বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


পানাজির মাছের বাজার

শুভ্রতা শুদ্ধতার কথা বলে৷ আমাদের প্রকৃতি হল সেই শুদ্ধতার পরিচায়ক৷ হিমালয় বা পর্বতের পাদদেশে হোক কিংবা হোক নদীবক্ষের তীরদেশ আপন সৌন্দর্য সেথা গহন তমসায় বিচরণকারী জোনাকির মতোই শোভমান৷ সেই সৌন্দর্য শুভ্র, শুদ্ধ ও কাঙ্ক্ষিত৷

প্রকৃতির আমাদের জলজ জৈব সম্পদগুলির মধ্যে মাছের গুরুত্ব সর্বত্রই অপরিসীম এবং তা সর্বকালীনও বটে৷ আর মাছ শুধু যে পুষ্টি সুরক্ষার দিক থেকেই কেবলমাত্র অগ্রণী তা নয়, বরং আবহমানকাল থেকে বহু মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে মাছ, তার চাষ আনুষঙ্গিক শিল্প৷

প্রকৃতির মাছ চাষের পরে মাছগুলি বিক্রয় করা হয় যে সমস্ত কেন্দ্রে অর্থাৎ গ্রামগঞ্জের এবং শহরের মাছের বাজারে, সেই সমস্ত কেন্দ্রগুলির পরিচ্ছন্নতা ও উন্নতিকল্পের বিশেষ তাগিদ অনুভব করি৷ কলকাতা-সহ তার আশপাশের অঞ্চলগুলিতে যেখানে মাছের বাজার বসে সেখানে গেলে দেখা যায় অপরিচ্ছন্নতা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ৷ আমাদের রসনার তৃপ্তির জন্য যে সমস্ত উপকরণ আছে এবং সেই উপকরণগুলি বিক্রীত হয় যে সব ক্ষেত্রে (বাজারে) সেই ক্ষেত্রগুলি অনেকাংশে স্বচ্ছতা থাকলেও মাছের বাজারের স্বচ্ছতা সেরূপভাবে দৃষ্ট হয় না৷

প্রকৃতির স্বচ্ছতা না থাকার কারণে মাছের বাজারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না৷ যে সমস্ত মাছ বিক্রেতা আমাদের রসনায় তৃপ্তি দান করে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করেন এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে; তাঁরা বিভিন্ন রোগের শিকার হন৷ পর্যাপ্ত জলের অভাবে দীর্ঘদিনের পড়ে থাকা জলকে তাঁরা ব্যবহার করেন৷ ফলে তাঁরা চামড়া ঘটিত নানা সমস্যায় ভোগেন৷ পৌরসভা, এনজিও বা কোনও সংস্থা থেকে মাছের এই বাজারগুলির উন্নয়ন বা উন্নতিকল্পের অভাব পরিলক্ষিত হয় দারুণভাবে৷

উত্তর বিহারের আরারিয়া-র একটি মাছের বাজার

প্রকৃতির মাছের বাজারগুলিতে পর্যাপ্ত জল সরবরাহ থেকে শুরু করে, বরফ রাখার জায়গাগুলির উন্নতি সাধন করা একান্ত আবশ্যক৷ বর্তমানে চতুর্দিকে চোখ মিললে দেখা যায় উন্নতির নবজাগরণ৷ সেই নবজাগরণের উপর দাঁড়িয়ে মাছের বাজারগুলি কেন এভাবে বঞ্চিত হচ্ছে, অতীতে যেমন ছিল বর্তমানেও সেই অবস্থান কেন তা বড্ড ভাবায়!

প্রকৃতির পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানকার মাছের বাজারগুলির শৌখিনতা শপিং মল বা শপিং প্লাজার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়৷ তাই সেখানেপরিচ্ছন্নতা সদা দৃশ্যমান৷ সেইরূপ শৌখিনতা বা পরিচ্ছন্নতা আমাদের এখানকার বাজারগুলিতে করা সম্ভব না হলেও পর্যাপ্ত জলের সরবরাহ থেকে শুরু করে আংশিক কিছু উপকরণের জোগান করা নিশ্চয় সম্ভব৷ যা কিছুটা হলেও পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দান করবে৷

প্রকৃতির আপন শুভ্রতা ও শুদ্ধতায় মিলে মিশে এক হয়ে যাক মানবের দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিমণ্ডলগুলি৷ সেটাই আমাদের পরম কাঙ্ক্ষিত চাওয়া৷

* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।
 

অনুলিখন: সুমন্ত দাস


Skip to content