![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Fish-3.jpg)
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
রোজের পুষ্টিপূরণে অল্প পরিমাণে হলেও আমাদের চাই মাছ। ইদানীং নানা প্রজাতির মাছচাষ রাজ্যের সর্বত্রই নজরে পড়ে। বিশেষ করে নিবিড় মিশ্র মাছচাষ। এর মূল কথাই হল—মাছ বাড়ে গরমকালে থাকলে ডুবন জল, সেই জলেতে খাদ্য পেলে, চারাপোনা দেয় ফল। এখন বলতে গেলে বছরের তিন চার মাস বাদ দিয়ে সারা সময়টাই গরমকাল অর্থাৎ মাছের বেড়ে ওঠার বেশ ভালো সময়।
এখন চাষের জন্য আবশ্যিক উপকরণ হল মাছের পোনা। এই মাছের পোনা সাধারণত আঙুলের সাইজে হয় বলে একে ফিঙ্গার লিঙ্গ্ বা আঙুলে পোনা বলা হয়ে থাকে। এই সাইজের মাছ পুকুরে ছাড়তে পারলে খুব তাড়াতাড়ি পাঁচ থেকে ছয়শো গ্রাম ওজন হয়ে যায়। এই বৃদ্ধির জন্যে সাকুল্যে হয়তো চার মাস সময় লাগতে পারে। আমি পাঁচ থেকে ছয়শো গ্রামের কথা উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, আমাদের এই সাইজের সমস্ত পোনা মাছগুলিতে বাড়তি ফ্যাট একদম দেখা যায় না। অর্থাৎ আমাদের জন্য নির্ভেজাল এবং নিরাপদ এক খাদ্য এটি। এই তিন চার মাসে মাছকে ৫ থেকে ৬০০ গ্রাম বাড়িয়ে নিতে হলে তার খাদ্য নিরাপত্তার দিকটাও দেখতে হবে।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/10/Fish-2.jpg)
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৭৮: যেখানে অন্য মাছচাষ লাভজনক নয়, সেখানে অনায়াসে শিঙ্গি, মাগুরের চাষ করা সম্ভব
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Sundarban-5.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২১: সুন্দরবনের সর্পদেবী মনসা
খাদ্য নিরাপত্তা বলতে—পুকুরে আপনা আপনি তৈরি বিভিন্ন শৈবাল, উদ্ভিদকণা, প্রাণীকণা, কিছু কিছু কীট পতঙ্গের লার্ভা বা শূককীট এগুলি বহাল থাকলে, বাইরে থেকে নিয়মিত খাবার যোগান দেবারও বিশেষ প্রয়োজন নেই। বরং মাঝেমাঝে কিছুটা জৈবসার চুন, এইটুকু প্রয়োগ করতে পারলেই মাছের বাড়বৃদ্ধি স্বাভাবিকই থাকবে। দু’ একটা জিনিস বিশেষ প্রয়োজন। সেটা হল, পুকুরে সারাদিন বিশেষ করে ভোরের দিকে যেন জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অভাব না হয়। তাহলেই কিন্তু মাছের বৃদ্ধি থমকে যাবে। ছোট একটি টুলু পাম্পের সাহায্যে ফোয়ারা তৈরি করে তাৎক্ষণিকভাবেও কিন্তু অক্সিজেন যোগান দেওয়া যায়।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Fish-2.jpg)
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
লক্ষ্য রাখা দরকার, পুকুরের তলদেশে যেন জৈব পদার্থের আধিক্য না হয়, জলে ভাসমান শ্যাওলার আস্তরণ যেন জলের উপরিভাগ ঢেকে না দেয়। জলে, মাঝে মাঝে পিএইচ পেপার ডুবিয়ে পিএইচ দেখে নিতে পারলে খুব ভালো হয়। পিএইচ থাকা চাই ৭.৪ বা তার সামান্য বেশি। সঠিক পিএইচ বজায় রাখতে কমবেশি একটু চুন প্রয়োগের দরকার হয়। আমরা যেমন বিভিন্ন স্বাদ এবং পুষ্টি পেতে আমাদের খাদ্যে কিছু না কিছু পরিবর্তন করে থাকি মাছের ক্ষেত্রেও কিন্তু তেমন প্রয়োজন। তাই কখনও কখনও খাবার যোগান দিতে হলে এই পরিবর্তনের কথাটা মাথায় রাখা ভালো।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Mahabharat.jpg)
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৩৫: কুরুবংশগতিরক্ষা এবং মুনি অণীমাণ্ডব্যের কাহিনিতে প্রাচীন ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/10/Samayupdates_cartoon-2023F.jpg)
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২১: ওঠো ওঠো রে! বিফলে প্রভাত বহে যায় যে!
