ছবি প্রতীকী
শীতের আমেজ শুরু হলেই খবরের কাগজে, টিভিতে বা বলা ভালো যে দিকেই চোখ যায় বডি ওয়েল, বডি ক্রিম ইত্যাদির বিজ্ঞাপনে ভরে গিয়েছে। এই পর্যন্ত পড়ে ভাবছেন আমি বুঝি তেল, ক্রিম নিয়ে আলোচনাতে বসলাম? একদমই না। আমি টিনের কৌটোতে ভরা নারকেল তেল মেখে বসেছি আপনাদের বলতে যে, বিজ্ঞাপন জগৎ আপনাকে কীভাবে লিঙ্গ বৈষম্যকে দেখতে বা মেনে নিতে শেখায়। কীভাবে আপনার স্বপ্নে, কাজ-কর্মে লিঙ্গ বৈষম্যকে আপনি খুব স্বাভাবিক বিষয় ভাবতে শিখবেন, তার প্রতিফলন বিজ্ঞাপনে থাকে। এই জগৎ সমাজের সৃষ্টি। আমাদের বিজ্ঞাপনের প্রভাব সমাজে আনেকখানি। বিশেষ করে উদারনৈতিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে পুঁজিবাদীরা তাদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করার জন্য বিজ্ঞাপনের উপর ভীষণ ভাবে গুরুত্ব দেয়। বিজ্ঞাপনের ভাষা আমাদের নিত্য দিনের আচরণকে এমন ভাবে ব্যবহার করেছে, একঝলকে মনে হবে এই জিনিসটাই আমার চাই বা পেতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞাপনের আর একটি বিষয় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, সেটি হল বিষয়টিকে এমন ভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে যেখানে সংস্কৃতি, প্রতিনিধিত্ব এবং পরিচয় নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ দু’ জনেই নিজেদের ‘বিবেক-বিবেচনা’ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না। বরং পুঁজিবাদীদের নিজের লোক বলেই মনে করবে। এতে সব পক্ষের সুবিধা। এতে যেটা হয়, তা হল নারীদের এবং যাঁরা লিঙ্গ বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে চান, তাঁদের অবস্থানকে দুর্বল করে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞাপনের আর একটি বিষয় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, সেটি হল বিষয়টিকে এমন ভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে যেখানে সংস্কৃতি, প্রতিনিধিত্ব এবং পরিচয় নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ দু’ জনেই নিজেদের ‘বিবেক-বিবেচনা’ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না। বরং পুঁজিবাদীদের নিজের লোক বলেই মনে করবে। এতে সব পক্ষের সুবিধা। এতে যেটা হয়, তা হল নারীদের এবং যাঁরা লিঙ্গ বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে চান, তাঁদের অবস্থানকে দুর্বল করে দেওয়া হয়।
এই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি জটিল বিষয়কে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। একটু মনোনিবেশ করতে হবে। আমি আসলে লিঙ্গ বৈষম্যের কথা বলতে চাইছি। রাষ্ট্র এবং সমাজ কীভাবে পুঁজিবাদকে এই বৈষম্যকে বজায় রাখতে সাহায্য করে? এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের ভূমিকাই বা কী?
আপনি হয়তো মেট্রো রেলে বা গাড়ি করে গন্ত্যব্যের দিকে যাচ্ছেন। একটু এদিক-ওদিক তাকালেই চোখ পড়বে বিমা সংস্থার বিজ্ঞাপন। এতে একটি পারিবারিক ছবি দেখতে পাবেন। যেখানে বয়স্ক বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের নিয়ে রয়েছেন তাঁর সন্তান। পুরোটাই অঙ্কের হিসেবের মতো— সমান সংখ্যক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেখানে।
এবার সখ্যাতত্ত্বের হিসেব থেকে বেরিয়ে এসে ভাবুন তো, সমাজে এরকম পরিবার খুব সাধারণ? কত পরিবারে দুটি মেয়ে বা দুটি ছেলে তো থাকতে পারে? তাহলে এত বড় করে এরকম সমতা রক্ষা করা পরিবারের ছবি দেওয়ার মানেই বা কী?
