এই মরশুমে পোনা মাছের প্রণোদিত প্রজননের সময় শেষের দিকে, এখনও যাঁরা পুকুরে হাপা টাঙিয়ে ব্রিডিং করাবেন, তাঁরা খেয়াল রাখবেন পুকুরটি যেন একটু বড় মাপের হয়। এতে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা বেশি হতে পারে এবং ডিমপোনার বাঁচার হার কিছুটা হলেও বেশি হবে। তলদেশ বেলেমাটি-যুক্ত হলে ভালো হয়। গভীরতা চার-পাঁচ ফুট যেন থাকে। জলের রঙে যেন সবুজের আধিক্য না থাকে। এতে মেঘাচ্ছন্ন দিনে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যেতে পারে।
জলে আরও দেখে নেওয়া দরকার, সাইক্লপস জাতীয় অনুপ্রাণীকণার যেন আধিক্য না থাকে। ওদের মাথার অগ্রভাগে থাকা সূঁচালো শুঁড়ে ডিমের নরম খোলস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্রিডিংয়ের জন্য এমন মাছ নির্বাচন করতে হয় যেন তাতে চর্বি কম থাকে। যিনি দূর থেকে ব্রুডার নিয়ে আসবেন, সেক্ষেত্রে ব্রিডিংয়ের আগে কম করে একটি সম্পূর্ণ দিন সেটিকে বিশ্রামে রাখুন। যদি পিটুইটারি নির্যাস ইনজেকশন দিতে হয় তবে তা আধ ঘণ্টা আগে তৈরি করতে পারলে ঠিক হয়।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৭১: ছোট মাছকে অবাঞ্ছিত না ভেবে প্রতিপালন করলে বিকল্প আয়ের দিশা পাওয়া যাবে
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৬: তোমার গানের এই ময়ুরমহলে
প্রথম ইনজেকশনের পরে কিছুটা দ্রবণ থেকে যায় তা যেন দ্বিতীয়বারে ব্যবহার না করা হয়। গ্ল্যান্ড নির্যাস তৈরির সময়ে ‘অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল’-এ রাখা গ্ল্যান্ড শিশি থেকে বের করে ফিলটার বা ব্লটিং পেপারের পর রেখে অ্যালকোহল শুকিয়ে গেলে তবেই ব্যবহার করা গেলে ভালো হয়। স্ত্রী মাছকে ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে ইনজেকশনের সময়ে দেখা দরকার যেন একই দিকে দু’বার ইনজেকশন না দেওয়া হয় এবং সূচটি যেন কোনোভা পার্শ্বরেখাকে বিদ্ধ না করে।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-২৭: মহর্ষি ভৃগু এবং অগ্নির শাপমুক্তি—কাহিনিতে তাত্ত্বিক দিকের অনুসন্ধান
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৬: গলা সাধলেই লতাকণ্ঠী?
ইনার হাপায় যেন ডিম খুব বেশি না থাকে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এতে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা ডিমপোনার বেঁচে থাকার জন্যে ক্ষতিকর। আবহাওয়া ও ব্রুডারের স্বাস্থ্য-দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড জলের তাপমাত্রা বেশ অনুকূল ব্রিডিংয়ে জন্য।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।