বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


যে কোনও শস্য উৎপাদনে সে কৃষিজ শস্যই হোক বা জলজ শস্যই— কিছু সরঞ্জামের সাহায্য আজ একান্তই আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। কৃষিতে বিভিন্ন ধরণের সহায়ক সরঞ্জাম দীর্ঘদিন ধরে অনেক জায়গাতেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে সাফল্যের সঙ্গে। অধিকাংশ কৃষকই এই ব্যাপারে সচেতন। তাঁরা এগুলোর প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন প্রতিনিয়ত।
আমাদের রাজ্যের যে কোনও ব্লক বা পঞ্চায়েত এলাকায় গেলেই নজরে পড়বে একাধিক কৃষি বিপণী। যেখানে বীজ, সার, কীট বিতারক প্রভৃতি নানাবিধ উপকরণ-সহ বিভিন্ন যন্ত্র পাওয়া যায়। যখন কৃষি সম্প্রসারণ আধিকারিক ব্লক থেকে মাঠ পরিদর্শনে যান তখন নিশ্চিতভাবেই তিনি দু’ একটি সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৪: মাছের বাজারের দুনিয়ায় আলিপুরের ‘নেট বাজার’ তালিকায় শীর্ষে

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৯: কুরদার ইকো রিসর্ট—অনাবিস্কৃত এক মুক্তা

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০: প্রশিক্ষক গুরু বিশ্বামিত্র, নারীহত্যা না মানবধর্ম?

প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: ভ্যাকসিনে আটকানো যাবে ক্যানসার, হার্ট আ্যটাক বা অটোইমিউন ডিজিজের মতো মারণ ব্যাধি

মাছ চাষের ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য হয়ে যায়। এই সুবিধাগুলি প্রায় কোনও মাছচাষি পান না। কারণ, এক ছাদের তলায় তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর একটিও বিপণী নেই বললেই চলে। একজন মাছচাষি যদি মাছ ধরবার জাল বা অতি সাধারণ একটি প্ল্যাঙ্কটন নেট কিনতে চান তাহলে তাঁকে নিশ্চিতভাবে দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের চেতলা রোডে আসতেই হবে। এমনকি সামান্য একটি পিএইচ পেপারের স্ট্রিপ কিনতেও নিকটস্থ জেলার বড় কোনও ওষুধের দোকানে খোঁজ করতে হবে।
একই কথা প্রযোজ্য যদি তিনি জলের তাপমাত্রা দেখার জন্য নির্ভরযোগ্য একটি থার্মোমিটার কিনতে চান বা জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন অথবা অ্যামোনিয়া পরিমাপের টেস্টকিট কিনতে চান, এগুলির একটিও কিন্তু সহজলভ্য নয়। অথচ আধুনিক মাছচাষে এই সরঞ্জামগুলি অপরিহার্য। মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য লম্বা হাতল ওয়ালা স্কুপনেট, পুকুরের তলদেশে জমা গ্যাস দূরীকরণের জন্য রেকার বা হররা, পুকুরের মাটি সংগ্রহের জন্যে একম্যান ড্রেজ, মাছের ঘরোয়া খাবার তৈরির জন্য হাত বা মটর চালিত মেশিন কিনতে গেলেও শহরে আসতে হবে।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, জীবনে যা কিছু করেছি, প্রত্যয়ের সঙ্গে করেছি: কানন দেবী/২

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪: একজন জ্ঞানী পণ্ডিত এবং ব্যবসায়ীর মধ্যে রাজা কাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৪: স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের ‘রাত-ভোর’

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৯: উন্নয়নের কাণ্ডারী নির্ণয়ে পিতৃতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্ব

মাছচাষ হবে গ্রামাঞ্চলে আর উপকরণ উপলব্ধ হবে শহরাঞ্চলে। এ কেমন কথা? কী ভাবেই বা তা দীর্ঘদিন চলতে পারে? বিশেষ করে এমন একটি রাজ্যের ক্ষেত্রে, যে রাজ্য মাছ উৎপাদনে দেশের মধ্যে সেরা শিরোপাতে চলেছে একাদিক্রমে এবং বহুদিন ধরে। বছরের এই সময় মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য অত্যন্ত জরুরি যে হরমোনের প্রয়োজনীয় ভায়ালটিও গ্রামীণ কোন বিপণীতে পাওয়া মুশকিল। অথচ একই ছাদের তলায় জল ও মাটি পরীক্ষার সরঞ্জাম, জাল, জৈব সার, চুন, পটাশপারমাঙ্গানেট, মাছের খাবার তৈরির ঘরোয়া মেশিন যা দিয়ে সেমাই বা চাওমিনের আকারের খাবার নিমেষেই বানিয়ে নেওয়া যায়, যদি সামান্য প্রশিক্ষণ থাকে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১০: কিশোর কণ্ঠের উপর যেন এক অলিখিত দাবি ছিল পঞ্চমের

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৯: পাকা আম খাবেন, নাকি কাঁচা আম?

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: ডায়েরিয়াতে ভুগলে কী করণীয়? রইল আয়ুর্বেদ মতে সহজ সমাধান

আমাদের সব ব্লকেই দরকার অ্যাকোয়া শপ যেখানে মাছচাষি তার প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াও কিছু কিছু সমস্যার সমাধানের পরামর্শ পেতে পারেন, যাতে কথায় কথায় দূরে ব্লকে যেতে না হয়। হায়দরাবাদে অবস্থিত এনএফডিবি বা ন্যাশনাল ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ড এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াও, এ নিয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্যে কারিগরী এবং আর্থিক সহায়তা-সহ বহু সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছেন। এ সবের জন্য জেলার কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র, ব্লকের মৎস্য সম্প্রসারণ কার্যালয়, সরকারি মৎস্য গবেষণা এবং শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে।
আমাদের গ্রামের আগ্রহী শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা ভেবে দেখতে পারেন, স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে এই ধরনের অ্যাকোয়া শপ বা ওয়ান স্টপ অ্যাকোয়া শপ খোলা যেতে পারে কিনা। সকলকে যে মাছ চাষ করতেই হবে এমন কোনও কথা নেই। এ ভাবেও যারা ইচ্ছুক, তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে এবং সামান্য বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজেরা উপকৃত হতে পারেন। আবার মাছ চাষিদেরও সাহায্য করতে পারেন।

এই রকম বিপনীর সঙ্গে সঙ্গে যদি যদি আরও কিছু যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিয়ে মীনমিত্র হিসেবে কাজ করতে পারেন, দূরদূরান্তরের চাষিদের পরামর্শ প্রদান করে। ন্যূনতম একটি ফি তাঁরা আশা করতেই পারেন মাছ চাষিদের পরিষেবা দেবার পর। মাছচাষকে কেন্দ্র করে এ ভাবেও গ্রামে কিন্তু আয়ের সম্ভাবনা আছে। আগ্রহীরা ভেবে দেখতে পারেন।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content