কারণ আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুত্রসন্তান ছাড়া পরিবারের কথা ভাবাই যায় না যে! সেই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ছবি বিজ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে আপনার চেতনায় ছড়িয়ে পড়ছে। আপনি নিজের অজান্তে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। আর ক্রমেই এই ধরনের পরিবারের ছবিকে ‘খুব স্বাভাবিক’ মনে করে মেনেও নিচ্ছেন।
আপনি হয়তো মেট্রো রেলে বা গাড়ি করে গন্ত্যব্যের দিকে যাচ্ছেন। একটু এদিক-ওদিক তাকালেই চোখ পড়বে বিমা সংস্থার বিজ্ঞাপন। এতে একটি পারিবারিক ছবি দেখতে পাবেন। যেখানে বয়স্ক বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের নিয়ে রয়েছেন তাঁর সন্তান। পুরোটাই অঙ্কের হিসেবের মতো— সমান সংখ্যক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেখানে।
এবার সখ্যাতত্ত্বের হিসেব থেকে বেরিয়ে এসে ভাবুন তো, সমাজে এরকম পরিবার খুব সাধারণ? কত পরিবারে দুটি মেয়ে বা দুটি ছেলে তো থাকতে পারে? তাহলে এত বড় করে এরকম সমতা রক্ষা করা পরিবারের ছবি দেওয়ার মানেই বা কী?
কারণ আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুত্রসন্তান ছাড়া পরিবারের কথা ভাবাই যায় না যে! সেই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ছবি বিজ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে আপনার চেতনায় ছড়িয়ে পড়ছে। আপনি নিজের অজান্তে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। আর ক্রমেই এই ধরনের পরিবারের ছবিকে ‘খুব স্বাভাবিক’ মনে করে মেনেও নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন:
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১: নারী কি আলাদা? তাঁরা পুরুষদের সঙ্গে বসতে ভয় পান? তাহলে কি এত আয়োজন শুধু তাঁদের ভয় দেখাতে…
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৭: পুরীতে বাড়ি— রবীন্দ্রনাথের, গগনেন্দ্রনাথ-অবনীন্দ্রনাথের
আমাদের মননে বিজ্ঞাপন কীভাবে ছাপ ফেলে যায়?
আমাদের পরিচিতি নির্মাণ করতে, প্রাচীনতম বিজ্ঞাপনের বিষয় সম্পর্কে একটু আভাস দিয়েছিলাম আগের লেখাতে। বলেছিলাম, উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম লক্ষ্মীর পাঁচালীর কথা। আমার মনে হয়, পাঁচালীর বিজ্ঞাপনের ভাষা— সে যুগের ক্ষমতাশালী পুরোহিত গোষ্ঠী এবং যাঁরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক ও ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছিলেন তাঁরা কীভাবে নারীদের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে রাখতে পারবেন তার একটা ছবি তুলে ধরেছিল। এর মধ্যে অন্যতম হল ধর্মীয় মোড়কে স্ত্রী-লিঙ্গ নির্মাণ।
অনেকেরই মনে হতে পারে বিজ্ঞাপন শুধু জিনিসপত্র বিক্রি করার একটা পন্থা মাত্র, তার বেশি কিছু নয়। তাহলে এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে পাঁচালী কী বিক্রি করছে? লক্ষ্মীর পাঁচালীতে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেই সময়কার পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো ও সমাজে কাকে নারী বলা হবে? তার ভূমিকা কীই বা হবে? অর্থাৎ সেই নারীদের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তাঁর ‘ভাল মেয়ে’-র তকমাটা পাওয়াটা খুবই জরুরি ছিল বেঁচে থাকার জন্য। নারীদের ‘ভালো নারী’ হয়ে ওঠা খুব জরুরি হয়ে উঠেছিল নিজের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে। অথচ পুরুষের ভূমিকা কী হবে, তা পরিষ্কার করে বলা নেই।
