়ির দেখাশোনাতেই। মধ্য বিত্ত পরিবারে নারীদের লেখা পড়া শেখানো হল কিন্ত বলা হল পরিবারের কোনো সমস্যা হলেই তবে তারা চাকরি করার চেষ্টা করবে। নয়তো বাড়ির দেখভাল করাই হবে তার মূল ব্রত। এখনও অনেক পরিবারে বলা হয় বাড়ি থেকে চাকরি স্থল দূরে হলে চাকরি করতে দেওয়া হয় না। তবে সমাজের খেটে খাওয়া, নিম্ন জাতির মেয়েদের অভাব, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করার জন্য বাড়ি থেকে বেরতেই হল। এই সব খেটে খাওয়া নারীরা বাড়ির কাজকেও অস্বীকার করতে পারলেন না।
একটি সমীক্ষা তে দেখা গিয়েছে, একজন নারী যেখানে সারাদিনে ২৯৩ মিনিট সময় ব্যয় করতে বাধ্য থাকেন বাড়ির কাজ করার জন্য, সেখানে একজন পুরুষ ৯৩ মিনিট ব্যয় করেন। পুরুষ দরকার পড়লে সেই সময়টা আরও কমিয়ে নিতে পারে। পুরুষ যেহেতু এই সময় কমানো বাড়ানোর খেলা খেলতে পারে, সেখানে নারীরা যাতে পুরুষদের কাজের পরিধিতে হস্তক্ষেপ না করতে পারে তার জন্য নারীদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, তাঁদের বাড়ির কাজ পড়ে আছে। সুতরাং তাঁরা বাড়ি চলে যেতে পারে। বর্তমানে নারীরা যখন কাজের জগতে পা দিতে চাইছেন, বাড়ি থেকে দূরে কাজের জায়গায় যাচ্ছেন আর পুরুষ সহকর্মীদের থেকে শুনছেন বা অন্য মহিলা কর্মীরা বলছেন মিটিং অনেক ক্ষণ চলবে, তাহলে আপনার ছোট বাচ্চা বাড়িতে আছে, সে অসহায় বোধ করবে, আপনি বাড়ি চলে যান। তখন সেই নারী নিজেকে অসহায় মনে করবেন, অপরাধীও মনে করতে পারেন।
কিন্তু নিজের একটি স্বতন্ত্র কর্মজগৎ তৈরি করার কোনও ইচ্ছেই তাঁদের নেই। তাঁরা নিজেদের মূল প্রয়োজন অনুভব করতে শিখেছিলেন বাড়ির দেখাশোনাতেই। মধ্য বিত্ত পরিবারে নারীদের লেখা পড়া শেখানো হল কিন্ত বলা হল পরিবারের কোনো সমস্যা হলেই তবে তারা চাকরি করার চেষ্টা করবে। নয়তো বাড়ির দেখভাল করাই হবে তার মূল ব্রত। এখনও অনেক পরিবারে বলা হয় বাড়ি থেকে চাকরি স্থল দূরে হলে চাকরি করতে দেওয়া হয় না। তবে সমাজের খেটে খাওয়া, নিম্ন জাতির মেয়েদের অভাব, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করার জন্য বাড়ি থেকে বেরতেই হল। এই সব খেটে খাওয়া নারীরা বাড়ির কাজকেও অস্বীকার করতে পারলেন না।
একটি সমীক্ষা তে দেখা গিয়েছে, একজন নারী যেখানে সারাদিনে ২৯৩ মিনিট সময় ব্যয় করতে বাধ্য থাকেন বাড়ির কাজ করার জন্য, সেখানে একজন পুরুষ ৯৩ মিনিট ব্যয় করেন। পুরুষ দরকার পড়লে সেই সময়টা আরও কমিয়ে নিতে পারে। পুরুষ যেহেতু এই সময় কমানো বাড়ানোর খেলা খেলতে পারে, সেখানে নারীরা যাতে পুরুষদের কাজের পরিধিতে হস্তক্ষেপ না করতে পারে তার জন্য নারীদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, তাঁদের বাড়ির কাজ পড়ে আছে। সুতরাং তাঁরা বাড়ি চলে যেতে পারে। বর্তমানে নারীরা যখন কাজের জগতে পা দিতে চাইছেন, বাড়ি থেকে দূরে কাজের জায়গায় যাচ্ছেন আর পুরুষ সহকর্মীদের থেকে শুনছেন বা অন্য মহিলা কর্মীরা বলছেন মিটিং অনেক ক্ষণ চলবে, তাহলে আপনার ছোট বাচ্চা বাড়িতে আছে, সে অসহায় বোধ করবে, আপনি বাড়ি চলে যান। তখন সেই নারী নিজেকে অসহায় মনে করবেন, অপরাধীও মনে করতে পারেন।