পুঁটি বা দেশি পুঁটি সমস্ত বাঙালি পরিবারেই একসময়ে অতি পরিচিত মাছ ছিল। বর্ষার শুরুতে ধানক্ষেত বা জলাদিঘিতে ডিম পাড়তো। পরে সংলগ্ন খাল-বিলে বড় হতো। তাই এই মাছ সহজলভ্য ছিল আমাদের কাছে।
আমাদের ছোটবেলায় পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরবার সময়ে দু’ চারটে পুঁটি মাছ পাননি এমন বোধ হয় কেউ নেই। অন্তত দশ রকমের পুঁটি আমাদের রাজ্যের জলাশয়ে নিয়মিত পাওয়া যেত বছর দশেক আগেও। এখন জলাশয়ে এদের দেখা মেলা ভার। খাল-বিলে কিছু পরিমাণ পাওয়া গেলেও, সব কটি প্রজাতি আর দেখা যায় না।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৭৪: এখন আরএএস পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত জলাধার বা ট্যাঙ্কে সহজেই আরও বেশি ঘনত্বে মাছচাষ সম্ভব
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৬: সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা পঞ্চানন্দ বা বাবাঠাকুর
রাজ্যের মৎস্য দফতরের সৌজন্যে কয়েকটি প্রজাতির প্রজনন সম্ভব হচ্ছে এখন। স্ত্রী মাছের ফোলা, গোলাকার পেট ও পুরুষ মাছের কানকোর ঢাকনার পর ছোট স্ফোটকের আবির্ভাব ও রঙের ঔজ্জ্বল্য দেখে নিয়ে কাচের অ্যাকোরিয়ামে ঝাঁঝির সান্নিধ্যে রাখা হয়। আঠালো ডিম ওই জলজ গাছগুলিতে লেগে থাকে ও দু-তিন দিনের মধ্যে ডিমের খোলস ছেড়ে শিশু মাছ বেরিয়ে আসে। কুসুম দু’ দিনের মধ্যে শেষ হলেই রোটিফার জাতীয় প্রাণীকণা কয়েকদিন এবং তারপর টিউবিফেক্স কেঁচো যোগান দিয়ে বড় করা যাচ্ছে বেশ।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৩০: রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক, আনন্দের আবহে রাজা দশরথের দুঃস্বপ্ন, কোন অশুভ সংকেত?
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৩: নহবতবাড়ির ‘এতটুকু বাসা’
মাছ চাষের প্রযুক্তিও স্থির হয়েছে—একক ও মিশ্র পদ্ধতিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার ক্যানিংয়ে অভয় পুকুর তৈরি করে এই বিপন্ন মাছকে সযত্নে লালিত করছেন একটি সংগঠন। আমাদের একান্ত প্রয়োজনীয় অনুপুষ্টির আকর, এই মাছগুলি অর্থাৎ দেশি পুঁটি ও অন্যান্য প্রজাতিগুলি। গুরুত্বপূর্ণ বাংলার এই জৈব সম্পদটি ওদের পরিবেশে বাঁচিয়ে রাখার দায়ভার আমাদের সকলের কারণ অপুষ্টি দূরীকরণে এ এক দারুণ হাতিয়ার।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।