পুরুষদেরও যে শিষ্টাচার শিখতে হয় তা ঔপনিবেশিক শাসকদের হাত ধরেই আমরা শিখেছি। এমনিতেই আমরা দেখেছি, জাত-ব্যবস্থায় উঁচু জাতের পুরুষদের কুলীন প্রথার মতো বহুগামিতার বিষয়কে শাস্ত্র ও ধর্মের দোহাই দিয়ে চালিয়ে যেতে। এতটুকুও ভেবে দেখা হয়নি, তাদের এই আচরণ সমাজে কোনও বৈষম্য তৈরি করতে পারে কিনা। এবং যার ফল সুদুর প্রসারী হতে পারে। বিজ্ঞাপনের ভাষা ও ছবি পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে কীভাবে বিজ্ঞাপন আমাদের সমাজে বিপরীতকামী লিঙ্গ বিভাজনকে বজায় রাখতে সাহায্য করছে। অথচ বাকি কোনও লিঙ্গের কথা কখনই বলা হয় না।
আমাদের পরিচিতি নির্মাণ করতে, প্রাচীনতম বিজ্ঞাপনের বিষয় সম্পর্কে একটু আভাস দিয়েছিলাম আগের লেখাতে। বলেছিলাম, উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম লক্ষ্মীর পাঁচালীর কথা। আমার মনে হয়, পাঁচালীর বিজ্ঞাপনের ভাষা— সে যুগের ক্ষমতাশালী পুরোহিত গোষ্ঠী এবং যাঁরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক ও ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছিলেন তাঁরা কীভাবে নারীদের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে রাখতে পারবেন তার একটা ছবি তুলে ধরেছিল। এর মধ্যে অন্যতম হল ধর্মীয় মোড়কে স্ত্রী-লিঙ্গ নির্মাণ।
অনেকেরই মনে হতে পারে বিজ্ঞাপন শুধু জিনিসপত্র বিক্রি করার একটা পন্থা মাত্র, তার বেশি কিছু নয়। তাহলে এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে পাঁচালী কী বিক্রি করছে? লক্ষ্মীর পাঁচালীতে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেই সময়কার পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো ও সমাজে কাকে নারী বলা হবে? তার ভূমিকা কীই বা হবে? অর্থাৎ সেই নারীদের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তাঁর ‘ভাল মেয়ে’-র তকমাটা পাওয়াটা খুবই জরুরি ছিল বেঁচে থাকার জন্য। নারীদের ‘ভালো নারী’ হয়ে ওঠা খুব জরুরি হয়ে উঠেছিল নিজের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে। অথচ পুরুষের ভূমিকা কী হবে, তা পরিষ্কার করে বলা নেই।
পুরুষদেরও যে শিষ্টাচার শিখতে হয় তা ঔপনিবেশিক শাসকদের হাত ধরেই আমরা শিখেছি। এমনিতেই আমরা দেখেছি, জাত-ব্যবস্থায় উঁচু জাতের পুরুষদের কুলীন প্রথার মতো বহুগামিতার বিষয়কে শাস্ত্র ও ধর্মের দোহাই দিয়ে চালিয়ে যেতে। এতটুকুও ভেবে দেখা হয়নি, তাদের এই আচরণ সমাজে কোনও বৈষম্য তৈরি করতে পারে কিনা। এবং যার ফল সুদুর প্রসারী হতে পারে। বিজ্ঞাপনের ভাষা ও ছবি পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে কীভাবে বিজ্ঞাপন আমাদের সমাজে বিপরীতকামী লিঙ্গ বিভাজনকে বজায় রাখতে সাহায্য করছে। অথচ বাকি কোনও লিঙ্গের কথা কখনই বলা হয় না।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২: ন্যাড়া মাথায় ভালো চুল গজায়?