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-২: এখানে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা, বাণিজ্যনীতি এবং বৈদেশিক নীতির চর্চা করা হয়েছে
স্বাদে-আহ্লাদে: ‘এগ পকেট’ পছন্দ? তা হলে বাড়িতেই বানান সহজ এই রেসিপি
আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১
প্রশ্ন করবেন না কেন যে তার একার দায় কি বাড়ি এবং শিশুর দেখভালের? কেন সমাজ এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে পারবে না? কেন সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা করবে না। কর্মক্ষেত্রে পুরুষ কর্মীরা কাজ দ্রুত শেষ করে বাড়ি ফিরে ঘরের কাজ করবে না কেন? তখন দোহাই দেওয়া হবে, রাত হলে মহিলা কর্মীদের বাড়ি ফিরতে অসুবিধে হবে, রাস্তাঘাটে বিপদ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ নারীকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া যাবে না। তার জন্য বাড়িতেও কাঁটা বিছিয়ে রাখা হবে, তার যাত্রা পথেও শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করা হবে। আবার কর্মক্ষেত্রে শ্লীলতাহানির বিষয়টি জড়িয়ে যাবে না না রূপে আর চেষ্টা করা হবে তাকে অযোগ্য প্রমাণ করার। সেখানে সেই নারীকে দক্ষ কর্মীর তকমা দেওয়া হবে যিনি পুরুষ সহকর্মী দের তার বাড়ির নারীর সাহচর্য কর্ম – ক্ষেত্রে করে দেবেন বকলমে। নারীর কাজ যেন সবসময় পুরুষদের পরিষেবা দেওয়া।
একটু আগেই বলছিলাম নারী কতটা সময় বিনা পারিশ্রমিকের কাজ করে থাকে। সেই সূত্রেই বলি, গ্রাম বাংলায় যখন পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় অংশ গ্রহণের সুযোগ আসে তখন দেখা যায় তফসিলি জনজাতির মেয়েরা অনেকেই দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন আবার অনেকেই পারছেন না। আর না পারার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাঁরা অভিভাবকদের থেকে উপদেশ শুনছেন না বলে পারছেন না। অভিভাবক বলতে বলা হচ্ছে স্বামী এবং দলীয় নেতৃবৃন্দকে। অর্থাৎ কোথাও একটা পরামর্শ মণ্ডলী এই শব্দ বন্ধ ব্যবহার না করে বলা হচ্ছে অভিভাবকের কথা।
