সম্প্রতি মাছচাষের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় ভাবনার অবকাশ আছে। সেগুলি হল— এক. আগামীদিনে মিষ্টিজলের ঘাটতির সম্ভাবনা, দুই. জলজ জৈব সম্পদ মাছের উত্তরোত্তর চাহিদাবৃদ্ধি এবং তিন. পাতাল থেকে জল তুলে সেটিকে বিভিন্ন চাষের কাজে ব্যবহারে, কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ।
অদূর ভবিষ্যতে যদি এগুলি প্রকৃতই ঘটে আহলে এটি নিশ্চিত যে, ভবিষ্যতে খাদ্যোৎপাদনে বিশেষত মাছচাষে ভূপৃষ্ঠের জল পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে এবং পরে তা বিভিন্ন ফিলটার প্রয়োগের মাধ্যমে পরিশোধন করে কাজে লাগানো যেতে পারে। পানীয় জল সংরক্ষণের কথা বিবেচনা করে এই ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করতে পারলে হয়তো আমরা ভাবি প্রজন্মের কাছে যথার্থ দায়বদ্ধতা পালন করতে পারবো। যে কোনও হ্যাচারিতে, যেখানে মাছের চারা উৎপাদনের জন্য পরিশোধিত মিষ্টি জলের ব্যবহার অনেকটাই বেশি করা করা হয়, সেখানে এই জলের অপচয় রোধে আরএএস (Recerculatory Aquaculture System) নামে পরিচিত এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৭৩: সব জলাধারকে মাছ চাষের আওতায় আনলে মাছের ফলন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো সম্ভব
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৭: আমি শুধুই উদাস, জলজ্যান্ত লাশ
আরএএস পদ্ধতি বা প্রযুক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জলাধারে বা ট্যাঙ্কে বেশি ঘনত্বে মাছচাষ সম্ভব। প্রথমবার মাছের ফলন তুলে নিয়ে ট্যাঙ্ক থেকে জল প্রথমে মেকানিকাল ফিলটার, স্যান্ড ফিল্টার, বায়োলজিকাল ফিল্টার এবং শেষে ইউভি ফিল্টারের মধ্যে প্রবাহিত করে। সেই সঙ্গে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে পরিশোধিত জল পুনরায় ফিরে আসবে মাছের ট্যাঙ্কে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৫: সুন্দরবনের বিসূচিকা রোগের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ওলাবিবি
পরিযায়ী মন, পর্ব-৭: ভিস্তা ডোমে তিস্তার দেশে
প্রথমত, সলিড ওয়েস্ট বা কঠিন বর্জ্য নেটে আটকে যায়। পরে তা তুলে ফেলে জৈব বর্জ্য পদার্থ কিছুটা অপসারণ করা হয়। অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার জল বায়োলজিকাল ফিলটারে আরও বিভিন্ন নাইট্রিফাই ব্যাকটেরিয়া জলে দ্রবীভূত মাছ নিঃসৃত অ্যামোনিয়া নাইট্রাইট প্রথমে ও পরে অপেক্ষাকৃত ভালো যৌগ নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়। এর পরে তা পাম্পের সাহায্যে মাছের ট্যাঙ্কে ফিরিয়ে আনা হয়।
এই নাইট্রেট উদ্ভিদকণার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে পরোক্ষে প্রাণীকণা জন্মাতেও কাজে লাগে। এই জল ফিরিয়ে আনার পরে অক্সিজেন প্রবাহিত হলে মাছচাষে সহায়ক হয়। এ ভাবে নানা ধরণের মাছ যেমন শিঙ্গি, মাগুর, পাবদা, ট্যাংরা, তেলাপিয়া চাষ করা সম্ভব। চাষ চলাকালীন জলের পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড মান দেখে নিশ্চিন্ত হতে পারলে জলের এই পুনরাবর্তনের মাধ্যমে মাছচাষ ভালোভাবে করা সম্ভব। আশার কথা এই যে, এখন বেশ কয়েকটি জায়গায় এই পদ্ধতিতে মাছচাষ শুরু হয়েছে।—চলবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।