বিগ হেড কার্প
আমাদের জলজ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাছ। নদীমাতৃক দেশে সভ্যতার অগ্রগতিতে যার অবদান অনস্বীকার্য। বিদেশ থেকে বহু মাছ আমাদের আমাদের দেশে এসেছে, তার মধ্যে কিছু মাছকে আমরা বলবো ‘ওয়েলকাম ফিশ’। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, কমন কার্প। এই ধরনের মাছগুলিকে এদেশে আনা বিশেষ প্রয়োজন ছিল। এরা এদেশের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিতেও সক্ষম হয়েছে। এদের আনার প্রয়োজনটি ছিল এই কারণেই যে, জলের উপরের স্তরে এক ধরনের উদ্ভিদকণা থাকে যেগুলি আমাদের দেশীয় কোনও মাছের খাদ্য হয় না। কিন্তু তা বিশেষ ভাবে খাদ্য হয় সিলভার কার্প মাছের। পুকুরের মধ্যে থাকা শ্যাওলা, পড়ে থাকা পাতা খেয়ে নিয়ে পুকুরকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে গ্রাস কার্প মাছ। আবার একেবারে তলদেশের মাছ হল কমন কার্প। কার্যত এরা তলদেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ উপযোগী হয়। তাই আমাদের দেশীয় মাছের অপর্যাপ্ত খাবার খেয়ে এরা যদি বৃদ্ধি পায় তা খুবই হিতকর।
আবার এমন কিছু কিছু মাছ আছে যেগুলিকে আমরা কোনওভাবেই চাই না। কিন্তু সেগুলি আমাদের দেশে কোনওভাবে এসে গিয়ে বেশ সমস্যার সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষ সেই সমস্যাটি বুঝতে পারছে না। কিন্তু সমস্যাটির ব্যাপকতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের দেশে এমন কিছু মাছ আছে, যে মাছগুলির উপর ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি মাছ হল —’বিগ হেড কার্প’ এবং ‘হাইব্রিড মাগুর’।
বিগ হেড কার্প
এই মাছটি মূলত চীন দেশের মাছ। জলের উপরের স্তরে থাকে এই মাছ। এর প্রধান খাদ্য প্রাণীকণা। পরিমাণে অধিক খাবার এরা খায়। তাই এদের বৃদ্ধিও হয় দ্রুত। এতটাই দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে যে ছয় মাসের মধ্যে বেশ বড় আকার ধারণ করে। কাজেই এরা দ্রুত ডিম দেয় এবং বাচ্চা উৎপাদনের দিক থেকেও এগিয়ে। সমস্যার বিষয় হল, জলের উপরের স্তরে আমাদের অতি প্রিয় কাতলা মাছ থাকে। সুতরাং কাতলার সঙ্গে যদি এই মাছ থাকে তাহলে কাতলার খাদ্য খেয়ে নেবে বিগ হেড কার্প। শুধু তাই নয়, সংখ্যাতেও অল্প সময়ের মধ্যে কাতলাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে। ফলে বিপন্ন হয়ে যাবে কাতলার অস্তিত্ব, যা কখনওই আমাদের কাছে কাম্য নয়। তাই কাতলার অস্তিত্ব যাতে বিপন্ন না হয় সেই জন্যই ‘বিগ হেড কার্প-কে সরানো উচিত।
হাইব্রিড মাগুর
‘হাইব্রিড মাগুর
এই মাছটি আফ্রিকার নীলনদের মাছ। মাছটি খুবই আগ্রাসী এবং মাংসাশী প্রাণী। তাই এই মাছ খুবই বিপদজনক। পুকুরের বিভিন্ন মাছকে এরা খেয়ে ফেলে। ছোট অবস্থায় এদের দেশি মাগুরের মতো দেখতে হলেও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের চেহেরা অনেকাংশে বদলে যায়। আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ দেশি মাগুরের সঙ্গে এই আফ্রিকান মাগুরের ব্রিডিং করিয়ে দিচ্ছেন। যার ফলে দেশি মাগুর সংখ্যায় ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে।
এই দুটি মাছের উপর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বহু মানুষ তা শুনছেন না। অবাধে তার চাষ ও বিক্রয় চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই সরকারি নজরদারি ও সচেতন ভারতবাসীর নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ আমরা যদি এ বিষয়ে সজাগ না হই, পদক্ষেপ না করি এ ধরনের কাজে, তাহলে আমরা দেশীয় পছন্দের মাছগুলিকে শীঘ্রই হারাবো।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।