সাধারণত যে ধরনের চিংড়ি দেখা যায় সেগুলি হল —
কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
চিংড়ির মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলি অন্য কোনও মাছের মধ্যে দেখা যায় না। চিংড়ি খোলস ছাড়ে। এদের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে এই খোলস ছাড়ার মধ্য দিয়েই। এরা যখন খুব ছোট হয় অর্থাৎ শিশু অবস্থাকে বলা হয় ‘লার্ভা’। আর তরুণ অবস্থাকে বলা হয় ‘জুভেনাইল’। শিশু অবস্থা থেকে তরুণ অবস্থায় যাওয়ার জন্য এই যে খোলস ত্যাগ এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘মোল্টিং’। চিংড়ি দু’ মাসের মধ্যে ১০-১২টি বড় খোলস ছাড়ে। প্রথম দিকে ৫-১০ দিন অন্তর অন্তর এবং তরুণ অবস্থায় ২০-৪০ দিন অন্তর অন্তর। চার বছর বয়স পর্যন্ত এদের খোলস ত্যাগ বা বৃদ্ধি ঘটে। খোলস ত্যাগ করার পর এরা খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। চলাফেরা করার শক্তি থাকে না, এরা খেতেও পারে না।
গলদা চিংড়ি হল মিষ্টি জলের প্রাণী। আবার বাগদা চিংড়ি, ভেনামি চিংড়ি নোনা জলের প্রাণী। বড় অদ্ভুত ব্যাপার হল, চিংড়ি যদিও মিষ্টি জলের হয় তবুও এদের জীবন শুরু হয় নোনা জল থেকেই। আর যে চিংড়ি নোনা জলের তাদের তো নোনা জল অত্যাবশ্যক।
এই চিংড়ি আমাদের রাজ্যে বেশ ভালোই চাষ হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় এই চিংড়ি চাষের সংখ্যা বেশি। কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগরদ্বীপ প্রভৃতি জায়গায় ভালো চাষ হয়। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রচুর পরিমাণ চিংড়ি বাইরে রপ্তানি করা হয়। ফলে বলাবাহুল্য যে, চিংড়ি বিদেশি মুদ্রা আনতে সাহায্য করছে। আর এই মাছের চাষ লাভজনকও। কারণ, এর দাম ভালো পাওয়া যায়। সারাবছর তো এই মাছ পাওয়া যায়ই, কিন্তু মার্চ মাসের শুরু থেকে জুন-জুলাই পর্যন্ত গঙ্গানদী-সহ বিভিন্ন নদীতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
এই মাছের চাষ তো হয়, কিন্তু এর বীজ বা মীন সংগ্রহ করতে হয় প্রকৃতি থেকে। বাগদা চিংড়ির মীন সম্পূর্ণটাই প্রকৃতিজাত। নদী-সমুদ্র প্রভৃতি স্থান থেকে মীন সংগ্রহ করা হয়। গলদা চিংড়ি কৃত্রিম ভাবে প্রজনন ঘটানো সম্ভব হলেও বেশিরভাগটিই প্রকৃতিজাত।
প্রকৃতি থেকে বীজ বা মীন সংগ্রহ করতে গিয়ে আমারা বৃহৎ ক্ষতিরও সম্মুখীন হচ্ছি। যখন চিংড়ির মীন সংগ্রহ করা হচ্ছে তার সঙ্গে অন্যান্য মাছের মীনও হাতে আসছে। চিংড়ির মীনগুলি তুলে নেওয়া হলেও অন্য মাছের মীন ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেগুলি মারা যাচ্ছে। এইরূপ ক্ষতি এখনও হচ্ছে। আমরা এই ধরনের ক্ষতিকে রুখতে পারছি না।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।