শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


সাফল্যের কারণ বা মূলকথা যাই হোক না কেন যত্ন, শ্রম ও অধ্যবসায় —এই ত্রয়ীর আমাদের জীবনের কর্মক্ষেত্রে যে অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মাছচাষের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল আরেকটি বিষয়, পরিচর্যা।
চারাপোনা ছাড়লেই শুধু হল না, তার পুষ্টি, বাড়বৃদ্ধি, রোগবালাই প্রতিকার, সার্বিক উৎকর্ষ—এই সবকিছুই, এমনকি বাসযোগ্য জল ও মাটির প্রতিপালনও মাছচাষের সার্বিক সাফল্যের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত তো বটেই সেই সঙ্গে যুক্ত রোজগারের দিকটিও। রোগ সংক্রমণ এড়াতে পারলে মাছের ফলনের কাঙ্খিত লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছনো সম্ভব।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬২: মাছের পোনার পুষ্টির গুণমান ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে নিশ্চিত আয় সম্ভব

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২২: কেস কালাদেও: ফাইল নম্বর ১

মাছের নানান রকম রোগ হয় এবং তা হয় নানা কারণের জন্য। যেমন, জলের গুণমান খারাপ হলে রোগ জীবাণু বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, উকুন, কৃমি এদের আধিক্য হলে রোগ সংক্রমণ ঘটে। মাছের শরীরে কোথায় কোথায় রোগ সংক্রমণ ঘটতে পারে তার একটি আঁকা চিত্র দেখানো হল। অনেক সময় দেখা যায় মাছের গায়ে জোঁক লেগে তা থেকে সামান্য যে ক্ষত সৃষ্টি হয় সেই সব জায়গাগুলিতে ছত্রাক আক্রমণ খুব সহজেই হয়ে যায় এবং তা সহজেই বেড়ে ওঠে।
রোগ বালাইয়ের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল—মাছ খেতে চায় না। নিজের ভারসাম্য হারিয়ে পুকুরে প্রায়ই ভেসে থাকে। স্বাভাবিক উজ্জ্বল্য কমে যায়। এই রকম অনেক কিছু পুষ্টির ঘাটতি ক্রমাগত হলেও এই রোগ বালাই হয়। মাছের একটি ক্ষতরোগ যা সংক্ষেপে ইইউএস নামে পরিচিত। শীতের শুরুতে মিষ্টি জলের পুকুরে এই রোগ দেখা যায়। পুকুরে ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে এবং যত্নবান না হলে চাষী ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। মাছ রোগাক্রান্ত হল কিনা তা পরখ করবার জন্য মাঝে মাঝে জাল টেনে দেখা উচিত।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪১: কান্না হাসির দোল দোলানো ‘একটি রাত’

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১৮: দেবাসুরের সমুদ্রমন্থন, শুভাশুভের দ্বন্দ্ব — জয় কার? একটি অনন্ত জিজ্ঞাসা

রোগ এড়াতে আগাম ব্যবস্থাই হল প্রতিরোধের উপায়। জলের পিএইচ চেক করে নিয়মিত ব্যবধানে চুন প্রয়োগ বা পুকুরের তলদেশে মাসে একবার রেকিং করে জমা গ্যাস বের করে দেওয়া, এইগুলো সহজ। ক্ষতরোগে নিম হলুদের বাটা মিশ্রণ, সঙ্গে অল্প চুন ১৫ দিনে একবার দিতে পারলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে ১৫ লিটার জলে ১০০ মিলি লিটার আয়োডিন দ্রবণ মিশিয়ে সেই জল পুকুরের ছড়িয়ে দিতে পারলে বা নিদেন পক্ষে মোটা দানা লবণ মাটির সঙ্গে শুকনো বলের আকারে কাঠা পিছু ১০০ গ্রাম হিসেবে মাসে একবার দিতে পারলে ভালো।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৭: মদ না খেলে ফ্যাটি লিভার হয় না?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১: জয়রামবাটির আদরের ছোট্ট সারু

এছাড়াও পুকুরের জলে বায়ু সঞ্চালন করে অক্সিজেনের যোগান অব্যাহত রাখতে পারলে রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধের অর্ধেক জয়ী হওয়া যায়। অনেক সময় চাষি ধৈর্য ধরতে না পেরে চটজলদি মাছের রোগ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন। এমনকি নানান ধরনের ক্ষতিকারক ও অনভিপ্রেত রাসায়নিক প্রয়োগ করে ফেলেন। তার ফলে মাছের রোগ বালাই দমন তো দূরের কথা দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তি হয় আমাদেরই, যারা সেই মাছ কিনে খাই তাঁদের অর্থাৎ উপভোক্তাদের।
প্রতিকারের চাইতে সতর্কতা যে সততই ভালো সেটা বোধহয় মাছচাষের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। পুকুরের উৎপাদনশীলতা ব্যাহত যাতে না হয় এবং অনভিপ্রেত রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে ক্রেতাকে যাতে ক্ষতিকারক ফল ভোগ করতে না হয় সে বিষয়ে নজরদারির প্রয়োজন আছে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content