বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা প্রায় হাজার খানেক। এদের মধ্যে মিষ্টি জলের মাছই আছে একশোর বেশি। মিষ্টি জলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে এদের আবাসস্থলের কিছুটা পছন্দেরও কিছুটা তারতম্য থেকে যায়। যেমন কেউ বেশি স্বচ্ছ জলে থাকতে পছন্দ করে, আবার কারও অস্বচ্ছ জল ভালো লাগে। এত যে মাছের বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্য — আমাদের মাছের বাজারে গেলে তা কিন্তু ঠিক বোঝা যায় না। সেখানে আধিপত্য করে সাকুল্যে আট দশটি মাত্র।
রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, তেলাপিয়া, পাঙ্গাসকে রোজই দেখা যায়। যাদের দেখা যায় না বললেই চলে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল— বাচা, বেলে, ন্যাদস, খরশুলা খয়রা, বোগো শিঙি, কুচে, কালবোস ইত্যাদি। এটা ঠিক সর্বত্রই মাছের পছন্দের তারতম্য থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কয়েকটি মাছ ছাড়া মৎস্যজীবিরা বাকিগুলির চাষে খুব আগ্রহান্বিত হচ্ছেন না। ফলে বাজারে লভ্য মাছের প্রজাতির, ওই বাছাই কয়েকটি মাত্রই থেকে যাচ্ছে।
এই মাছগুলি চাষ করতে গিয়ে মহুয়া খোল প্রয়োগ করার ফলে যাও অল্পবিস্তর তলানিতে পড়ে থাকতে পারতো কয়েকটি সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তো কীটবিতারক রাসায়নিক যৌগের অপপ্রযোগতো আছেই। চিন্তা হয়, বর্তমান প্রজন্মের খাদ্যাভাসেও যদি বড়লোকদের অনুকরণ চলে তারা কি আর খয়রা ন্যাদস বোগো ইত্যাদি মাছ কখনও খাবেন?
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৪: বাংলার শুঁটকি মাছের চাহিদা সর্বত্র, এখনকার বিশেষভাবে প্রস্তুত শুঁটকি অনেক বেশি নিরাপদ ও পুষ্টিগুণে ভরা

হোমিওপ্যাথি: আঁচিল নিয়ে অস্বস্তি? চিন্তা নেই, হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে সহজ সমাধান

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৬: সংসার সুখের হয় ‘চাঁপাডাঙার বৌ’-র গুণে

ইংলিশ টিংলিশ: জানেন কি ‘night owl’ বা ‘early bird’ কাকে বলে? কিংবা তিনতলাকে কেন ‘second floor’ বলে?

মৎস্যজীবিরাও ফলত নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন এই মিষ্টি জলের মাছগুলি চাষে। অথচ আমাদের পরম্পরাগত কিছু ধারনা যেমন অসুস্থ ও বৃদ্ধ মানুষদের পথ্য হিসেবে শিঙি মাগুর জাতীয় জিয়ল মাছ পুষ্টি নিরিখে ও পাচ্যতার দিক থেকেও খুব উপকারী। কিন্তু সে মাছগুলি না থাকলে এই দিকটিতে নজর দেওয়া যাবে কী করে? সচরাচর আমরা পুকুরে বোয়াল, শাল ইত্যাদির চাষ করি না এদের শিকারী স্বভাবের জন্য ও আক্রমণাত্মক স্বভাবের কারণে।
আমরা চাই আমাদের পাতে মাছের বৈচিত্র্য থাকুক আবার মৎস্যজীবিরাও রুই, কাতলার সঙ্গে সঙ্গে এদের চাষের আওতায় আনুন। এদের চাষ ফিরিয়ে আনা গেলে আশা করতে পারি এই প্রজন্ম উৎসাহিত হবে অন্তত এই মাছ বৈচিত্রের দিকটিতে।
আরও পড়ুন:

পাহাড়ের উপর ছবির মতো সুন্দর শ্রবণবেলাগোলা— চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের এক অজানা অধ্যায়

বড়দিনের ডিম ছাড়া স্পেশাল ফ্রুট কেক এ বার বাড়িতেই! কী ভাবে বানাবেন? রইল সহজ রেসিপি

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৮: অযোধ্যাবাসীরাও কি সঙ্গী বনযাত্রায়?

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-২৬: নসীরাম ও সোনা — দুটি চরিত্রই গিরিশচন্দ্রের অপূর্ব সৃষ্টি

এত অনুপুষ্টি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, লাইসিন, মিথাওনিন, আরজিনিন, ট্রিপ্টোফ্যানে ভরপুর সঙ্গে দীর্ঘশৃঙ্খল ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ এরকম সেরা খাবার আর কোথায় পাওয়া যাবে? যদি না ওদের টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন অনুভব করি এবং মাছগুলির নিশ্চিহ্ন হওয়া প্রতিরোধ করতে পারি। তাহলে হয়তো প্রজন্মান্তরে এর চাহিদা সংক্রমিত হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে ভেবে একটি দেখতে পারি কি?
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।

Skip to content