চাহিদার নিরীখে কম দামের মধ্যে মাছের বাজারে যে কয়েকটি মাছ পাওয়া যায়, পাঙাশ মাছ তাদের মধ্যে একটি। এই ক্যাটফিশ যে কোনও মিষ্টি জলাশয়ে চাষ করা যায়। এমনকি যেখানে রুই বা কাতলা সচরাচর চাষ হয় না, সেখানেও। পাঙ্গাস মাছ প্রায় সবকিছুই খায়, যদিও আমিষভোজী হিসাবেই বেশি পরিচিত।
এই মাছ বেড়ে ওঠে খুব তাড়াতাড়ি। পরিবহনেরও কোন ঝক্কি ঝামেলা নেই। কম জলে অনেকক্ষণ ধরে বেঁচে থাকতে পারে। বলতে গেলে কম পরিচর্যায় চাষ করতে চাইলে, পাঙাশ মাছ আদর্শ মাছ। উৎপাদনের দিক থেকে দেখলেও রুই বা কাতলার চাইতে অনেকটা বেশি। মাছটিতে কাঁটা কম থাকার কারণে অনেকেই পছন্দ। বিশেষত, অবাঙালি যাঁরা মাছ খান, তাঁরা অনেকেই কেনেন।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৯৪: বিকল্প আয়ের জন্য তোপশে ও আমোদি মাছ চাষ খুবই লাভজনক হতে পারে
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৮: সুন্দরবনের ব্যাঘ্র-পরিচয়
তুলনামূলকভাবে এই মাছের দামও কম। পুকুরে অনেক সময় শামুক বা গুগলি যদি কোনও কারণে বেশি হয়ে যায়, তখন এই মাছটির শরণাপন্ন হন অনেক মৎস্যজীবীই। জৈব নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবলে এই মাছ কয়েকটি থাকলেই হল। কোনও ওষুধ বা রাসায়নিক প্রয়োগের দরকার হবে না।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৯: শ্রদ্ধাঞ্জলি— প্রযোজক-গায়িকা অসীমা মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক ও গীতিকার মিল্টু ঘোষ
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৫: মা সারদার ভ্রাতৃবিয়োগ
আজকাল মাছের ফিলে তৈরিতে দেখা যায়। ফিলের জন্য অনেকেই কম দামের মধ্যে এই মাছটির খোঁজ করেন। কারণ, ভেটকির ফিলের দাম অনেক বেশি হয়। ভিয়েতনাম বা তাইল্যান্ড থেকে এই মাছের ফিলে প্যাকেজিং হয়ে শহরের সুপার মার্কেটগুলিতে আসছে দেখে, কিছু উৎসাহী মাছ চাষি পাঙাশ মাছ চাষে তৎপর হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫২: রামচন্দ্রের বনবাসগমনের সিদ্ধান্তে নৈতিকতার জয়? নাকি পিতার প্রতি আনুগত্যের জয় ঘোষণা?
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৫৩: রোজ রোজ আঁখো তলে…
রাজ্য সরকারের মৎস্য দফতরেও এই মাছের চাষ এবং ফিলে তৈরির জন্য মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়োগ করেছে। নৈহাটির রাজেন্দ্রনগরে এই মাছের হ্যাচারি আছে। ফলে এই মাছ পেতে অসুবিধা হয় না। ঠিক মতো চাষ করতে পারলে পুকুরেই স্বাভাবিক প্রজনন হতে পারে। যেহেতু মাছটি রোগাক্রান্ত হয় না বললেই চলে, তাই ঝুঁকিও কম। পুকুর পতিত না রেখে এই মাছচাষ করলেও আয় সুনিশ্চিত হতে পারে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।