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৭: মাছ বাজারের বর্জ্যই এখন মূল্যবান সামগ্রী প্রস্তুতের অন্যতম সেরা উপাদান হতে চলেছে
গায়ের রং ফরসা করার ক্রিমের বিজ্ঞাপনের ভাষা ও ছবি পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে কীভাবে বিজ্ঞাপন আমাদের সমাজে নারীদের মধ্যেও বিভেদ বজায় রেখে তাদের দলবদ্ধ হতে দিচ্ছে না। একটি ক্রিমের বিজ্ঞাপনের ভাষার মূল বক্তব্য ছিল এ রকম—কালো মেয়দের বিয়ে হওয়া সমস্যা। তাই যাদের গায়ের রং কালো তাদের রং ফরসা করতে হবে। তাহলেই তাদের খুব ভালো বিয়ে হবে।
এ রকম করে বলা মানেই তো সমাজে এক ধরনের বৈষম্যকে জিয়ে রাখা। নারী ফরসা না হলে কেউ তাকে ভালো ভাবে গ্রহণ করবে না। আর বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে নারীকেই দায়ী করতে হবে? বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আসলে তার গায়ের রং তাকে ভালো কিছু পেতে বাধা দিচ্ছে।
ফলে নারীরা এক সময় তাদের শরীরের স্বাভাবিক রঙকে অস্বীকার করে চলতে শুরু করল। বহু নারী অবসাদে আত্মহত্যাও করেন। পরবর্তীকালে যখন নারীরা অনেক বেশি ‘কেরিয়ার’ সচেতন হয়ে উঠতে লাগলেন, তখন আবার এই ধরনের ক্রিমের বিজ্ঞাপনের ভাষাও বদলে এল। তখন বলা শুরু হল, এই ক্রিম ব্যবহার করলে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে! এর পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তখন ‘ফেয়ার’ শব্দের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখুন—নিখুঁত ত্বক, উষ্ণ (সেক্সি) ঠোঁট, ঘন কালো লম্বা চুলের জন্য কী ব্যবহার করতে হবে এরকম অনেক ধরনের বিজ্ঞাপন বহুগুণ বেড়েছে। তাদের কেতা দেখানো বিজ্ঞাপনের ভাষা আর লক্ষ্মীর পাঁচালীর মূল বক্তব্য কিন্তু এখনও একই।
এ রকম করে বলা মানেই তো সমাজে এক ধরনের বৈষম্যকে জিয়ে রাখা। নারী ফরসা না হলে কেউ তাকে ভালো ভাবে গ্রহণ করবে না। আর বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে নারীকেই দায়ী করতে হবে? বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আসলে তার গায়ের রং তাকে ভালো কিছু পেতে বাধা দিচ্ছে।
ফলে নারীরা এক সময় তাদের শরীরের স্বাভাবিক রঙকে অস্বীকার করে চলতে শুরু করল। বহু নারী অবসাদে আত্মহত্যাও করেন। পরবর্তীকালে যখন নারীরা অনেক বেশি ‘কেরিয়ার’ সচেতন হয়ে উঠতে লাগলেন, তখন আবার এই ধরনের ক্রিমের বিজ্ঞাপনের ভাষাও বদলে এল। তখন বলা শুরু হল, এই ক্রিম ব্যবহার করলে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে! এর পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তখন ‘ফেয়ার’ শব্দের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখুন—নিখুঁত ত্বক, উষ্ণ (সেক্সি) ঠোঁট, ঘন কালো লম্বা চুলের জন্য কী ব্যবহার করতে হবে এরকম অনেক ধরনের বিজ্ঞাপন বহুগুণ বেড়েছে। তাদের কেতা দেখানো বিজ্ঞাপনের ভাষা আর লক্ষ্মীর পাঁচালীর মূল বক্তব্য কিন্তু এখনও একই।
আরও পড়ুন:
স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে কাতলা? স্বাদবদল করুন ‘কমলা কাতলা’ রেসিপিতে! রইল সহজ রেসিপি
ইংলিশ টিংলিশ: মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সহজে শিখে নাও Transformation of Sentences by changing the DEGREES of Adjectives