নারী পঞ্চায়েত সদস্যাকে তাই শুনতে হয় আগে টাকার হিসেব করতে শিখে আসতে হবে, তারপর কাজ করবেন। এবার একটা উদাহরণ দেই, এই সব নারী পঞ্চায়েত সদস্যাদের একটা দিন কীভাবে কাটে। এই সদস্যাদের ভোর বেলা উঠতেই হয় নিজের সমস্ত শারীরিক সমস্যাকে উপেক্ষা করে বাড়ির পুরুষদেরই জন্য টিফিন বানানোর জন্য। পুরুষরা কাজে যাবেন দূরের কোথাও শ্রমিক বা জন মজুর বা ভাগ চাষ করতে তারা খাবার নিয়ে যাবেন। তারপর রান্না বসাতে হবে। কারণ বাড়ির বয়স্ক, শিশুরা এবং স্কুলে যাওয়া বাচ্চারা খাবে। তার মধ্যে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল প্রতিপালন আছে। তাদের জন্য খাবারেরই ব্যবস্থা করতে হবে। বিপদে অপদের সময় এই পশু-পাখি তাদের কাছের ব্যাংকের কাজ করে থাকে। তারপর বাড়ির অন্যান্য কাজ করতে করতে নিজেদের জন্য এক ঘণ্টা সময় বার করে চান খাওয়া সেরে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজে যোগদান করতে হয়।
একটু আগেই বলছিলাম নারী কতটা সময় বিনা পারিশ্রমিকের কাজ করে থাকে। সেই সূত্রেই বলি, গ্রাম বাংলায় যখন পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় অংশ গ্রহণের সুযোগ আসে তখন দেখা যায় তফসিলি জনজাতির মেয়েরা অনেকেই দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন আবার অনেকেই পারছেন না। আর না পারার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাঁরা অভিভাবকদের থেকে উপদেশ শুনছেন না বলে পারছেন না। অভিভাবক বলতে বলা হচ্ছে স্বামী এবং দলীয় নেতৃবৃন্দকে। অর্থাৎ কোথাও একটা পরামর্শ মণ্ডলী এই শব্দ বন্ধ ব্যবহার না করে বলা হচ্ছে অভিভাবকের কথা।
নারী পঞ্চায়েত সদস্যাকে তাই শুনতে হয় আগে টাকার হিসেব করতে শিখে আসতে হবে, তারপর কাজ করবেন। এবার একটা উদাহরণ দেই, এই সব নারী পঞ্চায়েত সদস্যাদের একটা দিন কীভাবে কাটে। এই সদস্যাদের ভোর বেলা উঠতেই হয় নিজের সমস্ত শারীরিক সমস্যাকে উপেক্ষা করে বাড়ির পুরুষদেরই জন্য টিফিন বানানোর জন্য। পুরুষরা কাজে যাবেন দূরের কোথাও শ্রমিক বা জন মজুর বা ভাগ চাষ করতে তারা খাবার নিয়ে যাবেন। তারপর রান্না বসাতে হবে। কারণ বাড়ির বয়স্ক, শিশুরা এবং স্কুলে যাওয়া বাচ্চারা খাবে। তার মধ্যে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল প্রতিপালন আছে। তাদের জন্য খাবারেরই ব্যবস্থা করতে হবে। বিপদে অপদের সময় এই পশু-পাখি তাদের কাছের ব্যাংকের কাজ করে থাকে। তারপর বাড়ির অন্যান্য কাজ করতে করতে নিজেদের জন্য এক ঘণ্টা সময় বার করে চান খাওয়া সেরে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজে যোগদান করতে হয়।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১: নাথানিয়্যাল গোবিন্দ সোরেনের গল্প
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৮: সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত গান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন পঞ্চম
হেলদি ডায়েট: বেশি কলা খাওয়ার অভ্যাস কি স্বাস্থ্যকর? মারাত্মক কোনও রোগের কারণ হয়ে উঠবে না তো?
