বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


“কেশব-ধৃত মীন-শরীর জয় জগদীশ হরে”, কবি জয়দেবের দশাবতার স্তোত্রে মৎস্যাবতার হলেন দ্বাদশাবতারের অন্যতম। বৈদিক সাহিত্যের ‘মনুমৎস্যকথা’তে এবং মহাকাব্যের যুগে রামায়ণেও মাছের উল্লেখ আছে। রাজা বিক্রমাদিত্যের পুত্র তৃতীয় সোমেশ্বর ‘মানসোল্লাস’ অভিধান গ্রন্থে মাছ পালনের সময়ে মাছের খাবারের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন (১১২৬ – ১১৩৮)।
মাছ বিষয়ের পরম্পরার অধিকারী আমরা। সম্ভবত তাই স্বাধীনতাতোত্তর কালে প্রথম ভারত সরকার বিজ্ঞানভিত্তিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। মূলত এই রাজ্যে যাতে উন্নত চাষ পদ্ধতির উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগে মাছের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন অব্যাহত থাকে সেই উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন:

পর্ব-৩৮: মাছের ডিম বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়! মাছের ডিমের এই অবাক করা গুণের কথা জানতেন?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৯: গুরুদেবের দেওয়া গুরুদায়িত্ব

১৯৫৭সালের পর মাছ চাষের দ্রুত প্রসার শুরু হয়। পুকুরের জলের বিভিন্ন স্তরে নানা প্রকার প্রাকৃতিক খাদ্যমালার (উদ্ভিদ কণা ও প্রাণিকণা) সৃষ্টি হয়। ওই খাদ্যসম্ভারের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে ও মাছেদের খাদ্যের প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে মিশ্র চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়। এই পদ্ধতিতে ছয় বা সাত প্রজাতির পোনা চাষ করা হয় একসঙ্গে, যথা কাতলা, সিলভার কার্প, রুই, গ্রাস কার্প এবং কমন কার্প।
দেখা গিয়েছে কেবল তিন-চার প্রজাতির মাছ— কাতলা, রুই, মৃগেল, কালবোস চাষ করলে যে পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয় তার চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন সম্ভব যদি বিদেশি মাছ যেমন— সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও কমন কার্প যুক্ত করা হয়। কাতলা এবং সিলভার কার্প উপরের স্তরের থেকে, যথাক্রমে প্রাণীকণা ও উদ্ভিদকণা খেতে পছন্দ করে। রুই মাছ মাঝের স্তরের থেকে। এরা বিভিন্ন মিহি শ্যাওলা, পেরিফাইটন (জলজ উদ্ভিদের কাণ্ডে লেগে থাকা শ্যাওলা) গ্রাসকার্প নরম ঝাঁঝি, ভাসমান পানা যেমন লেখা, স্পাইরোডেলা ইত্যাদি খেয়ে পুকুরে জলকে পরিষ্কার রাখে। নিজেরাও গায়ে গতরে বাড়ে।
আরও পড়ুন:

ইংলিশ টিংলিশ: জেনে নাও Unseen Comprehension এ কীভাবে পাবে ফুল মার্কস এবং পড়বে কোন Phrasal Verbগুলো

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৩: সবুজের নেশায় অভয়ারণ্য

মৃগেল, কালবোস, কমন কার্প তলদেশ থেকে। পচনশীল জৈব যৌগ, তলদেশের মাটিতে জমে থাকা কীট পতঙ্গের ডিম, লার্ভা টিউবিফেক্স ইত্যাদি খেয়ে বড় হয়। সঙ্গে পুকুরের তলদেশ পরিচ্ছন্ন রাখে। নির্দিষ্ট অনুপাত, সংখ্যায় এবং আকারে এইসব প্রজাতির মাছ ছেড়ে মাত্র এক বছরের মধ্যে ১৫ থেকে ১৭ টন (১৫০০০ – ১৭০০০ কেজি) মাছ পাওয়া সম্ভব প্রতি হেক্টর পিছু জলাশয়ে।
আরও পড়ুন:

হৃষ্টপুষ্ট সন্তান চাই? শীতকালে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা অবশ্যই এই ৫টি খাবার ডায়েটে রাখুন?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২১: কে তুমি নিলে আমার চিরসবুজের ‘অগ্নিপরীক্ষা’

তবে অবশ্যই তাদের সম্পূরক-পরিপূরক খাবার দিতে হয়। সম্পূরক এই কারণে যে মাছের পুষ্টি প্রয়োজন মতো সম্পূর্ণভাবে পরিপূরণ করে। আর পরিপূরক এই অর্থে যে, এটি প্রাকৃতিক খাবারের বিকল্প হিসেবেও কাজ করতে পারে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content