![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/fish-4-2.jpg)
আমাদের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি জলের যে সমস্ত প্রাণীরা স্থান পেয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, কাছিম, ঝিনুক, গুগলি, শামুক প্রভৃতি। এদের মধ্যে আবার চিংড়ির আকর্ষণ কিন্তু চিরকালীন। বিশেষ করে প্রজাতিটি যদি গলদা চিংড়ি হয়, তাহলে তো কথাই নেই। অতি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই চিংড়ির দেশে এবং বিদেশের বাজারেও ভীষণ চাহিদা আছে। আর যার ফলে যারা চাষ করেন তারাও ভালো দাম পান এবং সমাদরও পেয়ে থাকেন।
অন্যান্য চিংড়ির তুলনায় এর বিশেষ কিছু সুবিধাও আছে। প্রথমে বলে রাখি, পশ্চিমবঙ্গের জলাশয় সমূহ আমাদের একটি বিরাট সম্পদ। মাছচাষ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও চিংড়ির চাষের প্রসার ও সম্প্রসারণ খুব বেশি দিনের কথা নয়। বিশেষ করে গলদা চিংড়িটির যে সুবিধাগুলো চাষীরা দেখেছেন, এদের মধ্যে লার্ভা জীবন খুব স্বল্প স্থায়ী, তাপমাত্রা ও লবণাক্ত ভাবের হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহনশীলতা অনেক বেশি। পোনা জাতীয় মাছের সঙ্গে মিশ্রচাষে এদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আবার ফলনও ভালো হয়। সবচেয়ে বড় সুবিধা অতি দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে গলদা চিংড়ি।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/fish-1-1.jpg)
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬০: গ্রাম বাংলায় আমুর কার্প মাছের বীজ উৎপাদন করে ভালো রোজগার করা সম্ভব
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Sundarban-4.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২: চলমান সুন্দরবন
এমনকি বাগদা চিংড়ির চাইতেও এদের বাড়বৃদ্ধি অনেকটাই বেশি। এরা অনেক বেশি শান্ত প্রকৃতির হয়। নদী থেকে এর চারা সহজেই পাওয়া যায়। অন্য চিংড়ির চারা থেকে এদের বেছে নিতে অসুবিধে হয় না। আর আজকাল তো হ্যাচারিতে চারা উৎপাদন হচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। এদের পাঁচ জোড়া পায়ের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় জোড়াটির অগ্রভাগে একটি করে সাঁড়াশি বা দাঁরা থাকে, যার সাহায্যে এরা খাবার ধরে নিয়ে খেতে পারে। একইসঙ্গে আক্রমণও প্রতিহত করতে পারে। যদি তেমন প্রয়োজন হয় এর ওপরে ভর দিয়ে হাঁটতেও পারে। স্ত্রী চিংড়ির তুলনায় পুরুষরা আকৃতিতে বড় হয়।
সাধারণত সন্ধের পরে ওদের বিচরণ শুরু হয়। খাওয়া, খোলস ছাড়া ও জীবনের সবকিছু প্রয়োজনীয় কাজ এই সন্ধের সময়ে এরা মিটিয়ে নেয়। এরা মিষ্টি জলের প্রাণী হলেও মনে রাখতে হবে লার্ভা প্রতিপালন নোনা জল ছাড়া সম্ভবই নয়। পরিণত অবস্থায় নদীতে চিংড়িকে সর্বদাই মোহনার কাছে ছুটে যেতে হয়। মিলনের আগে স্ত্রী চিংড়ি অবশ্যই খোলস ছাড়ে। একে মোল্টিং বলা হয়। এর জন্য সে আড়াল খোঁজে। খোলস ছাড়তে সময় লাগে মাত্র দশ মিনিট। কিন্তু নতুন খোলস শক্ত হতে আবার বেশ কদিন সময় লাগে। যখন শরীর নরম থাকে একমাত্র তখনই পুরুষ চিংড়ির সাথে এদের মিলন ঘটে। প্রায় হাজার পাঁচেক ডিম তো এরা ছাড়বেই।
সাধারণত সন্ধের পরে ওদের বিচরণ শুরু হয়। খাওয়া, খোলস ছাড়া ও জীবনের সবকিছু প্রয়োজনীয় কাজ এই সন্ধের সময়ে এরা মিটিয়ে নেয়। এরা মিষ্টি জলের প্রাণী হলেও মনে রাখতে হবে লার্ভা প্রতিপালন নোনা জল ছাড়া সম্ভবই নয়। পরিণত অবস্থায় নদীতে চিংড়িকে সর্বদাই মোহনার কাছে ছুটে যেতে হয়। মিলনের আগে স্ত্রী চিংড়ি অবশ্যই খোলস ছাড়ে। একে মোল্টিং বলা হয়। এর জন্য সে আড়াল খোঁজে। খোলস ছাড়তে সময় লাগে মাত্র দশ মিনিট। কিন্তু নতুন খোলস শক্ত হতে আবার বেশ কদিন সময় লাগে। যখন শরীর নরম থাকে একমাত্র তখনই পুরুষ চিংড়ির সাথে এদের মিলন ঘটে। প্রায় হাজার পাঁচেক ডিম তো এরা ছাড়বেই।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Hirak-Rajar-Deshe.jpg)
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩৫: বাঘের কাছ থেকে চাবি আনতে গিয়ে বাঘা রুপী রবি ঘোষের অবস্থা কী হয়েছিল সহজেই অনুমেয়
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/samayupdates_kyablader-chotobela-4.jpg)
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৪: এ শুধু অলস মায়া?
