সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


চিতলের চারা।

অ্যাকোয়াপোনিক্স নামে এক মিশ্র শব্দচয়ন সাতের দশকে সৃষ্টি হয়েছিল, যা ইদানীং আবার শোনা যাচ্ছে নতুনভাবে। জলের পুণর্ব্যবহারের মাধ্যমে সমন্বিত প্রযুক্তিতে মাছ ও সাধারণ কিছু শাক- সব্জির ফলন সারা বছর সম্ভব হতে পারে। এই প্রযুক্তির প্রয়োগে খাদ্য উৎপাদনের দুটি স্তম্ভ হল— অ্যাকোয়াকালচার ও হাইড্রোপনিক্স। এদের একত্রীকরণে সৃষ্ট দুটি ইউনিটের সম্মিলিত পরিকাঠামোর প্রথমটি হল একটি কাঁচের বা ফাইবার প্লাস্টিকে তৈরি অ্যাকোয়ারিয়াম। যেখানে মাছ থাকবে স্বাভাবিকভাবে। বাইরে থেকে যোগান দেওয়া হবে অক্সিজেন ও সেমাই কিংবা দানা আকারের তৈরি খাবার। এই জলে ক্রমশ মিশে থাকা মাছের দেহনিঃসৃত অ্যামোনিয়া অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখা বায়ো ফিল্টার বা নুড়ি পাথরে জন্মানো বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যেমন নাইট্রোসোমোনাস ও নাইট্রোব্র্যাক্টরের ক্রিয়ার সাহায্যে নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়ে মাঠের জলজ পরিবেশকে কলুষ মুক্ত রাখবে এবং এই নাইট্রেট নাইট্রোজেনকে কাজে লাগিয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ জল যা ফসফরাস, পটাশিয়াম ও অন্যান্য অনুপুষ্টি সমৃদ্ধ। দ্বিতীয় ইউনিটের রাখা ট্যাঙ্ক জলে বিভিন্ন উদ্ভিদ তাদের শিকড়ের সাহায্যে এদের কাজে লাগিয়ে বেড়ে উঠবে ক্রমশ।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখা রঙিন বা খাদ্য উপযোগী মাছ যেমন পাবদা, শিঙ্গি, মাগুর, পাঁকাল, বাটা ইত্যাদি মাছ খাদ্যের ফসফরাস প্রায় সবটুকুই নিশ্চিত করে দিয়ে থাকে। কারণ, তা আত্তীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক ফাইটেস তাদের থাকে না। জলে জমে থাকা নাইট্রেট ও ফসফরাসের প্রাচুর্য থেকে যায়। এই পুষ্টিসমৃদ্ধ জল কিঞ্চিত ফিল্টারের মাধ্যমে পুণর্ব্যবহার করা যায় সাধারণ কিছু শাক-সব্জির ফলনে।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৬: প্রাণী জগতের অন্যতম দায়িত্বশীল বাবা হল ড্রাগন ফিশ

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২: ‘আও টুইস্ট করে’ গানের জন্য পঞ্চমের সঙ্গে শচীনকর্তার বাক্যালাপও বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন

স্বাদে-আহ্লাদে: কুলের আচারের নাম শুনলে জিভে জল আসে? রইল সহজ রেসিপি

বাষ্পীভবনের কারণে জলের পরিমাণ একটু কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে সপ্তাহান্তে একটু জল যোগ করে দিলেই মাটির অনুপস্থিতিতে শাক-সব্জি এবং মাছের ফলন জৈব পদ্ধতিতে হতে পারে। উল্লেখিত ছোট আকারের মাছ দিয়ে এটা শুরু করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শাক-সব্জি হতে পারে, যেমন— পালং, লেটুস, পুদিনা, ধনেপাতা, কলমি এমনকি গাজরও হতে পারে বছরভর।
অ্যাকোয়াপোনিক্স প্রযুক্তির প্রয়োগে চমৎকার মাছ এবং গাছ বেড়ে উঠতে পারে তা আমি কলকাতা শহরে প্রথম দেখি বেলগাছিয়াতে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে। এখানে গবেষকরা সফলতার সঙ্গে দেখেছেন জলের পিএইচ এবং দ্রবীভূত অক্সিজেন নিয়মিত একটু দেখে নিতে পারলে কোনও সমস্যাই হয় না। পিএইচ সাধারণত ৭.২ থেকে ৭.৮ এর মধ্যে থাকলে ভালো হয়।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৭: আপন হতে আপন জন ‘রাইকমল’

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-২: রামকথার পটভূমি এবং মহাভারতে কথকের কথাসূত্র

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১১: সমস্ত বাধা সরে গেলে প্রকৃতিও তখন রাস্তা ছেড়ে দেয়

মিউনিসিপ্যালিটি বা কর্পোরেশনের জলে ক্লোরিন বা ক্লোরামিন থাকায় সরাসরি সেই জল না দিয়ে দু’ দিন সেটিকে খোলা হাওয়ায় রেখে তারপরে ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত, ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়াকলাপে পিএইচ সামান্য কমতে পারে। তাই পরিমাণ মতো চুনের জল প্রয়োগে পিএইচ পুনরুদ্ধার সম্ভব। মাছ, গাছ, ব্যাকটেরিয়া, জল, বাতাসের সমন্বয়ে গড়ে তোলা যেতে পারে এরকম একটি সিস্টেম, যা ছোটদের উৎসাহিত করবে আগামী দিনে পুষ্টিসমৃদ্ধ জৈব উৎপাদনের ফলন পেতে, জলের অপচয় রোধ করতে এবং সর্বোপরি নিরাপদ খাদ্য সুনিশ্চিত করতে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content