প্রথম মেরুদন্ডী প্রাণী মাছই প্রকৃত অর্থেই আমাদের এক সেরা জৈব সম্পদ। আমাদের রাজ্যে তো বটেই সারাদেশেই মাছের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। যদিও আমাদের জলাশয় বাড়ছে না, বাড়ছে শুধু লোক সংখ্যা, তা সত্ত্বেও মাছ কিন্তু আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে না চাহিদা মেটানোর জন্য।
পরিকল্পনামাফিক মাছ চাষ আরও বিস্তৃত হোক সর্বত্র। বৈচিত্রপূর্ণ জল সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদেরও মাছের ফলন নিশ্চিত করতে হবে আগামীদিনে। এর সঙ্গে গ্রামীণ স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের দিকটিও সমানভাবে প্রাধান্য পেয়ে চলবে। মাছের উৎপাদন কিন্তু সিংহভাগই আসে ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিদের প্রচেষ্টায়। এখন অন্য সমস্ত চাষের মতো মাছ চাষও ক্রমশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। বিশেষত মাছের খাবার জৈব ও অজৈব সার ইত্যাদির দাম ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী।
পরিকল্পনামাফিক মাছ চাষ আরও বিস্তৃত হোক সর্বত্র। বৈচিত্রপূর্ণ জল সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদেরও মাছের ফলন নিশ্চিত করতে হবে আগামীদিনে। এর সঙ্গে গ্রামীণ স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের দিকটিও সমানভাবে প্রাধান্য পেয়ে চলবে। মাছের উৎপাদন কিন্তু সিংহভাগই আসে ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিদের প্রচেষ্টায়। এখন অন্য সমস্ত চাষের মতো মাছ চাষও ক্রমশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। বিশেষত মাছের খাবার জৈব ও অজৈব সার ইত্যাদির দাম ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী।
এছাড়াও আছে জলবায়ুর আকস্মিক পরিবর্তনে প্রভাব। নানা ভাবে জল দূষণের কারণেও ঝুঁকির পরিমাণ হচ্ছে বেশি। অনেক ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফসল তোলাও এই অবস্থায় কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে চাষের ব্যয়সংকোচ করে, ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করতে হবে যাতে যতটা সম্ভব সূর্যকিরণের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য সম্ভার বাড়িয়ে তোলা। এর ফলে, যথাসম্ভব সেই সব খাবার খেয়েই মাছ বেড়ে উঠতে পারবে প্রাকৃতিকভাবে। এতে জলও নির্মল থাকবে এবং বাইরে থেকে যোগান দেওয়া খাদ্যের জন্য খরচও কম হবে।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫১: সর্বত্র নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার প্রয়োজন, তবেই বাড়বে মাছ নিয়ে সচেতনতা, উপকৃত হবে আমজনতা
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১: নাথানিয়্যাল গোবিন্দ সোরেনের গল্প
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭: ভারতের উত্তরাধিকার, কৌরব ও পাণ্ডবগণ
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৬: গরমে কক্ষনও ডিম খেতে নেই?
প্রাকৃতিক খাদ্যের মধ্যে উদ্ভিদকণা বা ফাইটোপ্লাংটন যেমন বিভিন্ন শৈবাল, সবুজ নীলাভ সবুজ ডায়াটম ইত্যাদি। সালোকসংশ্লেষণে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনও বেড়ে ওঠে, যদিও তা সক্রিয় থাকে শুধু দিনের বেলায়। উদ্ভিদকণা ছাড়াও আর আছে প্রাণীকণা, যাদের ‘জু প্লাংটন’ বলা হয়। একটি উদাহরণ হল, রোটিফার।
আমাদের দেশে মাছের মিশ্রচাষে ফলন নির্ভর করে জলে উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার সঠিক ছন্দ বজায় রাখার ওপর। জলে উদ্ভিদকণা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু মাছের তো তা অতি পছন্দের খাবার যেমন, রুই, সিলভার কার্প। এমন কি, বলতে গেলে পোনা জাতীয় প্রায় সব মাছই জীবনের শুরুতে এই প্রাকৃতিক খাদ্যকণার ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকে।
আমাদের দেশে মাছের মিশ্রচাষে ফলন নির্ভর করে জলে উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার সঠিক ছন্দ বজায় রাখার ওপর। জলে উদ্ভিদকণা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু মাছের তো তা অতি পছন্দের খাবার যেমন, রুই, সিলভার কার্প। এমন কি, বলতে গেলে পোনা জাতীয় প্রায় সব মাছই জীবনের শুরুতে এই প্রাকৃতিক খাদ্যকণার ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১: রাজার ছেলেদের রাজনীতি-কূটনীতি শেখানোর জন্যই লেখা হয়েছিল এই গ্রন্থ
দশভুজা: আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৬: রতনপুর মহামায়া দর্শন
উদ্ভিদকণা সূর্যালোকের সাহায্যে নিজেদের খাবার তৈরি করে আবার সঙ্গে সঙ্গে জলে অক্সিজেনও যোগান দিতে পারে। পুকুরে প্রাণীকণা এবং উদ্ভিদ কণার ভারসাম্য মাছের ফলন বৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এই সমস্ত কণাগুলি মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হওয়া ছাড়াও জলের মধ্যে এক অতি হালকা আচ্ছাদন তৈরি করে রাখে, যাতে আগাছা জন্মাতে পারে না। পুকুরের পরিবেশ মাছ চাষের উপযোগী থাকে। আর এদের কোনওভাবে ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পরিমিত জৈবসার বা জৈব জুস প্রয়োগে আবার সেই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর সাহায্যে পুকুরকে অনেকদিন উর্বর করে রাখা যায় মাছও ভালো থাকে।ফলে খরচে সাশ্রয় হয় ও মাছচাষীর আয় বৃদ্ধি হয় সুনিশ্চিতভাবে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৯: প্লেগে কন্যার মৃত্যু, সেই শোক অবনীন্দ্রনাথের ছবিতে পায় ভিন্নতর মাত্রা
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩২: কি ‘উপহার’ সাজিয়ে দেব
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৭: পঞ্চমের কথা মতো ড্রাম ছেড়ে অমরুতের পিঠের উপর স্যাম্পল রিদম বাজাতে শুরু করলেন ফ্রাঙ্কো!
এ বিষয়ে একদল পথিকৃৎ মাছ চাষি আছেন তারা পুকুর পাড়েই মাটি বা ফাইবার গ্লাসের পাত্রে উদ্ভিদকণা যেমন ক্লোরেলা আলাদা করে চাষ করছেন। আর পাশাপাশি রাখা ট্যাংকে চাষ করছেন প্রাণীকণা, যেমন রোটিফার। এর খাবার যোগান আসছে ক্লোরেলার ট্যাংক থেকে, আর মাঝে মাঝে পুকুরে সেই রোটিফার দিয়ে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা হচ্ছে উদ্ভিদকণা এবং প্রাণীকণার।
তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, এ ভাবে উদ্ভিদকণা এবং প্রাণীকণার ভারসাম্য পুকুরে বজায় রাখতে পারলে অন্তত পোনা মাছ চাষের ক্ষেত্রে বাইরের খাবারের যোগান প্রায় না দিলেও চলবে। অর্থাৎ চাষি প্রায় অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই পরিবেশবান্ধব মাছের ফলন পেতে পারবেন ক্রমাগতভাবে। এই প্রাকৃতিক উপায়ে মাছচাষ, মাছচাষিদের অনন্য অভিজ্ঞতার ফসল। —চলবে
ছবি: লেখক
ছবি: লেখক
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।