শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


দেশি সুস্বাদু মাছগুলির মধ্যে সরপুঁটি মাছ অন্যতম। চাহাদাও যথেষ্ট। তা সত্ত্বেও কেন যে মাছটি অবলুপ্তির পথে তা বোঝা দুষ্কর। ছোট, বড় যে কোনও জলাশয়ে সরপুঁটি থাকতে পারে, চাষও করা যায়। পাঁচ থেকে ছ-মাসে ১৫০ গ্রাম ওজন বাড়তে পারে। অর্থাৎ চাষ করতে চাইলে বছরে দু’ মাস ফসল তোলা সম্ভব।
খোলামেলা পুকুর যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যকিরণ পড়ে সেখানে এই মাছটির চাষ খুব ভালোভাবে হতে পারে। এই মাছটির চাষের পুকুরের তলদেশে পাঁক না থাকাই শ্রেয়। এই মাছটি যদিও জলের উপরিতলেই থাকতে ভালোবাসে। সরপুঁটি মাছের, রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কোনও কোনও মাছচাষি মনে করেন, জলের ওপরের দিকে থাকার দরুণ পাখির উপদ্রবের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে পুকুরের প্রান্ত বরাবর (৬ ইঞ্চি) মতো ব্যবধান রেখে দড়ি টাঙিয়ে দিতে পারলে নিতান্তই কম খরচে পাখির উপদ্রব এড়ানো যেতে পারে।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৮৪: এখনই উদ্যোগ না নিলে ক্রমশ হারিয়ে যাবে কম ফ্যাট ও প্রোটিনে ভরপুর কালবোস মাছ

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৬: স্বপ্নে আমার মনে হল

তমলুকে অবস্থিত সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদে প্রকল্পে সরপুঁটি মাছের চারা উৎপাদন এবং হ্যাচলিং উৎপাদনের দিকটিতে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। সেখানকার ফার্মের পুকুরে ব্রুডার প্রতিপালন করা হয়; সংক্ষিপ্ত পরিসরে ১৫ দিনের ডিমপোনা (যাকে প্রায় ধানী পোনাও বলা যেতে পারে) ডেসিমাল প্রতি ২৫০টি মজুদ করে পরিপূরক খাবার হিসেবে চিংড়ির স্টার্টার ফুড (বা প্রাথমিক খাদ্য) দিয়ে ১২০ দিন অবধি সফলভাবে চাষ করা হয়েছে, ড. উত্তম লাহার তত্ত্বাবধানে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর

দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-২: একলা চলো রে…

এ সব সত্ত্বেও এই মাছটির চাষের বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। মৎস্য দপ্তরের কয়েকটি ফার্মে অবশ্য এদের প্রতিপালন চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। যেভাবেই হোক, আমাদের রাজ্যে থাই সরপুঁটি মাছের অনুপ্রবেশ হয়েছে। এদের চাষের আওতায় এনেছেন বেশ কিছু মাছচাষি কারণ তাঁরা মনে করেন এই তাইল্যান্ডের সরপুঁটির বাড়বৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি এবং জল থেকে তোলার পরে অনেকক্ষণ সতেজ থাকে যেটি দেশি সরপুঁটির ক্ষেত্রে হয় না। দেশি সরপুঁটিতে পটাসিয়াম, ক্যালশিয়াম ও আয়রন থাকে। প্রোটিনের গুণমানও ভালো ও সহজপাচ্যও বটে। দীর্ঘশৃঙ্খল ফ্যাটি অ্যাসিডেও বেশ সমৃদ্ধ। এত স্বাদ ও পুষ্টিগুণের এহেন মাছটিকে সংরক্ষণের বিশেষ প্রয়োজন আছে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content