চালের কুঁড়োর সঙ্গে যদি কেউ সর্ষেখোল দেন সেক্ষেত্রে এটি পরিবর্তন করে, তিলখোল বা বাদামখোল দিলেও একটু পরিবর্তন হয়। কখনও কখনও বস্তায় বেঁধে কিঞ্চিৎ ফুটো করে ভার্মি কম্পোস্ট দেওয়া যেতে পারে। এতে প্রাকৃতিক খাদ্যকণাগুলি খুব ভালো হয়। খাবারের খাতে খুব বেশি খরচ করবার দরকার হয় না। যদি কেউ কেবলমাত্র পোনা মাছ যেমন কাতলা, রুই, মৃগেল, বাটা, কালবোস, আমুর কার্প, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া, পেংবা, সরপুঁটি ইত্যাদি চাষ করেন তার একটি অন্যতম কারণ আমাদের রাজ্যের মাটি খুব উর্বর আর পুকুরের এই উর্বর মাটির দরুন মাছচাষি, পুকুরভর্তি প্রাকৃতিক খাদ্যকণা সহজেই পেয়ে যান। তাই নিয়মিত বাইরে থেকে যোগান দেওয়া খাবারের বিশেষ দরকার থাকে না।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/11/Fish-1.jpg)
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
খাদ্যপ্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলি প্রায়ই প্রলোভন দেখান, যে দেড় কেজি খাবার দিতে পারলেই এক এক কেজি মাছ নিশ্চিত ভাবে উৎপন্ন হবে। এখন তাদের যদি বলা যায় আচ্ছা, নতুন তৈরি করা পুকুরে কোন সার প্রয়োগ না করে এই খাবার দেড় ২ কেজি খাওয়ালে কি এক কেজি কেন ৫০০ গ্রাম মাছও কী পাওয়া যাবে? একেবারেই তা সম্ভব নয়। এখানেই প্রাকৃতিক খাবারের উপস্থিতির অত্যাশ্চর্য ম্যাজিক। জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত জৈব সার প্রয়োগ,মাছের বাড়তি ফলনকে নিশ্চিত করতে পারে। এখন মাছের ফলনের দিকে নজর দেওয়ার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, চাষের খরচ যেন অবশ্যই আমরা কমাতে পারি। তার না হলে লাভের আশা, দুরাশায় পরিণত হতে পারে। এইসব কথা সবগুলিই আমাদের পোনা মাছ সংক্রান্ত চাষের জন্য প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/10/Gosanimari-Temple.jpg)
ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৫: দেবদেউল কথা ও গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দির
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/Ramakrishna-1.jpg)
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৮: ইষ্টদর্শন
যাঁদের এই সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই তারা বিভিন্ন জেলার বা ব্লকের মৎস্য আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে একাধারে প্রশিক্ষণ, জল ও মাটির নিয়মিত পরীক্ষা, কখন কি করণীয় সেই সম্পর্কে পরামর্শ, সবটাই বিনামূল্যে পেয়ে যাবেন। এই সুযোগটি গ্রামাঞ্চলের যোগ্য তরুণ-তরুণীরা সদ্ব্যবহার করতে পারেন। এতে তাদের আয়ের সুযোগ হবেই এবং নিশ্চিতভাবে বাড়বে মাছের উৎপাদন। স্বল্প জলাশয় থেকেই আমাদের সৃষ্টি করতে হবে, নিরাপদ খাদ্য, উদ্বৃত্ত শ্রমদিবস এবং সেই সঙ্গে বাড়তি আয়। তা,না হলে, আমরা আমাদের মাছ উৎপাদনের সেরা শিরোপাটি হয়তো বেশি দিন ধরে রাখতে পারবো না।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।