সময়ের সঙ্গে এই সংখ্যাটি আরও বেড়ে যায়। এমনকি কুড়ি ও ত্রিশ হাজারও হতে পারে। নিষিক্ত ডিম প্রাথমিক অবস্থায় উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়। ক্রমে তা পরিবর্তিত হয়ে বাদামি রং ধারণ করে। দেখা গিয়েছে, ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড জলের তাপমাত্রায় এবং ১২ পিপিটি লবণাক্ততায় ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোতে সময় লাগে পনের দিন বা একটু বেশি। ডিমের খোলস থেকে বাচ্চা বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মা চিংড়ি ল্যাজ এবং সন্তরণপদগুলো দিয়ে লার্ভাগুলোকে দূরে সরিয়ে দেয়। কিছুটা সময় পরে এই লার্ভা লেজ ওপরে ও মাথা নিচে রেখে ভাসতে থাকে। এদের পছন্দের খাবার প্রাণীকণা। সবথেকে পছন্দ কবচি প্রাণী, যেমন আর্টিমিয়া নপ্লিয়াস লার্ভা।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/uric-acid-care.jpg)
শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়েছে? প্রাকৃতিক উপায়েই সহজে জব্দ হবে এই রোগ, কী ভাবে?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/bed-room.jpg)
বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-২১: বাস্তু মতে, বাড়ির সবার শোয়ার ঘর কোন দিকে হলে ভালো? কোন দিকেই বা থাকে ঠাকুর ঘর?
নোনা জল, যার লবণাক্ততা ১০ থেকে ১৫ পিপিটি এবং স্রোতকম সেই জায়গাতে এরা বেড়ে ওঠে। সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য পেয়ে যায়। গলদার লার্ভাকে জুইয়া বলা হয়। লার্ভা অবস্থায় এক মাসের কিছু বেশি দিন থাকে। এরমধ্যে এরা বেশ কয়েকবার খোলস ছাড়ে এবং পোস্ট লার্ভাতে পরিণত হয়। পোস্ট লার্ভা হল একটি সম্পূর্ণ চিংড়ির আকার। লার্ভা থেকে পোস্ট লার্ভায় পরিণত হতে সময় লাগে ১৫ দিন। পোস্ট লার্ভার দৈর্ঘ্য ১০ মিলি মিটার। এদের লবণ জলের সহনশীলতা খুব বেশি। দু’ সপ্তাহের মধ্যে ১৫-২০ মিলিমিটার হয়ে যায় এরা। তারপর ক্রমশই এরা মিষ্টি জলের দিকে যেতে শুরু করে। আবার সেই নদীর ধার ঘেঁষেই এগিয়ে চলে। এক মাসের মধ্যে আবার খোলস ছাড়ে এবং এই পোস্ট লার্ভা জুভেনাইল অবস্থায় পরিণত হয়, যার দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৭০ মিলিমিটার। এ বার ক্রমশ এরা মিষ্টি জলে বড় হয় এবং প্রজনন ক্ষম অ্যাডাল্ট গলদায় পরিণত হয়।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/fish-5.jpg)
মাছ চাষের সঙ্গে সহজেই গলদা চাষ করা যায়। দেখা গেছে, যে সব পুকুরে মাটিতে একটু বালির পরিমাণ বেশি সেই পুকুরগুলোতে এই মাছ চাষ খুব ভালো হয়। পুকুরে বেশি পাঁক থাকলে গলদা চাষ কিন্তু ভালো হবে না। সব জল চিংড়ি চাষের উপযুক্ত নয়। জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন পাঁচ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে থাকা একান্ত দরকার।
গলদা চিংড়িতে রোগবালাই কম হওয়ায় চাষে ঝুঁকিও কম। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে যারা গলদা চিংড়ির চাষ করবেন তা এককভাবেই হোক বা পোনা মাছের সঙ্গে মিশ্রভাবেই হোক, গলদা চিংড়ি চাষির মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলবেই। সবচেয়ে আশার কথা এই রাজ্যেই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ভুবনেশ্বরে অবস্থিত ‘সিফা’ থেকে উন্নতমানের পোস্ট লার্ভা এনে চিংড়িচাষে সাফল্য লাভ করেছেন।
গলদা চিংড়িতে রোগবালাই কম হওয়ায় চাষে ঝুঁকিও কম। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে যারা গলদা চিংড়ির চাষ করবেন তা এককভাবেই হোক বা পোনা মাছের সঙ্গে মিশ্রভাবেই হোক, গলদা চিংড়ি চাষির মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলবেই। সবচেয়ে আশার কথা এই রাজ্যেই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ভুবনেশ্বরে অবস্থিত ‘সিফা’ থেকে উন্নতমানের পোস্ট লার্ভা এনে চিংড়িচাষে সাফল্য লাভ করেছেন।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।