পঞ্চায়েতের কাজ শেষ করতে না করতেই দৌড়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়। কারণ পালিত পশুপাখিদের ঘরে ঢোকানো, জল খেতে দেওয়া, মশা তাড়ানোর ধোঁয়ার ব্যবস্থা করা করতে করতে স্কুল ফেরত বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। পাশাপাশি বাড়ি ফিরে আসা ক্ষুধার্ত পুরুষদের খাবারের ব্যবস্থায় করতে করতে রাতের খাবারেরই যোগাড় শুরু করে দিতে হয়। আপনারাই বলুন, এত ঝক্কি সামলানোর পরে সেই নারীর আর কোনও বিষয়, নিজের অর্থনৈতিক অবস্থান বা কোনও কিছু আর নিয়ে আলাদা করে ভাবার অবকাশ থাকবে? তবুও সে পঞ্চায়েতের মত জায়গায় নিজের দায়িত্ত্ব পালন করে চলেছেন সব বাধা অতিক্রম করে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির নারী এই সব রুক্ষ চুল, খড়ি ওঠা গায়ের মেয়েদের দেখে যতই গায়ে স্যানিটাইজার লাগাক, নাক সিঁটকে সরে বসুক ট্রামে বাসে, এই মেয়েদের লড়াই করার শক্তি থেমে থেকে না। ঘূর্ণি তুলতে থাকে সমাজের বিভিন্ন জায়গায়।
সেলফ হেল্প গ্রুপ বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী করে সহজ উপায়ে লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল, যাতে নারীরা স্বনির্ভর হতে পারে, নিজেদের ছোট ব্যবসা গড়ে তুলতে পারে। সেখানেও দেখা গেলো অভিভাবকদের দাপট। পুরুষ অভিভাবক নিজেদের ব্যবসা করার জন্য বউকে চাপ দিয়ের লোন নিচ্ছেন। কিন্তু শোধ করার সময়ে একটা দুটো কিস্তি দিয়ে হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন। তখন সেই নারী বাধ্য হচ্ছেন আরও বেশি পরিশ্রম করার ঝুঁকি নিতে সেই লোন শোধ করতে, আর তার জন্য তিনি ক্রমেই আরও বেশি লোনের জালে জড়িয়ে পড়ছেন।
তবে এত কালো ঘন মেঘের আড়ালে বিদ্যুতের ঝলক আছে। আমি দেখেছিলাম খুব সাধারণ শাড়ি পরা একজন নারী একটি বড় সোনার দোকানে ঢুকে একটি চুড়ি কিনতে। জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলেন, মুড়ির ব্যবসা করে এই চুড়ি তিনি কিনেছেন। একা এসেছেন, একা জিনিস বুঝে বাড়ি যাচ্ছেন। লড়াইয়ের ভাষা বিবিধ। সেই বহুমুখী ভাষাকে আমাদের চিনে নিতে হবে।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
সেলফ হেল্প গ্রুপ বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী করে সহজ উপায়ে লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল, যাতে নারীরা স্বনির্ভর হতে পারে, নিজেদের ছোট ব্যবসা গড়ে তুলতে পারে। সেখানেও দেখা গেলো অভিভাবকদের দাপট। পুরুষ অভিভাবক নিজেদের ব্যবসা করার জন্য বউকে চাপ দিয়ের লোন নিচ্ছেন। কিন্তু শোধ করার সময়ে একটা দুটো কিস্তি দিয়ে হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন। তখন সেই নারী বাধ্য হচ্ছেন আরও বেশি পরিশ্রম করার ঝুঁকি নিতে সেই লোন শোধ করতে, আর তার জন্য তিনি ক্রমেই আরও বেশি লোনের জালে জড়িয়ে পড়ছেন।
তবে এত কালো ঘন মেঘের আড়ালে বিদ্যুতের ঝলক আছে। আমি দেখেছিলাম খুব সাধারণ শাড়ি পরা একজন নারী একটি বড় সোনার দোকানে ঢুকে একটি চুড়ি কিনতে। জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলেন, মুড়ির ব্যবসা করে এই চুড়ি তিনি কিনেছেন। একা এসেছেন, একা জিনিস বুঝে বাড়ি যাচ্ছেন। লড়াইয়ের ভাষা বিবিধ। সেই বহুমুখী ভাষাকে আমাদের চিনে নিতে হবে।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।