বাণিজ্যিকভাবে ডিম প্রস্ফুটন ও মাছের ডিম পোনা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হ্যাচারি। হ্যাচারিতে থাকে একটি জলাধার, যা নিরবিচ্ছিন্ন নির্মল জলের উৎস। প্রজনন ক্ষেত্রে বা ব্রিডিং পুল ও হ্যাচিং পুল। ক্ষেত্র বা হ্যাচিং পুলে মূলত নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও উপযুক্ত পরিমাণে দ্রবীভূত অক্সিজেন বজায় রাখাই এর প্রধান কাজ।
আমাদের দেশে বিভিন্ন মডেলের হ্যাচারি দেখতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে চাইনিজ হ্যাচারি অধিক প্রচলিত। এতে বৃত্তাকারে জল নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হতে পারে। এর ব্যাস সাধারণত ৮ মিটার ও গভীরতা এক মিটার মতো হয়ে থাকে। জল প্রবাহের জন্য জল প্রবেশের নলগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয় যাতে জল বৃত্তাকারে প্রবাহিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৮: বাঁকুড়ার রামসাগরে বিড়াই নদীকে কেন্দ্র করে প্রায় তিনশটি মাছের হ্যাচারি পূর্ণমাত্রায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪৯: রাবণ-মারীচ সংবাদ এগোল কোন পথে?
বৃত্তাকার জলাধারের তলদেশে নল দিয়ে ডিম সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয় এবং ডিম সংগ্রহের আধারের সঙ্গে তার সংযোগও থাকে। ডিম প্রস্ফুটনের জলাধার দুটি অংশে যুক্ত। ভিতরের ব্যাস তিন থেকে চার মিটার। এর গভীরতা এক মিটার। জলাধারের তলদেশ ও পার্শ্বদেশের নলগুলির দ্বারা জল বৃত্তপথে প্রবাহিত হয়। প্রায় ১০ লক্ষ ডিম প্রতি ঘনমিটারে জলাধারে প্রস্ফুটন করা যায়।
ডিম প্রস্ফুটনের বৃত্তাকার জলাধারের ভিতর লোহার কক্ষটি নাইলনের পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এ ভাবে একই জলাধারের মধ্যে আরও একটি অন্তর্কক্ষ রাখা হয়। জলের গভীরতা নির্দিষ্ট রাখার জন্য জল নিঃসরণের নলের ব্যবস্থাও রাখা হয়। হ্যাচারিতে ডিমপোনা উৎপাদনের এই পদ্ধতি সারা রাজ্যে সর্বত্রই এখন দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষত মে জুন মাস থেকে শুরু করে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি চলে।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২: “যে ‘কেবল’ পালিয়ে বেড়ায়”
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৫: গায়ের জামা হাওয়ায় উড়বে বলে দেহের সঙ্গে ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখতেন
সমগ্র কাজ মহিলারা এত সুশৃংখলভাবে করতে পারেন, তা উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জের কাছে কালিয়াগঞ্জে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ বা সিএডিসি-র প্রজেক্ট অফিসে না গেলে জানতেই পারতাম না। এখানে বেশ কয়েকটি মহিলাদের দল আছে। এদের মধ্যে ভোগ্রাম স্বর্ণজয়ন্তী মহিলা দল, মাধবপুর তাজমহল মহিলা দল, কাকড়শিং লক্ষ্মী স্বর্ণজয়ন্তী মহিলা দল, দেহুচি কোড়াপাড়া প্রত্যাশা মহিলা দল, কালিয়াগঞ্জ ব্লক মহিলাসংঘর মহিলা দল, সমাজসেবী স্বনির্ভর মহিলাদল, রামপুর খাজা স্বর্ণজয়ন্তী মহিলাদল এবং পশ্চিম কালিমপুর বিশ্বকর্মা মহিলাদল প্রভৃতি দলের কথা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন:
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-১: কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়…
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৭: স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা ‘সাগরিকা’
এগুলি প্রায় সবই হেমতাবাদ গ্রামপঞ্চায়েত এবং বিষ্ণুপুর গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত। এরা এই এলাকার সমস্ত জলাশয়কে চমৎকারভাবে কাজে লাগিয়ে সারা বছর ধরে মাছ চাষের ব্যবস্থা করে আয় সুনিশ্চিত করে, এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সিএডিসি-র নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং পরিচালনায় এরা মাছের ডিমপোনা উৎপাদন, ডিম পোনা থেকে ধানি পোনা চাষ, ধানিপোনা থেকে চারাপোনা চাষ এবং চারাপোনা থেকে বড় মাছ উৎপাদনে সদর্থক ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
এদের সমগ্র কাজটিতে বিশেষ সাহায্য এবং সহযোগিতা করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের রণ সিংহ সিএডিসি প্রজেক্ট আধিকারিক ড. উত্তম লাহা। দক্ষিণবঙ্গে তিনি প্রথম মহিলা স্বনির্ভর দলগুলির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। একইভাবে দীর্ঘস্থায়ী মৎস্যপালনে উন্নত মৎস্যবীজের গুরুত্ব ও পরিকাঠামো গত বিভিন্ন নির্দেশিকা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির রূপায়ণে সাফল্য লাভ করেছেন। ছবিতে এরই কাজকর্মের কিছুটা আভাস দেওয়া গেল। হ্যাচারির গঠন কী রকম হয়, তারও একটি ছবি দেওয়া হল।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।