একটি সুন্দর ও ছোটমাছ হল, খলশে। এটি ট্রাইকোগাস্টার নামেও পরিচিত। ছোট পুকুরে এককভাবে এমনকি পোনা মাছের সঙ্গে মিশ্র ভাবেও চাষ করা যায়। আমাদের দেশি এই ছোট মাছটি অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখার জন্যে খুব আদর্শ মাছ। আকারে প্রতিটি ১০-১২ সেমি এবং ২০-২৫ গ্রাম মতো হতে পারে।
খলশে মাছ বছরে অন্তত দু’বার ডিম ছাড়ে। প্রতিবার সংখ্যায় ১০ হাজার পর্যন্ত ডিম হয়। জৈষ্ঠ-আষাঢ় থেকে আশ্বিন অবধি ডিম পাড়ার সময়। মশা নিয়ন্ত্রণে এই মাছের জুড়ি নেই। মশার ডিম, লার্ভা দুই-ই খেতে খুব পছন্দ করে। তাই বাড়ির লাগোয়া পুকুর থাকলে বাড়িতে মশার উপদ্রব সহজেই কমে যায়।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৯: ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কোনও ভাবেই শরীরে ঢুকছে না? অজান্তেই এই সব অসুখ ডেকে আনছেন কিন্তু
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১১: সুন্দরবনের ব্যাঘ্রদেবতা দক্ষিণ রায়
এই বাহারি মাছটিকে বাদ দিয়ে অ্যাকোয়ারিয়ামে কেন যে অনেকে বিদেশি রঙিন মাছ রাখেন তার যুক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাড়িতে চৌবাচ্চায় রেখেও এই মাছটির ওপর ভরসা করে ভালোই আয় করা সম্ভব। সেখানে প্রণোদিত প্রজনন করেও ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে লাগবে শুধু হরমোন ও ইনসুলিন ইনজেকশনের সিরিঞ্জ।
আরও পড়ুন:
কলকাতার পথ-হেঁশেল: উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া— প্রাণের আশ-প্যান্থেরাস
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৪: গলায় মাছের কাঁটা ফুটলে ওষুধ খেলে গলে যায়?
বাড়ির লাগোয়া ছোট পুকুর থাকলে সেখানেও এই মাছ ছেড়ে দিলে বাঁচবেই। শুধু তাই নয়, বংশবিস্তারও হবে নিশ্চিতভাবে। রঙের জৌলুস বজায় রাখতে বিশেষ কিছু উপাদান খাবারের সঙ্গে যোগ করা দরকার। সাধারণত চালের কুঁড়ো ও বাদাম খোলের গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য অনুখাদ্য মিশিয়ে ওদের জন্য খাবার তৈরি করা হয়। তবে এর সঙ্গে পালং পাতার নির্যাস, গাজরের নির্যাস ও কচি সজনে পাতা বাটা সেই খাবার সেমাই আকারে দেওয়া হলে ওদের রঙের ঔজ্জ্বল্য সহজেই সর্বদা বজায় থাকে।
রঙিন মাছের বাজারে কদর ও দাম দুই-ই পাওয়া যায়। এই ভাবে সহজে এই খলশে মাছকে প্রতিপালন করতে পারলে শুধু যে কিছুটা আয় হবে তা নয়, বাড়িতে মশার উপদ্রব কমবে। সর্বোপরি এদের অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।