শনিবার ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

প্রবাল প্রাচীর এক সুন্দর বাস্তুতন্ত্র। একে জীবন্ত যাদুঘর বললেও অত্যুক্তি হবে না। এই কারণেই এটি সুন্দর। কারণ, এক একটি প্রবাল প্রাচীর অনেক সামুদ্রিক জীবকে শুধু যে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করে, তাই নয় তাদের খাদ্য যোগানেও এর ভূমিকা আছে।
পরিবেশজনিত আঘাত থেকে সেই সামুদ্রিক প্রাণীগুলিকে বাঁচিয়ে সুরক্ষিত রাখে এই প্রবাল প্রাচীর। পৃথিবীর সমস্ত বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে এই প্রবাল প্রাচীর অতীব সুন্দর। এই প্রাচীরের বাস্তুতন্ত্রে বহু সংখ্যক অবলুপ্ত প্রাণী বাস করতে পারে। এটি এতটাই প্রতিশ্রুতিপূর্ণ যে, মানবজীবনের বেশ কিছু পচনশীল ক্ষতরোগের চিকিৎসা ও সংক্রামক জীবাণুঘটিত রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা প্রমাণিত হয়েছে। সেই অর্থে প্রবাল প্রাচীরকে আমাদের আগামীদিনের আংশিক ওষুধের ভাণ্ডার বললেও অত্যুক্তি হবে না বোধ হয়।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৬: ঈল মাছের এই রহস্য নিশ্চয়ই একদিন উদঘাটন হবে

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮: সুন্দরবনের নিশ্চিহ্ন প্রাণী

প্রাচীরের গঠন খুব ধীরে হয়। নানা রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে পরিণত প্রবাল প্রাচীর তটভূমি অঞ্চলকে ভূমিক্ষয়ের হাত থেকে ও অন্যান্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। আমাদের দেশে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ ও মিনিকয় ও আমিনদ্বীপে, তামিলনাড়ুতে অবস্থিত ‘গালফ অফ মান্নার’, গুজরাতে অবস্থিত ‘গালফ অফ কাছ’—এই জায়গাগুলি প্রবাল প্রাচীরের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১: একটু শুরুর কথা হলে ক্ষতি কী…

পাখি সব করে রব, পর্ব-১: সবুজ সুন্দরী মুনিয়া

প্রবালের প্রলেপ জোয়ার ভাটা খেলার জায়গায় নিমজ্জিত তটভূমি অঞ্চলে বিশেষত পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে প্রবাল বৈচিত্র্য বিশেষ কিছু প্রাণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রবাল বাস্তবে প্রাণী। গাছের সংস্পর্শে থাকে এবং এর মধ্যেই বেঁচে থাকে। বাস্তবে প্রবালের অবয়ব শত সহস্র ক্ষুদ্র প্রাণীদের নিয়ে উপনিবেশ সৃষ্টি করে প্রবাল তৈরি করে। পরিবেশ দূষণ, অতিমাত্রায় মৎস্য শিকার, ব্যাপক এবং অসংগঠিত ভূমি উন্নয়নব্যবস্থা প্রবাল প্রাচীরের বেঁচে থাকার বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২৬: হারায়ে খুঁজি

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৮: হৃদয়ে আমার দিয়েছে ঢেউ, ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ

ডিনামাইটের দ্বারা মৎস্য শিকার এমন এক চরম অবস্থা, যার সাহায্যে মৎস্যজীবীরা হয়তো অনেক ছোট মাছ ধরে ফেলতে পারেন। কিন্তু সেই সঙ্গে প্রবাল প্রাচীরেরও ধ্বংস সাধন করেন ব্যাপক হারে। পলি জমলে প্রবাল কোষ এবং খাদ্যের মধ্যে যা অণুশৈবাল তৈরি করতে সাহায্য করে তা বাধা প্রাপ্ত হয়। অনেক সময় পর্যটকদের দ্বারাও প্রবাল প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নৌকার নোঙ্গর ফেলার মাধ্যমে এবং জাহাজের ধাক্কায় প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি হতে পারে।

আমরা অন্তত কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে প্রবাল প্রাচীরকে রক্ষা করতে পারি। যেমন, জলে নোংরা বিশেষত প্লাস্টিক ফেলে দূষণ যেন বাড়িয়ে না তুলি। কোনওভাবেই প্রবালের ওপর নৌকার নোঙ্গর ফেলা যাবে না। ডুবুরি যাঁরা জলের তলায় চলে যান এবং ছবি তোলেন তারা যদি প্রবালকে স্পর্শ না করেন এবং নিজের সাঁতার কাটার পাখনা ও হাত প্রবাল থেকে দূরে রেখে ছবি তোলেন তাতেও অনেক উপকার হবে।

ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

নৌকা থেকে ময়লা বা দূষিত পদার্থ কোনওভাবেই যেন জলে না ফেলা হয় যাতে অণুশৈবালগুলি শ্বাসরুদ্ধ না হতে পারে এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ তাতেই প্রবাল বেঁচে থাকবে। প্রবাল প্রাচীরের মতো বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করা একান্ত জরুরি‌। এই জলজ জৈব সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং আগামী দিনের পরিবেশজনিত তীব্র ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করতে প্রবাল প্রাচীরগুলি রক্ষা করা দরকার। আমাদের এই যে সম্পদ, যা দেশের তিনটি জায়গায় আছে তা বিশেষ গৌরবের। একে রক্ষা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

ঋণ স্বীকার:
নেটওয়ার্ক ফর ফিশ কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাস্টেনেবেল ফিশিং অ্যান্ড মেরিন প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, কোচিন, কেরল।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content