পুঁজিবাদীদের চালাকি এতটাই যে, এই বিষম-কামী সম্পর্ককে বজায় রাখতে পুরুষরাও নিজেদের কালো থেকে সাদা হওয়া যায়, মাথাতে চুল আছে কিনা, না থাকলে কী করতে হবে, শারীরিক কাঠামো কেমন করে পেশী বহুল করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। এই ধরনের বিজ্ঞাপন আমরা প্রচুর দেখতে পাই। শুধু তাই নয়, এখন বিজ্ঞাপনের মূল বিষয়বস্তু শরীর কেন্দ্রিক।
বিজ্ঞাপনের জগৎ সবসময় সমাজে দ্বিমুখী বিভাজনে বিশ্বাস করে— এক, নারী এবং দুই, পুরুষ। পুরুষ যাতে নারীর প্রতি সবসময় আকর্ষিত হয়, তার জন্য কন্টেনারের কাঠামোও নারী শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হচ্ছে। নারকেল তেল থেকে গাড়ির ইঞ্জিন সব কিছুরই গঠনে বা জিনিসপত্রের গায় আটকান ছবি—সবেতেই নারী শরীরের অবস্থান। হাঁটুতে লাগানোর নিক্যাপ-এর প্যাকেট দেখলে দেখা যাবে একজন নারী সেটি পরে আছেন এমন ছবি দেওয়া আছে। শীতকালীন পোশাক থেকে শুরু করে ঠান্ডা পানীয়— সবেতেই নারীর উপস্থাপনা হল সে সেবাদাসী, যৌনদাসী। নারীর যে মেধা, মনন, সৃষ্টি করার ক্ষমতা থাকতে পারে, তা এই সমাজ এখনও মেনে নিতে পারেনি। এখন কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য বিজ্ঞাপনের ভাষায় বদল এসেছে। সেটা আশার কথাও।
একজন নারীর ‘কেরিয়ার’-এর সবচেয়ে বড় বাধা, তাকে বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে অন্যত্র চলে যেতে হবে। খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে এ নিয়ে দু’ জনের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া। এত কিছুর নেতিবাচকের পরেও দেখে ভালো লাগল, একটি বিজ্ঞাপনে একজন হবু কনে ভবিষ্যতের তার স্বামীকে নিজের কেরিয়ার নিয়ে প্রশ্ন করছেন। খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়। পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। যদিও এখনও মেয়েরা অনেক পিছিয়ে বিয়ের পরে নিজেদের চাকরি টিকিয়ে রাখার বিষয়ে।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
বিজ্ঞাপনের জগৎ সবসময় সমাজে দ্বিমুখী বিভাজনে বিশ্বাস করে— এক, নারী এবং দুই, পুরুষ। পুরুষ যাতে নারীর প্রতি সবসময় আকর্ষিত হয়, তার জন্য কন্টেনারের কাঠামোও নারী শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হচ্ছে। নারকেল তেল থেকে গাড়ির ইঞ্জিন সব কিছুরই গঠনে বা জিনিসপত্রের গায় আটকান ছবি—সবেতেই নারী শরীরের অবস্থান। হাঁটুতে লাগানোর নিক্যাপ-এর প্যাকেট দেখলে দেখা যাবে একজন নারী সেটি পরে আছেন এমন ছবি দেওয়া আছে। শীতকালীন পোশাক থেকে শুরু করে ঠান্ডা পানীয়— সবেতেই নারীর উপস্থাপনা হল সে সেবাদাসী, যৌনদাসী। নারীর যে মেধা, মনন, সৃষ্টি করার ক্ষমতা থাকতে পারে, তা এই সমাজ এখনও মেনে নিতে পারেনি। এখন কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য বিজ্ঞাপনের ভাষায় বদল এসেছে। সেটা আশার কথাও।
একজন নারীর ‘কেরিয়ার’-এর সবচেয়ে বড় বাধা, তাকে বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে অন্যত্র চলে যেতে হবে। খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে এ নিয়ে দু’ জনের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া। এত কিছুর নেতিবাচকের পরেও দেখে ভালো লাগল, একটি বিজ্ঞাপনে একজন হবু কনে ভবিষ্যতের তার স্বামীকে নিজের কেরিয়ার নিয়ে প্রশ্ন করছেন। খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়। পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। যদিও এখনও মেয়েরা অনেক পিছিয়ে বিয়ের পরে নিজেদের চাকরি টিকিয়ে রাখার বিষয়ে।
* প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।