মাছটি কাঁকলে, কাঁকিলা, বোগো, বকমাছ নামেই বেশি পরিচিত। এর দেহ লম্বা নলের আকারের। মুখের সঙ্গে সূচালো চঞ্চুটি অনেকটা লম্বা বকের চঞ্চুর মতো। মাছটি লম্বায় এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর লেজের কাছেই পায়ু পাখনা। মাছটির গায়ের রং সাদা বা হালকা সবুজ আভাবিশিষ্ট।
কাঁকলে মাছের স্বাদ তারিফ করবার মতো। মাছটির লম্বা চোয়ালে ধারালো দাঁত আছে। একটু নোনা জলই এরা পছন্দ করে। তবে মিষ্টি জলেও এরা বেশ বেড়ে ওঠে স্বচ্ছন্দে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ক্যানিং অঞ্চলে, নদীতে তো পাওয়া যায়ই, সেই সঙ্গে দীঘিতেও এদের মেলে। এই ব্লকের ঘোলা ও দাঁড়িয়া বাজারে প্রায়ই দেখা যায়। সারা রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় এ মাছ পাওয়া যায় না। মাছটিকে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির একটি বলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৮৫: মাছে-ভাতে বাঙালি বঞ্চিত দেশি সরপুঁটি মাছের স্বাদ থেকে
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪২: স্নেহ ও ধর্মবোধের টানাপোড়েনে কার জয়?
মাছটির পুষ্টিগত বিশেষত্ব বলতে গেলে আয়রন, ক্যালশিয়াম ও জিঙ্কের সমৃদ্ধ তো বটেই, অল্প যে কয়েকটি মাছ সিলেনিয়ম সমৃদ্ধ এটি তাদের মধ্যে একটি। সুতরাং অপজারক হিসেবে এই মাছটির একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সিলেনিয়াম উত্তাপে সহজে নষ্ট হয় না। সুতরাং রান্না করা মাছ সহজে অপজারক হিসেবে কাজ করে। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সিলেনিয়ামের কত যে ভূমিকা আছে তা বলে শেষ করা যায় না।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৮: সুন্দরবনের তিন গাজী—রক্তান গাজী, তাতাল গাজী ও শতর্ষা গাজী
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৬: ভয়ের না ‘অভয়ের বিয়ে’
সুন্দরবনের যে কোনও পুকুরে এই মাছটির চাষ সম্ভব। এর যেহেতু অনন্য স্বাদ এবং এটি এক কাঁটার মাছ। তাই ছোট বড় নির্বিশেষে সকলেরই খুব পছন্দের মাঝে এটি। এই মাছটির চাষ করতে গেলে বাইরে থেকে খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেই খাবারে আমিষ উপাদান রাখতেই হবে। তা সে শুঁটকি মাছের গুড়োই হোক বা কুঁচো চিংড়ি হোক বা গেড়ি গুগলি হোক।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-৩: মালতীর কথা…
রাক্ষসের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ঢুকে গেলেন বেতারকেন্দ্রে
কাঁকলে, কাঁকিলা, বোগো বা বকমাছ যে নামেই ডাকুন না কেন এদের এই সব খাবার দিতেই হবে। যদিও এই মাছ চাষের সম্ভাবনাও খুব ভালো। এ যাবৎ যে কোনও কারণেই হোক এর চাষ আমার নজরে অন্তত পড়েনি। বাজারে যেটুকু আসছে তার সবটাই প্রকৃতিজাত এবং মূলত নদী থেকেই পাওয়া যায়। কিন্তু এর চাষের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।