শুক্রবার ৮ নভেম্বর, ২০২৪


আমাদের রাজ্যে বেশি বড় পোনাজাতীয় মাছের চাহিদা সারা বছর ধরেই আছে। এই পোনাজাতীয় মাছগুলো ইন্ডিয়ান মেজর কার্প নামে পরিচিত। সেগুলি যথাক্রমে, কাতলা, রুই, মৃগেল ও কালবোস। এর মধ্যে কালবোস মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘লেবিও কালবসু’। এটি এখন বাজারে কম পাওয়া যায়।
সাধারণত নদীতেই এই মাছটি থাকে। তবে পুকুরেও পাওয়া যায়। এরা পুকুরের নীচের স্তরে থাকতে পছন্দ করে। মাছটির গায়ের রং কালো। সার্থকনামা এই মাছটির কালো দেহে, মাথা ও পাখনা ছাড়া সমস্ত দেহই আঁশে ঢাকা। মাথাটি আকারে বেশ ছোট, একটু সরুও বটে। ঠোঁটের ওপর এক জোড়া শুঁড় বা বার্বেল আছে। কানকোর পাশ থেকে থেকে ল্যাজ পর্যন্ত দেহের দুই পাশে দুটি পার্শ্ব রেখা আছে।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৮৩: পাঁকাল মাছের প্রোটিনের গুণমাণ তো ভালোই, সঙ্গে ফ্যাটের পরিমাণও যৎসামান্য

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৬: সুন্দরবনের গবাদি-পশুরক্ষক মানিক পীর

এই মাছটি অন্যান্য পোনা মাছের সঙ্গে চাষ করতে অনেক চাষিই আগ্রহী নন। সম্ভবত এদের বৃদ্ধির হার অন্য পোনাগুলির তুলনায় বেশ কিছুটা কম বলেই হয়তো চাষিদের এইরকম অনিচ্ছা। বর্ষাকাল এদের প্রজনন ঋতু। জলজ উদ্ভিদের আধপচা অংশ-সহ বিভিন্ন উদ্ভিদকণা, অণুশৈবাল-সহ অনেক কিছুই ওরা খেয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৩: ঠাকুর সন্নিধানে সারদার কল্যাণব্রতে দীক্ষা

চলো যাই ঘুরে আসি, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পের পথে, পর্ব-৩: অবশেষে অভাবনীয় প্রাপ্তি ও স্বপ্নপূরণ

বলতে গেলে, এদের প্রায় সর্বভুক বলা চলে। ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ এই মাছটিতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশ ভালো। ফ্যাট বেশ কম। ফ্যাট যেটুকু আছে তা ভিটামিন ডি-তে সমৃদ্ধ। তিনশো পঁয়ষট্টি দিনই এই মাছটি খাওয়া যেতে পারে এবং তার কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। যাঁরা খেয়েছেন, তাঁরা সকলেই বলেন, এই মাছটি খুব সুস্বাদু।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-১: তিনকন্যা

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৭: তেজস্ক্রিয় স্যান্ডউইচ

ধীর গতিতে বৃদ্ধির কারণে মাছচাষিদের কাছে কিছুতেই এর গ্রহণযোগ্যতা আনা যাচ্ছে না। ক্রমশই যেন বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে এই মাছটি। নদীতে এখনও একে পাওয়া যায়। সেটিই আশার কথা। সরকারি খামারগুলিতে অন্তত এই মাছটি স্থান পাক, অন্যান্য পোনামাছের সঙ্গে। তাহলেও অন্তত ভবিষ্যতে একে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। একেবারে আমাদের দেশীয় মাছ এটি। ছোট অবস্থায় একে অ্যাকোয়ারিয়ামেও অন্য মাছের সঙ্গে লালন করা যায়। আশা করা যায়, এই সুস্বাদু মাছটির চাষের কথা, মাছচাষিরা, কিছুটা হলেও বিবেচনায় রাখবেন।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content