ছবি প্রতীকী
‘পুরা কথাই ভবিষ্যতের ভবিতব্য’ নামক পূর্ববর্তী শিরোনামের বিবৃতিতে উল্লিখিত হয়েছিল যে মৎস্য প্রতিপালনে প্রাচীনকালের মানুষেরা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান আধুনিকতার সাক্ষ্য বহন করে প্রভূত উন্নতি সাধন করলেও উন্নতির নেপথ্যে যে স্তম্ভ তা হল প্রাচীন মানুষদের মৎস্য প্রতিপালনের সুপন্থা।
সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ খাদ্যের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েছিল। পশুপাখি থেকে শুরু করে জীবজন্তু, জলজ প্রাণী থেকে শুরু করে গাছের ফলমূল সমস্ত কিছুই ছিল তাঁদের মূল খাদ্য। এই খাদ্যগুলি লাভ করা মোটেও সহজ ছিল না। তাই তাঁদের প্রয়োগ করতে হয়েছিল সুকৌশল বা খুঁজে নিতে হয়েছিল শিকারের সুপন্থা।
আমাদের সমাজ জীবনে রামায়ণ মহাকাব্যের প্রভাব কমবেশি সকলেই লক্ষ করি। জনজীবন থেকে শুরু করে সাহিত্য জীবন সর্বত্রই এই মহাকাব্যের সুপ্রভাব স্পষ্ট। সাত কাণ্ড বিশিষ্ট এই মহাকাব্য অধ্যয়ন করলে আমরা পেতে পারি জীবনের মূল মন্ত্র। এই মহাকাব্যের নির্যাস আকণ্ঠ ভরে পান করলে আমরা লাভ করতে পারি মোক্ষ মার্গ।
কিন্তু জীবনের মূল মন্ত্র বা মোক্ষ প্রাপ্তির উপায় ব্যতীতও রামায়ণ মহাকাব্যে দৃষ্ট হয় ভিন্ন কিছু শিক্ষা। এই মহাকাব্যের তৃতীয় কাণ্ডে অর্থাৎ অরণ্যকাণ্ড অধ্যয়ন করলে দেখা যায় মৎস্য বৃত্তান্ত। মৎস্য প্রতিপালনের পদ্ধতিসহ কোন ধরনের খাদ্য কোন মৎস্যের প্রয়োজন, মৎস্যের আবাসন কীরকম হওয়া উচিত সে সম্পর্কিত বিস্তৃত বিবরণ। এই কাণ্ডের একটি বিশেষ জায়গায় আছে রুই ও নোলমিন (বাণ) মাছের বিবরণ। রামায়ণে উল্লিখিত পম্পা সরোবর থেকে মত্স্য শিকার করে মৎস্যের পাখনা, আঁশ, কাঁটা বাদ দিয়ে আগুনে শেঁকে রান্না করার বিবরণ। ফলত রান্না সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রণালী সুপ্রাচীন কাল থেকেই তার ঐতিহ্য বহন করে চলছে তা বলাই যায়।
রাক্ষসরাজ রাবণ যখন সীতাদেবীকে হরণ করে নিয়ে সমুদ্র অতিক্রম করছেন তখন সমুদ্র হিংস্র মৎস্যে পরিপূর্ণ ছিল তার বিবরণও পাওয়া যায় এই গ্রন্থে। সেই ক্ষণে বারণকে বাঁধা দিয়ে জটায়ু বলেছিলেন, ‘জলে মাছ যেমন বঁড়শি থেকে টোপ গিললে মুক্তি পায় না, ঠিক তেমনই তুমি কালের পাশে বদ্ধ হয়েছ! তাই তোমারও মুক্তি নেই।’
রামায়ণের অযোধ্যা কাণ্ডের উপর চোখ রাখলে দেখা যাবে সেখানে চার ধরনের খাদ্যের কথা বলা হয়েছে। ভোক্ষ, ভোজ্য, চোষ্যয ও লেচ্ছ। এছাড়াও অমরকোষের টীকায় পাওয়া যায় শোল মাছের বিবরণ।
বর্তমান সময়ের উপর দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাই মৎস্য প্রতিপালন বা মৎস্যচাষ কীভাবে জীবন ও জীবিকার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তাই সুনিপুণভাবে এর প্রতিপালন করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের প্রাচীন মহাকাব্য সেই কর্তব্য বোধের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।
সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ খাদ্যের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েছিল। পশুপাখি থেকে শুরু করে জীবজন্তু, জলজ প্রাণী থেকে শুরু করে গাছের ফলমূল সমস্ত কিছুই ছিল তাঁদের মূল খাদ্য। এই খাদ্যগুলি লাভ করা মোটেও সহজ ছিল না। তাই তাঁদের প্রয়োগ করতে হয়েছিল সুকৌশল বা খুঁজে নিতে হয়েছিল শিকারের সুপন্থা।
আমাদের সমাজ জীবনে রামায়ণ মহাকাব্যের প্রভাব কমবেশি সকলেই লক্ষ করি। জনজীবন থেকে শুরু করে সাহিত্য জীবন সর্বত্রই এই মহাকাব্যের সুপ্রভাব স্পষ্ট। সাত কাণ্ড বিশিষ্ট এই মহাকাব্য অধ্যয়ন করলে আমরা পেতে পারি জীবনের মূল মন্ত্র। এই মহাকাব্যের নির্যাস আকণ্ঠ ভরে পান করলে আমরা লাভ করতে পারি মোক্ষ মার্গ।
কিন্তু জীবনের মূল মন্ত্র বা মোক্ষ প্রাপ্তির উপায় ব্যতীতও রামায়ণ মহাকাব্যে দৃষ্ট হয় ভিন্ন কিছু শিক্ষা। এই মহাকাব্যের তৃতীয় কাণ্ডে অর্থাৎ অরণ্যকাণ্ড অধ্যয়ন করলে দেখা যায় মৎস্য বৃত্তান্ত। মৎস্য প্রতিপালনের পদ্ধতিসহ কোন ধরনের খাদ্য কোন মৎস্যের প্রয়োজন, মৎস্যের আবাসন কীরকম হওয়া উচিত সে সম্পর্কিত বিস্তৃত বিবরণ। এই কাণ্ডের একটি বিশেষ জায়গায় আছে রুই ও নোলমিন (বাণ) মাছের বিবরণ। রামায়ণে উল্লিখিত পম্পা সরোবর থেকে মত্স্য শিকার করে মৎস্যের পাখনা, আঁশ, কাঁটা বাদ দিয়ে আগুনে শেঁকে রান্না করার বিবরণ। ফলত রান্না সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রণালী সুপ্রাচীন কাল থেকেই তার ঐতিহ্য বহন করে চলছে তা বলাই যায়।
রাক্ষসরাজ রাবণ যখন সীতাদেবীকে হরণ করে নিয়ে সমুদ্র অতিক্রম করছেন তখন সমুদ্র হিংস্র মৎস্যে পরিপূর্ণ ছিল তার বিবরণও পাওয়া যায় এই গ্রন্থে। সেই ক্ষণে বারণকে বাঁধা দিয়ে জটায়ু বলেছিলেন, ‘জলে মাছ যেমন বঁড়শি থেকে টোপ গিললে মুক্তি পায় না, ঠিক তেমনই তুমি কালের পাশে বদ্ধ হয়েছ! তাই তোমারও মুক্তি নেই।’
রামায়ণের অযোধ্যা কাণ্ডের উপর চোখ রাখলে দেখা যাবে সেখানে চার ধরনের খাদ্যের কথা বলা হয়েছে। ভোক্ষ, ভোজ্য, চোষ্যয ও লেচ্ছ। এছাড়াও অমরকোষের টীকায় পাওয়া যায় শোল মাছের বিবরণ।
বর্তমান সময়ের উপর দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাই মৎস্য প্রতিপালন বা মৎস্যচাষ কীভাবে জীবন ও জীবিকার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তাই সুনিপুণভাবে এর প্রতিপালন করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের প্রাচীন মহাকাব্য সেই কর্তব্য বোধের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।