রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


আমাদের গ্রাম বাংলায় ছোট পুকুর, মজে যাওয়া পুকুরের সংখ্যা অনেক। রাজ্য মৎস্য দপ্তরের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই সংখ্যাটি প্রায় তেরো লক্ষ। এই রকম একেকটি পুকুরে শুধু মৌরালা মাছ চাষ করেই যদি বছরে অন্তত ১০ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়, তাহলে ওই মাছের মাধ্যমে প্রায় ২০ লক্ষ শিশুকে বছর ভর প্রয়োজনীয় ভিটামিন-এ যোগান দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে খনিজ মৌল যেমন— ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, আয়রনের প্রাপ্তিও সম্ভব। এই অনুপুষ্টির ঘাটতি বরাবরই আমাদের শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং এই সমস্যা সব জেলাতেই কমবেশি রয়েছে।
কেবল এইটুকু তথ্য থেকে বোঝা যায়, গ্রামের জলাশয় থেকে সহজে পাওয়া দেশি মাছ উৎপাদন কতটা সম্ভাবনাময়। খাদ্য নিরাপত্তা তো নিশ্চয়ই, পুষ্টির নিরাপত্তা দিতেও তা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য। এতো গেল আমাদের আশপাশে গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট পুকুরগুলির সম্পর্কে একটি সাধারণ আলোকপাত।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৯: মিশ্র মাছ চাষের অভিনবত্ব

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৪: সবুজের নেশায় অভয়ারণ্য/২

গ্রাম বাংলা কত যে খাল, বিল, ঝিল, নয়নজুলি আছে তার কোনও হিসেব নেই। সেই সব জায়গায় প্রকৃতির অকৃপণদানে পাওয়া পর্যাপ্ত সূর্যকিরণের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক খাদ্যকণা অনায়াস উৎপাদন হয়। এর সঙ্গে আছে উর্বর মাটি, মিষ্টি জলের সম্ভার এবং সর্বোপরি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মাছ প্রতিপালনের পরম্পরাগত জ্ঞান। যাতে আমরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পুকুরে এই সব ছোট মাছ থাকলে অনেক মানুষের, যারা বছরের বেশ কিছুটা সময়ে ভাত, ডাল ও সব্জি খেয়েই কাটান, তাঁরা মাছ ভাত খেয়ে কিছুটা পুষ্টি পেতে পারেন।
আরও পড়ুন:

স্বাদে-গন্ধে: সামনেই জন্মদিন? বিশেষ দিনের ভূরিভোজে বানিয়ে ফেলুন কাশ্মীরি পদ মটন রোগান জোস!

ক্লাসরুম: মাধ্যমিক ২০২৩: ইংরাজি পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিলে ভালো ফল করা সম্ভব, তা দেখে নাও একঝলকে

অতিমারি উত্তরকালে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আবহে এই ছোট মাছ চাষের গুরুত্ব বেড়েছে। এই সব মাছের জন্য বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অনেকটা জায়গারও দরকার নেই। আলাদা করে পোনা মজুদ করার তাগিদও থাকে না। কারণ, বদ্ধ জলাশয়ে এদের প্রজননে কোনও সমস্যাই নেই, যা রুই-কাতলা মাছের ক্ষেত্রে সম্ভবই নয়। নিয়মিত পুষ্টির সংস্থান নিশ্চিত হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন তাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিয়ে। সঙ্গে কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, যা সার্বিক উন্নয়নের সহায়ক
মাছ পুনর্নবীকরণযোগ্য জল সম্পদ। তাই বাস্তবতার নিরিখে এইরকম প্রচেষ্টা যদি রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েতের কর্মসূচিতে স্থান পায় তাহলে খবই ভালো হয়। সেই সঙ্গে ওই প্রকল্পে আরও কিছু মাছ যেমন— ল্যাটা, বেলে, চেলা, কুচে, খোলসে, কাকিলা, শিঙি, মাগুর, ন্যাদশ, চাঁদা, পাকাল ইত্যাদি মাছকেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে আমাদের সার্বিক সুস্থতা ও সমৃদ্ধিতে স্থায়ী ভূমিকা পালন করবে। একটুখানি উদ্যোগ এবং সচেতনতা বাড়লেই গ্রামীণ সমৃদ্ধি সহজেই সম্ভব হতে পারে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content