শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


গ্রামের প্রকৃতিতে প্রাণী ও কৃষি থেকে সংসারে কিছুটা আয় বাড়তে পারে। তবে তা কাজে লাগাতে জানতে হবে। এর জন্যে কোন সম্পদটিকে বেছে নেব, উৎপাদন খরচ তার কীভাবে কমানো যেতে পারে—এরকম কিছু জিনিস শিখে নিতে পারলে আয় করা সুনিশ্চিত হতে পারে। সেই রকমই একটি প্রকল্প হল জিয়ল মাছের চাষ। দেশি শিঙ্গি ও দেশি মাগুর মাছের ব্যবসা। সমপ্রজাতির এই দুটি মাছই বেশ সুস্বাদু এবং উচ্চ খাদ্যগুণ সম্পন্নও বটে। কেবলমাত্র স্বাদ, পুষ্টি প্রোটিন ও দীর্ঘ শৃঙ্খল ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদার নিরিখেই নয়, সহজপাচ্য পথ্য ও রোগনিরাময়ে রোগীর খাদ্য হিসেবে এই দুটি মাছের বেশ গুরুত্ব আছে।
আক্ষেপের বিষয়, যে কোনও কারণেই হোক মাছ দুটির বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ এখনও দেখা যাচ্ছে না। বরং পোনা মাছচাষের সূচনাপর্বে মহুয়া খোল-সহ একাধিক বিষাক্ত পদার্থের অপপ্রয়োগে শিঙ্গি, মাগুর দুটি মাছই কয়েকটি দেশীয় মাছের সঙ্গে অবলুপ্তপ্রায় অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। কোনও বাজারেই আজ শিঙি-মাগুর সহজলভ্য নয়। যেটুকু পাওয়া যায়, সবটাই প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত। এই কারণেই এই মাছ দুটির সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে চাষ পদ্ধতি সরলীকরণ বিশেষ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৭৭: সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয়দের ক্রমাগত প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২০: সুন্দরবনের বসন্ত রোগ নিরাময়কারী দেবী শীতলা

সুষ্ঠু প্রজননের ব্যবস্থা কিছু কিছু জায়গায় নেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই শিশু মাছগুলি বড় (অন্তত আঙ্গুলের মাপের) হতে পারল কিনা তার আর বিশেষ ব্যবস্থা কিছু দেখা যাচ্ছে না। আগামী দিনে এই মাছ দুটির আস্বাদন ও পুষ্টির যুগলবন্দিকে জিইয়ে রাখা সম্ভব কিনা এটি এখন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে।
এই মাছ দুটি পালনের এক বড় অন্তরায় হল, সময় মতো সঠিক গুণমানের আঙ্গুলে পোনার হদিস পাওয়া যায় না। অর্থাৎ এদের যোগানের অপ্রতুলতার কারণে এর চাষে হয়তো অগ্রসর হতে চাইলেও সফলতা পাচ্ছেন না অনেকেই। অথচ একটু প্রশিক্ষণ নিয়ে এগোতে পারলে এই মাছ চাষ নিশ্চিত লাভজনক হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি এক একটি মাছকে অন্তত ৫০ গ্রাম ওজনেও পৌঁছনো যায় তাও বাজারে প্রতি কেজি ৫০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করা যেতে পারে অনায়াসে। এখানে রুই, কাতলা ৫০ গ্রাম কেন? ২ কেজি ওজনের রুই, কাতলা চাষ করেও ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে দাম পাওয়া যাবে না নিশ্চিত।
আরও পড়ুন:

পরিযায়ী মন, পর্ব-১২: নেতারহাটের নাশপাতি বাগান

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২১: ওঠো ওঠো রে! বিফলে প্রভাত বহে যায় যে!

সাধারণত অগভীর ছোটপুকুর যেখানে অন্য মাছচাষ লাভজনক নয়, সেখানে অনায়াসে শিঙ্গি, মাগুরের চাষ করা সম্ভব। মাছ দুটিতে ফুলকো ছাড়াও অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকায় এরা বাড়তি সুবিধা পায়। কম জলে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। হাজামজা পুকুর, ডোবা ইত্যাদিতে যেখানে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম, আবার কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অ্যামোনিয়ার মাত্রা অনেকটাই বেশি, যে পুকুর সাধারণত পতিত অবস্থায় পড়ে থেকে দৃশ্যদূষণের কারণ হয়, যা থেকে কোনও আয় প্রায় অসম্ভব—তাও সম্ভব হয়ে ওঠে শিঙ্গি ও মাগুর মাছচাষের মাধ্যমে এবং অল্প খরচে।
আরও আশার কথা হল, চাষের সময় লাগে কম, ঝুঁকিও কম। বিনিয়োগের অর্থ অল্প সময়ের মধ্যে ফেরত পাওয়া যায়। চাষের ব্যবস্থাপনা সরল, মাছ ও তার চারা পরিবহন সুবিধাজনক। এই অবস্থায় চাষি বা যে কেউ এগিয়ে এসে এই চাষের পরিকল্পনা ও প্রারম্ভিক কাজ শুরু করলে সবরকম সহায়তা করবার জন্য আমাদের রাজ্যে অনেকগুলি জায়গা আছে। তাঁর মধ্যে ব্লকস্তরে মৎস্য সম্প্রসারণ বিভাগ, রাজ্য গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতদপ্তরের জেলাভিত্তিক প্রকল্পগুলি ছাড়াও জেলার কৃষিবিজ্ঞানকেন্দ্র, একাধিক এনজিও দপ্তরগুলি যেমন, ডিআরসিএসসি (কলকাতা), সময়িতা মঠ (বাঁকুড়া), রামকৃষ্ণ আশ্রম (নিমপীঠ)।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৭: মা সারদার ভগবতী সাধনা

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১১: আমার নাম, তোমার নাম— তুং নাম, তুং নাম!

এ সব ছাড়াও প্রগতিশীল মাছচাষি হিসেবে স্বীকৃত এমন অনেকে আছেন তাঁরা এই কাজে সহায়তা করতে নিশ্চিতভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। যদি কেউ মনে করেন, তিনি এই লেখকের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। ফোন বা ই-মেলের মাধ্যমে কিংবা সময় আপডেটস-এর মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারেন।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content